অনিয়ম দুর্নীতি ধরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ স্কোয়াড হচ্ছে

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনৈতিক চর্চা, অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরতে বিশেষ স্কোয়াড গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও পেশাদার ৫০ কর্মকর্তা নিয়ে এর যাত্রা শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই স্কোয়াড রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারী সব ধরনের বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব শাখা বিনা নোটিসে পরিদর্শন করে অনিয়ম বা দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন ব্যবস্থাপনাকে অবহিত করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, খুব শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে। বিশেষ পারদর্শিতা অর্জনে স্কোয়াডের সদস্যদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, “ব্যাংকগুলো দিন দিন অনৈতিক ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বাড়ছে অনিয়ম-দুর্নীতি। প্রায় সব ব্যাংকেই কৌশলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা না মেনে চলার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারী সব ব্যাংকই মুনাফার জন্য ঝুঁকিভিত্তিক ব্যাংকিং করার দিকে চলে যাচ্ছে। আর এ জন্য তারা নতুন নতুন কৌশল বের করছে।”
সূত্র মতে, এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান তদারকি পদ্ধতি দিয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পেরে উঠছে না নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির আওতায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে রাখতে ও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে যে অফসাইট (সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির কার্যালয়ে না গিয়ে নথিপত্রের মাধ্যমে যাচাই) তদারকি করছে তা এখন আর বাংলাদেশে কার্যকর হচ্ছে না। আর তাই অনৈতিক ব্যাংকিং, অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে ব্যাংকগুলোর অনসাইট (সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কার্যালয়ে স্বয়ং উপস্থিত হয়ে) তদারকি এখন জরুরী হয়ে উঠেছে। আর সে লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হচ্ছে বিশেষ এই পরিদর্শন দল বা স্কোয়াড।
জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে অফসাইট তদারকিতে। যেখানে মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পাঠানো কাগজপত্র থেকে এর অনিয়ম, দুর্নীতি অথবা অব্যবস্থাপনা ধরা হয়। এর বাইরে একটি নির্দিষ্টি মেয়াদ পরপর বিশেষ কিছু শাখা পরিদর্শন করে একইভাবে কাগজপত্র নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন করা হয়ে থাকে।
কিন্তু ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির এই দুর্বলতা নিয়ে নানাভাবে অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। একইভাবে অনিয়ম বাড়ছে বেসরকারী অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও। ফলে সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাত ঝুঁকির দিকে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে সাধারণ গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকি।
এসব পরস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার তদারকি প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ (অনসাইট) বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া শুরু“ করেছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিষয়টি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অগ্রাধিকার হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে শূর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ তদারকিতে যেতে চাইছে। এজন্য একটি বিশেষ স্কোয়াড গঠন করা হবে শীঘ্রই। এর কাজ হবে সারাদেশের ব্যাংকগুলোর আট হাজার শাখা পরিদর্শন করে অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখা। প্রাথমিকভাবে ৫০ সদস্য নিয়ে এটি শুরু হবে। এজন্য একজন পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (সিবিএসপি) অধীনে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি স্কোয়াড পরিচালনা এবং কর্মীদের পারদর্শী করে তুলবেন। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি, তারা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবে।”

No comments

Powered by Blogger.