প্রসূতিসেবা ও পুষ্টি-পরিস্থিতির উন্নতি দরকার- শিশুমৃত্যু কমানোয় সাফল্য
বাংলাদেশে বেশির ভাগ শিশুই জন্মে মৃত্যুর ঝুঁকিকে সঙ্গী করে। আশার কথা যে, বাংলাদেশ সেই ঝুঁকি অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনতে পেরেছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন, গত ২০ বছরে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। এর থেকে আনন্দের সংবাদ আর কী হতে পারে।
একই সঙ্গে এর থেকে দুঃখেরও আর কী হতে পারে? কেননা, এই সাফল্য ১৯৯০ সালের তুলনায়। কিন্তু উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এখনো অজস্র শিশু জন্মের সময় অথবা জন্মের প্রথম বছরই পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে বিদায় নিচ্ছে!
জন্মের দুই দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব! এটুকু মামুলি সহযোগিতার অভাবে প্রতিবছর অজস্র শিশু জীবনের আস্বাদন না পেতে পেতেই মৃত্যুর কঠিন স্বাদ পাচ্ছে। এই স্বাস্থ্যসেবা জটিল কোনো বিষয়ও নয়। স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ কিংবা গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও জেলা শহরের হাসপাতালেই বেশির ভাগ নবজাতকের অসুস্থতার প্রতিকার সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও লোকবলের ঘাটতির চেয়ে বেশি ঘাটতি মনোযোগ ও সুপরিকল্পনার। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা গতিশীল না থাকাও একটা কারণ। এর জন্য প্রয়োজন স্থানীয় সরকার পরিষদের সঙ্গে প্রসূতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি এক করে দেওয়া। গ্রামীণ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যারা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে, তাদের থেকেও এ ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী সহজেই প্রশিক্ষিত করা সম্ভব।
খেয়াল করার বিষয়, তুলনায় শহুরে বস্তিতে শিশুস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা কম। তাদের প্রতি সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর আগ্রহ অনেক কম। দেশে সার্বিকভাবে অনাহার কমলেও পুষ্টিহীনতার মাত্রা অনেক বেড়েছে। প্রসূতিমাতার পুষ্টিহীনতা ও গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতি করতে পারলে শিশুমৃত্যুর হার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকার ও সেবা সংস্থাগুলোকে এখন এদিকেই নজর দিতে হবে।
No comments