দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ॥ তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের পক্ষে- ০ প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি বাতিলের পক্ষে- ০ দুই বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখার মত দিয়েছেন, একজন সংসদে পাঠানোর জন্য বলেছেন - ০ রায় মোট ৩৪২ পৃষ্ঠার by বিকাশ দত্ত ও আরাফাত মুন্না
অবশেষে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করার দীর্ঘ ৪শ’ ৯৫ দিন পর আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে রায় প্রদানকারী সাত বিচারপতি বৈঠক করেন। বৈঠকে তাঁরা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন।
রাত সোয়া ৮টা এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাত বিচারপতি দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সূত্র নিশ্চিত করেছে রাত দশটা-সাড়ে দশটার দিকেই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে। বিষয়টি বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক নিশ্চিত করেছেন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, রায় ঘোষণাকালের প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা), বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মোঃ ইমান আলী রায়ে স্বাক্ষর করবেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শাখাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সূত্র মতে, রায়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের প্রতি একমত হয়েছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনসহ তিন বিচারপতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন দুই বিচারপতি অন্যদিকে আরেক বিচারপতি বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সূত্র জানায়, এ রায়ের ৩৪২ পৃষ্ঠার মূল রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তাঁর রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ বলা হয়। পরবর্তী দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে অভিমত দেয়া হয়। তাঁর সঙ্গে একমত হয়েছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, আপীল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি এসকে সিনহা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
সূত্র আরও জানায়, রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞার ১৭৬ পৃষ্ঠা লেখা মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তবে বিচারপতি মোঃ ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি ১৫০ পৃষ্ঠার রায় লিখেছেন বলে জানা গেছে। গত বছর ১০ মে সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দিয়ে কিছু অভিমত সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে। পরে সংসদে বিল এনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেটি বাতিল করে।
২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সভাপতিত্বে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ৪০ মিনিটে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল মঞ্জুর করে এ ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরবর্তী দশম ও একাদশ সংসদের দুটি নির্বাচন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বাদ দিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সংসদের স্বাধীনতা আছে। পরবর্তী নির্বাচন কিভাবে হবে এ বিষয়টি জাতীয় সংসদকেই নিতে হবে।
আপীল বিভাগ রায়ে বলেছে, আপীল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ এই নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইনÑ সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপীল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। একই সঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে দায়ের করা লিভ টু আপীলটিও খারিজ করা হলো। প্রধান বিচারপতি মাত্র দুই মিনিটে ১৬৮ শব্দের এই শর্ট অর্ডারে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন। সূত্র আরও জানায়, বাংলা ও ইংরেজীতে মিলিয়ে এ রায় লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন রায় বাংলা ও ইংরেজীর মিশ্রণে লেখা হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি
ও রিট দায়ের ॥ ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। ষষ্ঠ সংসদে গৃহীত এ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি সম্মতি জানান ১৯৯৬ সালের ২৮ মার্চ। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীমকোর্টের এ্যাডভোকেট এম সলিমউল্লাহসহ কয়েকজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। আবেদনে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বা পদ্ধতি গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী। এটা সংবিধানেরও পরিপন্থী। কারণ গণতন্ত্র ও সংবিধানের চেতনা হচ্ছে সব সময় নির্বাচিত সংসদ বহাল থাকবে। নির্বাচিত সরকারই দেশ পরিচালনা করবে। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। পরে রুলের শুনানি গ্রহণ করে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে।
হাইকোর্টের রায়ে যা বলা হয়েছিল ॥ ২০০৪ সালে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে রিটের চূড়ান্ত শুনানি হয়। বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীন, বিচারপতি মোঃ আওলাদ আলী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে ওই শুনানি হয়। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীন মূল রায় লেখেন। অন্য দুই বিচারপতিও তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করে রায় লেখেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ও সংবিধান সম্মত। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনা ৪৮ এবং ৫৬ অনুচ্ছেদে কোন সংশোধন আনা হয়নি। এ কারণে কোন গণভোটের প্রয়োজন ছিল না। এই সংশোধনী সংবিধানের কোন মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করেনি বিশেষ করে গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের অনুমতি দেয় হাইকোর্ট। সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোন মামলায় হাইকোর্ট যদি মনে করে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত রয়েছে তাহলে সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এতে আর লিভ টু আপীল দায়ের করতে হয় না। সরাসরি আপীল দায়ের হয়ে যায়।
রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদনকারীরা ॥ হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে যান আবেদনকারীরা। মূল রিট আবেদনকারী এম সলিমউল্লাহ মারা যাওয়ায় এবং অন্য আবেদনকারী এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস বাবু হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় আপীলটি মোঃ আব্দুল মান্নান খান বনাম বাংলাদেশ সরকার নামে কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। আপীল বিভাগে গত বছরের ১ মার্চ আপীলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৬ এপ্রিল। এরপর বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপীল বিভাগ। এরপর গত বছরের ১০ মে রায়ের জন্য কার্যতালিকায় রেখে রায় প্রদান করেন আপীল বিভাগ।
এ্যামিকাস কিউরি ॥ ‘আপীল বিভাগে ১ মার্চ আপীলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৬ এপ্রিল। আপীলের শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ড. এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসির বক্তব্য শুনেছে। রিট আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিলÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের প্রজাতান্ত্রিক চরিত্রকে নষ্ট করেছে। তারা এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণার আবেদন করেন। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৯৬ সালে এলেও ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে অনীহা সত্ত্বেও তত্ত্বাধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরী অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বর্তমানে সংবিধান সংশোধনের যে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করার সুপারিশ আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৩ মাস মেয়াদে নির্বাচন করতে না পারলে আগের সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান যোগ করতে।
শুনানিতে আদালত এ মামলায় ৮ জন এ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে পাঁচজন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। এরা হলেনÑ ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহামুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। অপর এ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন। এছাড়া এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন।
শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, তাঁর মতে এ ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পটভূমি তুলে ধরে আদালতে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এড়াতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এসেছিল। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম শুনানিতে বলেছিলেন ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এ ব্যবস্থা আনা হয়েছে। ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’
টিএইচ খান শুনানিতে বলেছিলেন, দেশের মানুষের প্রয়োজনে আপদে-বিপদে সংবিধান পরিবর্তন করা যেতে পারে। আর এ রকম একটি প্রয়োজনের সময়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকলে দেশে প্রজাতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয় না। এ জন্যই বাংলাদেশে আরও ৭০ বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু থাকা দরকার। ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার চেয়ে ভাল কোন ব্যবস্থা হতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক বলার কোন সুযোগ নেই। একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেই সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য আরও ভাল বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এ পদ্ধতি বহাল রাখতে হবে।
সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুুদুল ইসলাম শুনানিতে বলেছিলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবশ্যক। এ ব্যবস্থা বাতিল হলে দেশে সামরিক শাসন আসবে। তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানে একটা নির্বাচন হয়েছিল। জুলফিকার আলী ভুট্টো ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। পরে ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিয়াউল হক ক্ষমতা দখল করে। সিনিয়র আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছেন। তিনি আপীল বিভাগে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ১৯৯৬ সালে জনগণের ইচ্ছায় সংবিধানে এ ব্যবস্থা সংয়োজন হলেও তা হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শুনানিতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।
সূত্র মতে, রায়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের প্রতি একমত হয়েছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনসহ তিন বিচারপতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন দুই বিচারপতি অন্যদিকে আরেক বিচারপতি বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সূত্র জানায়, এ রায়ের ৩৪২ পৃষ্ঠার মূল রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তাঁর রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ বলা হয়। পরবর্তী দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে অভিমত দেয়া হয়। তাঁর সঙ্গে একমত হয়েছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, আপীল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি এসকে সিনহা ও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
সূত্র আরও জানায়, রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞার ১৭৬ পৃষ্ঠা লেখা মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তবে বিচারপতি মোঃ ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি ১৫০ পৃষ্ঠার রায় লিখেছেন বলে জানা গেছে। গত বছর ১০ মে সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দিয়ে কিছু অভিমত সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে। পরে সংসদে বিল এনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেটি বাতিল করে।
২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সভাপতিত্বে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ৪০ মিনিটে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল মঞ্জুর করে এ ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরবর্তী দশম ও একাদশ সংসদের দুটি নির্বাচন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বাদ দিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সংসদের স্বাধীনতা আছে। পরবর্তী নির্বাচন কিভাবে হবে এ বিষয়টি জাতীয় সংসদকেই নিতে হবে।
আপীল বিভাগ রায়ে বলেছে, আপীল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ এই নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইনÑ সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপীল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। একই সঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে দায়ের করা লিভ টু আপীলটিও খারিজ করা হলো। প্রধান বিচারপতি মাত্র দুই মিনিটে ১৬৮ শব্দের এই শর্ট অর্ডারে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন। সূত্র আরও জানায়, বাংলা ও ইংরেজীতে মিলিয়ে এ রায় লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন রায় বাংলা ও ইংরেজীর মিশ্রণে লেখা হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি
ও রিট দায়ের ॥ ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। ষষ্ঠ সংসদে গৃহীত এ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি সম্মতি জানান ১৯৯৬ সালের ২৮ মার্চ। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীমকোর্টের এ্যাডভোকেট এম সলিমউল্লাহসহ কয়েকজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। আবেদনে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বা পদ্ধতি গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী। এটা সংবিধানেরও পরিপন্থী। কারণ গণতন্ত্র ও সংবিধানের চেতনা হচ্ছে সব সময় নির্বাচিত সংসদ বহাল থাকবে। নির্বাচিত সরকারই দেশ পরিচালনা করবে। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। পরে রুলের শুনানি গ্রহণ করে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে।
হাইকোর্টের রায়ে যা বলা হয়েছিল ॥ ২০০৪ সালে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে রিটের চূড়ান্ত শুনানি হয়। বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীন, বিচারপতি মোঃ আওলাদ আলী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে ওই শুনানি হয়। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। বিচারপতি মোঃ জয়নুল আবেদীন মূল রায় লেখেন। অন্য দুই বিচারপতিও তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করে রায় লেখেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ও সংবিধান সম্মত। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনা ৪৮ এবং ৫৬ অনুচ্ছেদে কোন সংশোধন আনা হয়নি। এ কারণে কোন গণভোটের প্রয়োজন ছিল না। এই সংশোধনী সংবিধানের কোন মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করেনি বিশেষ করে গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের অনুমতি দেয় হাইকোর্ট। সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোন মামলায় হাইকোর্ট যদি মনে করে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত রয়েছে তাহলে সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এতে আর লিভ টু আপীল দায়ের করতে হয় না। সরাসরি আপীল দায়ের হয়ে যায়।
রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদনকারীরা ॥ হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে যান আবেদনকারীরা। মূল রিট আবেদনকারী এম সলিমউল্লাহ মারা যাওয়ায় এবং অন্য আবেদনকারী এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস বাবু হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় আপীলটি মোঃ আব্দুল মান্নান খান বনাম বাংলাদেশ সরকার নামে কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। আপীল বিভাগে গত বছরের ১ মার্চ আপীলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৬ এপ্রিল। এরপর বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপীল বিভাগ। এরপর গত বছরের ১০ মে রায়ের জন্য কার্যতালিকায় রেখে রায় প্রদান করেন আপীল বিভাগ।
এ্যামিকাস কিউরি ॥ ‘আপীল বিভাগে ১ মার্চ আপীলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৬ এপ্রিল। আপীলের শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ড. এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসির বক্তব্য শুনেছে। রিট আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিলÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের প্রজাতান্ত্রিক চরিত্রকে নষ্ট করেছে। তারা এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণার আবেদন করেন। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৯৬ সালে এলেও ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে অনীহা সত্ত্বেও তত্ত্বাধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরী অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বর্তমানে সংবিধান সংশোধনের যে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করার সুপারিশ আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৩ মাস মেয়াদে নির্বাচন করতে না পারলে আগের সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান যোগ করতে।
শুনানিতে আদালত এ মামলায় ৮ জন এ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে পাঁচজন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। এরা হলেনÑ ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহামুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। অপর এ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন। এছাড়া এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন।
শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, তাঁর মতে এ ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পটভূমি তুলে ধরে আদালতে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এড়াতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এসেছিল। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম শুনানিতে বলেছিলেন ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এ ব্যবস্থা আনা হয়েছে। ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’
টিএইচ খান শুনানিতে বলেছিলেন, দেশের মানুষের প্রয়োজনে আপদে-বিপদে সংবিধান পরিবর্তন করা যেতে পারে। আর এ রকম একটি প্রয়োজনের সময়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকলে দেশে প্রজাতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয় না। এ জন্যই বাংলাদেশে আরও ৭০ বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু থাকা দরকার। ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার চেয়ে ভাল কোন ব্যবস্থা হতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক বলার কোন সুযোগ নেই। একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেই সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য আরও ভাল বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এ পদ্ধতি বহাল রাখতে হবে।
সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুুদুল ইসলাম শুনানিতে বলেছিলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবশ্যক। এ ব্যবস্থা বাতিল হলে দেশে সামরিক শাসন আসবে। তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানে একটা নির্বাচন হয়েছিল। জুলফিকার আলী ভুট্টো ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। পরে ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিয়াউল হক ক্ষমতা দখল করে। সিনিয়র আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছেন। তিনি আপীল বিভাগে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ১৯৯৬ সালে জনগণের ইচ্ছায় সংবিধানে এ ব্যবস্থা সংয়োজন হলেও তা হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শুনানিতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।
No comments