শতবর্ষী আগ্রাবাদ ঢেবা by মিঠুন চৌধুরী

আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা তখন ছিল ধানখেত। প্রধান সড়কটি (বর্তমান শেখ মুজিব সড়ক) ছিল কাঁচা। ১৯০০ সালে সেই ধানখেতের জমি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৯১৩ সালে বন্দরের সম্প্রসারণকাজের সময় কাটা হয় ধানখেতের মাটি। সৃষ্টি হয় বিশাল গর্ত। সেই গর্তের পাড় বেঁধে তৈরি হয় ঢেবা।


একসময় এই ঢেবার পানিই সরবরাহ করা হতো নগরের বিভিন্ন স্থানে। এখনো আগের চেহারাতেই আছে সেই আগ্রাবাদ ঢেবা।
গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, দীঘির উত্তর পাড়ের বিভিন্ন অংশে প্রায় ৫০ জন মানুষ গোসল করছেন। শিশুরা লাফিয়ে পড়ছে ঢেবার জলে। ভেসে বেড়াচ্ছে রাজহাঁস। দক্ষিণ পাড়ে ছোট-ছোট বাঁশের মাচা। ওই সব বাঁশের মাচায় বসে কাপড়চোপড় আর গৃহস্থালির সামগ্রী ধোয়ার কাজ চলছে। পশ্চিম পাড়ে একটি নৌকা বাঁধা।
উত্তর পাড়ে গোসল করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। ঢেবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় এক শ বছর আগে এই ঢেবা কাটা হয়। এলাকার সবাই ঢেবার পানি নানা কাজে ব্যবহার করেন। বিকেলের দিকে ঢেবার পাড়ে বেড়াতে আসেন অনেকে। ঢেবার চারপাশ ঘিরে চলে জমজমাট আড্ডা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি রিকশাচালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ঢেবায় নিয়মিত গোসল করেন। রিকশাচালক মিন্নাত আলী বলেন, ‘আগ্রাবাদ এলাকার কোথাও গোসল করার ব্যবস্থা নেই। দুপুরে আশপাশে থাকলে এখানে চলে আসি। ঢেবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করি। খুব ভালো লাগে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢেবায় চলে মাছের চাষ। বছরে কয়েকবার সিটভাড়া দিয়ে চলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। তখন ঢেবার চারপাশের চিত্র বদলে যায়। শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূমি কর্মকর্তা আবদুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, আগ্রাবাদ ঢেবার মোট জমির পরিমাণ প্রায় ২৭ একর। এটি এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৯০০ ফুট দীর্ঘ। ঢেবার প্রস্থ ৭০০ ফুট। ১৯১৩ সালে বন্দরের সম্প্রসারণকাজের সময় মাটি কাটার ফলে ঢেবার সৃষ্টি হয়। একসময় এই ঢেবার পানি নগরের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো।
ইতিহাস গবেষক আবদুল হক চৌধুরী রচিত বন্দর শহর চট্টগ্রাম-এ ঢেবার বিষয়ে উল্লেখ আছে, ‘আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার দক্ষিণ পাশে আগ্রাবাদ ঢেবা অবস্থিত। ঢেবার পানিপূর্ণ এলাকার পরিমাণ ২৭ একর। এটা প্রাকৃতিক ঢেবা নয়। অন্যত্র মাটি নেওয়ার ফলে এই ঢেবার সৃষ্টি।’
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপসহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার জন্য এই ঢেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়। নগরে জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমছে। কোনো কারণে এই ঢেবা বর্তমান অবস্থায় না থাকলে পুরো এলাকা ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। তবে এই ঢেবা এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে। যেকোনো মূল্যে এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.