শ্রীলঙ্কা বলেই বাংলাদেশের বিশ্বাসটা আরো বেশি by নোমান মোহাম্মদ
বিশ্বকাপ ফুটবল হয় প্রতি চার বছর অন্তর। ওয়ানডের বিশ্বকাপ ক্রিকেট একবার পাঁচ, আরেকবার তিন বছরের ব্যবধানে হওয়ার ব্যতিক্রম বাদ দিলে চার বছর পরপরই হয়ে আসছে। সেখানে টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ? কাল শ্রীলঙ্কায় পর্দা উঠছে যে আসরের, পাঁচ বছরে সেটি চতুর্থবারের মতো।
আর কোনো বৈশ্বিক খেলার বিশ্বকাপ যে এত ঘন ঘন হয় না, তা একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়।
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরুর পর ২০০৯ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়ে এবার শ্রীলঙ্কায়। টোয়েন্টি টোয়েন্টির রীতিমতো রমরমা যুগের প্রতিফলক। সেটি একদিকে যেমন ক্রিকেটের এই ফরম্যাটের জনপ্রিয়তার ঘোষণা দেয়, ঠিক তেমনি খেলাটিকে অর্থের কাছে বিকিয়ে দেওয়ার সাক্ষ্যও কি দেয় না? কুড়ি-বিশের এই ক্ষুদ্রতম সংস্করণের ক্রিকেট থেকে আর যা-ই হোক, মহান ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবেন না। মুড়মুড়ে চিপসের মতো উপভোগ্য ক্রিকেট গলে যাবে একটুতেই, চার-ছক্কার মারে বিনোদিত হবে দর্শক, মুহূর্তের উন্মাদনা শেষে সব শূন্য হতেও সময় লাগবে না। ব্যস, এইটুকুনই!
অবশ্য এসব তাত্তি্বক তর্কে যাওয়ার উপায় নেই বাংলাদেশের। টোয়েন্টি টোয়েন্টিকে বাস্তবতা মেনে এগোতে হবে তাদের আইসিসির তাল-ছন্দে! এগোচ্ছেও। প্রস্তুতির কথা যদি বলেন, তাহলে এবারের বিশ্বকাপের মতো হয়নি আর কখনো। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই কি না অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দেন যে, এই ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সুযোগটা সবচেয়ে বেশি। অতএব, এবারের গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের মতো মহাশক্তিধর পরাশক্তিরা থাকলেই বা কি!
এশিয়া কাপের পর থেকেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রস্তুতি। শুরুতে জিম্বাবুয়েতে ত্রিদেশীয় সিরিজ, এরপর আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস সফর করে ত্রিনিদাদে। প্রতিপক্ষ যেমনই হোক, এসব সফরে রিচার্ড পাইবাসের শিষ্যরা ম্যাচ খেলেছেন প্রচুর। শ্রীলঙ্কায় এসেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরো একটি ম্যাচ খেলা সারা। আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি। কাল বৃষ্টির তোড়ে দল অনুশীলন করতে পারেনি ঠিকমতো। প্রেমাদাসায় গিয়ে একটু ফুটবল খেলে গা গরম করতেই ঝুপ করে নেমে এলো বৃষ্টিকণার দল। শ্রমের আগেই তাই বিশ্রাম। অবশ্য হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ জিমনেশিয়ামে কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আর সেটিই হয়ে রইল আজকের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রস্তুতি।
এমনিতে এই বিশ্বকাপ ঘিরে আত্মবিশ্বাসের ডানায় সওয়ার বাংলাদেশ দল। সেখানে প্রস্তুতিটাই বড় কথা। খেলাটি শ্রীলঙ্কার মাটিতে হচ্ছে বলেও কি কিছুটা নয়? এই দ্বীপেই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ, পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর তাই উৎসে ফেরা। আর এখানে এসে শেকড়ের সন্ধান করছেন স্কোয়াডের অনেকেই।
মোহাম্মদ আশরাফুল যেমন। ২০০১ সালে ১৭ বছরের এই তরুণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্ব। ব্যাট দিয়ে লেখা ওই কবিতাই ছিল ক্রিকেটের ভুবনে আশরাফুলের ক্ল্যাপস্টিক। সেই শ্রীলঙ্কায় ফিরে তিনি তো খানিক স্মৃতিমেদুর হবেনই। আবদুর রাজ্জাকও তাই। ২০০৪ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চড়েছিল এই স্পিনারের। সেটি এই শ্রীলঙ্কাতেই। হংকংয়ের বিপক্ষে ৯-২-১৭-৩, এমন বোলিং করে অভিষেকেই দলের সফলতম বোলার। 'পৃথিবীর অনেক দেশেই তো গেলাম। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় আসলে যে ভালোটা লাগে, তা আর কোথাও লাগে না। মনে হয় যেন গ্রামের বাড়িতে ফিরেছি'- বলছিলেন রাজ্জাক।
মাহমুদ উল্লাহর অভিষেকও এখানে। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কাকে ১৯৬ রানে অলআউট করায় মাহমুদের অফ স্পিনের ভূমিকা ছিল। ৫ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। এরপর ৭ নম্বরে নেমে ৫৪ বলে ৩৬ করে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন জয়ের স্বপ্নটা। ৩৪ বলে যখন ৪৬ রান দরকার, তখন মাহমুদের আউটে নিভে যায় আশার দেউটি। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাঁর। জহুরুলের ওয়ানডে অভিষেকও এখানে, ২০১০ সালের এশিয়া কাপে। ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ বলে অপরাজিত ১১ করেছিলেন তিনি। মাস তিনেক আগে টেস্ট আভিষেকে শূন্যের তুলনায় তো ভালো!
মাশরাফি বিন মুর্তজার অভিষেক শ্রীলঙ্কায় না। শুধু তাই নয়, এখানে কোনো সুখস্মৃতিও নেই তাঁর। 'কেন জানি শ্রীলঙ্কায় আমি কখনো ভালো করতে পারি না। মেজাজ তাই খারাপ হয়ে যায়'- বলছিলেন তিনি। লঙ্কাদ্বীপে তিন টেস্টে মোটে তিন উইকেট তাঁর, গড় ৯১.৩৩, স্ট্রাইক রেট ১৪৬। ওয়ানডেতে ৪ ম্যাচে মাত্র চার উইকেট। এর মধ্যে শেষ দুই ওয়ানডেতে ৮ ওভারে ৭০ এবং ৫ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। মাশরাফির মেজাজ খারাপ হওয়ার মতোই পারফরম্যান্স। এবার অবশ্য চিত্রনাট্য অন্যরকমভাবে লেখার আশা মাশরাফির, 'আমি এখন বেশ ছন্দে আছি। আশা করছি, শ্রীলঙ্কা থেকে এবার ভালো কিছু নিয়েই ফিরতে পারব। দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তোলাতে পারলে তো কথাই নেই।'
ওই একটি স্বপ্নেই বুঁদ হয়ে আছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় রাউন্ড! অধিনায়ক মুশফিকের কথামতো বাংলাদেশ নিজেদের সুযোগটা নিতে পারলেই হয়!
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরুর পর ২০০৯ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়ে এবার শ্রীলঙ্কায়। টোয়েন্টি টোয়েন্টির রীতিমতো রমরমা যুগের প্রতিফলক। সেটি একদিকে যেমন ক্রিকেটের এই ফরম্যাটের জনপ্রিয়তার ঘোষণা দেয়, ঠিক তেমনি খেলাটিকে অর্থের কাছে বিকিয়ে দেওয়ার সাক্ষ্যও কি দেয় না? কুড়ি-বিশের এই ক্ষুদ্রতম সংস্করণের ক্রিকেট থেকে আর যা-ই হোক, মহান ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবেন না। মুড়মুড়ে চিপসের মতো উপভোগ্য ক্রিকেট গলে যাবে একটুতেই, চার-ছক্কার মারে বিনোদিত হবে দর্শক, মুহূর্তের উন্মাদনা শেষে সব শূন্য হতেও সময় লাগবে না। ব্যস, এইটুকুনই!
অবশ্য এসব তাত্তি্বক তর্কে যাওয়ার উপায় নেই বাংলাদেশের। টোয়েন্টি টোয়েন্টিকে বাস্তবতা মেনে এগোতে হবে তাদের আইসিসির তাল-ছন্দে! এগোচ্ছেও। প্রস্তুতির কথা যদি বলেন, তাহলে এবারের বিশ্বকাপের মতো হয়নি আর কখনো। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই কি না অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দেন যে, এই ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সুযোগটা সবচেয়ে বেশি। অতএব, এবারের গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের মতো মহাশক্তিধর পরাশক্তিরা থাকলেই বা কি!
এশিয়া কাপের পর থেকেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রস্তুতি। শুরুতে জিম্বাবুয়েতে ত্রিদেশীয় সিরিজ, এরপর আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস সফর করে ত্রিনিদাদে। প্রতিপক্ষ যেমনই হোক, এসব সফরে রিচার্ড পাইবাসের শিষ্যরা ম্যাচ খেলেছেন প্রচুর। শ্রীলঙ্কায় এসেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরো একটি ম্যাচ খেলা সারা। আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি। কাল বৃষ্টির তোড়ে দল অনুশীলন করতে পারেনি ঠিকমতো। প্রেমাদাসায় গিয়ে একটু ফুটবল খেলে গা গরম করতেই ঝুপ করে নেমে এলো বৃষ্টিকণার দল। শ্রমের আগেই তাই বিশ্রাম। অবশ্য হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ জিমনেশিয়ামে কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আর সেটিই হয়ে রইল আজকের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রস্তুতি।
এমনিতে এই বিশ্বকাপ ঘিরে আত্মবিশ্বাসের ডানায় সওয়ার বাংলাদেশ দল। সেখানে প্রস্তুতিটাই বড় কথা। খেলাটি শ্রীলঙ্কার মাটিতে হচ্ছে বলেও কি কিছুটা নয়? এই দ্বীপেই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ, পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর তাই উৎসে ফেরা। আর এখানে এসে শেকড়ের সন্ধান করছেন স্কোয়াডের অনেকেই।
মোহাম্মদ আশরাফুল যেমন। ২০০১ সালে ১৭ বছরের এই তরুণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্ব। ব্যাট দিয়ে লেখা ওই কবিতাই ছিল ক্রিকেটের ভুবনে আশরাফুলের ক্ল্যাপস্টিক। সেই শ্রীলঙ্কায় ফিরে তিনি তো খানিক স্মৃতিমেদুর হবেনই। আবদুর রাজ্জাকও তাই। ২০০৪ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চড়েছিল এই স্পিনারের। সেটি এই শ্রীলঙ্কাতেই। হংকংয়ের বিপক্ষে ৯-২-১৭-৩, এমন বোলিং করে অভিষেকেই দলের সফলতম বোলার। 'পৃথিবীর অনেক দেশেই তো গেলাম। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় আসলে যে ভালোটা লাগে, তা আর কোথাও লাগে না। মনে হয় যেন গ্রামের বাড়িতে ফিরেছি'- বলছিলেন রাজ্জাক।
মাহমুদ উল্লাহর অভিষেকও এখানে। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কাকে ১৯৬ রানে অলআউট করায় মাহমুদের অফ স্পিনের ভূমিকা ছিল। ৫ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। এরপর ৭ নম্বরে নেমে ৫৪ বলে ৩৬ করে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন জয়ের স্বপ্নটা। ৩৪ বলে যখন ৪৬ রান দরকার, তখন মাহমুদের আউটে নিভে যায় আশার দেউটি। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাঁর। জহুরুলের ওয়ানডে অভিষেকও এখানে, ২০১০ সালের এশিয়া কাপে। ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ বলে অপরাজিত ১১ করেছিলেন তিনি। মাস তিনেক আগে টেস্ট আভিষেকে শূন্যের তুলনায় তো ভালো!
মাশরাফি বিন মুর্তজার অভিষেক শ্রীলঙ্কায় না। শুধু তাই নয়, এখানে কোনো সুখস্মৃতিও নেই তাঁর। 'কেন জানি শ্রীলঙ্কায় আমি কখনো ভালো করতে পারি না। মেজাজ তাই খারাপ হয়ে যায়'- বলছিলেন তিনি। লঙ্কাদ্বীপে তিন টেস্টে মোটে তিন উইকেট তাঁর, গড় ৯১.৩৩, স্ট্রাইক রেট ১৪৬। ওয়ানডেতে ৪ ম্যাচে মাত্র চার উইকেট। এর মধ্যে শেষ দুই ওয়ানডেতে ৮ ওভারে ৭০ এবং ৫ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। মাশরাফির মেজাজ খারাপ হওয়ার মতোই পারফরম্যান্স। এবার অবশ্য চিত্রনাট্য অন্যরকমভাবে লেখার আশা মাশরাফির, 'আমি এখন বেশ ছন্দে আছি। আশা করছি, শ্রীলঙ্কা থেকে এবার ভালো কিছু নিয়েই ফিরতে পারব। দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তোলাতে পারলে তো কথাই নেই।'
ওই একটি স্বপ্নেই বুঁদ হয়ে আছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় রাউন্ড! অধিনায়ক মুশফিকের কথামতো বাংলাদেশ নিজেদের সুযোগটা নিতে পারলেই হয়!
No comments