বেনজিরের নির্দেশে দু’টি দেশকে পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছিঃ কাদির খান
পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো দেশের পরমাণুপ্রযুক্তি অন্য দু’টি দেশের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পরমাণুবিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানকে।সেই নির্দেশটিই তিনি পালন করেছিলেন। শনিবার পাকিস্তানের সংবাদ সংস্থা জং নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেন দেশটির প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানি ও ভিন্ন দেশে পরমাণু প্রযুক্তি হস্তান্তর করার অভিযোগে সমালোচিত ড. আবদুল কাদির খান।
আবদুল কাদির খান বলেন, “পরমাণুপ্রযুক্তি কারও কাছে হস্তান্তর করা এত সহজ নয়।কেউ চাইলেই এটা পকেটে ভরে এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যেতে পারেনা।পুরো কাজের দেখভাল করে প্রায় ৮০০ শ’ ব্যক্তি।সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো আমাকে দু’টি দেশের নাম উল্লেখ করে তাদের সহায়তা করার ও পরিষ্কার করে সব বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ইচ্ছামতো চলতে পারতাম না, আর তাই আমাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হয়েছিল।আমাদের জাতীয় স্বার্থে দেশ দু’টির ভূমিকা ও সহযোগিতার বিষয়ে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর জানাশোনা ছিল।”
কাদির খান বলেন, এখন পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর কৃতিত্ব দাবি করে নায়ক বনতে চান নেওয়াজ শরিফ।অথচ তিনি পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে একেবারেই রাজি ছিলেন না।কারণ, তিনি ভয় পেতেন যে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হতে পারে যা তাঁর দলের জন্য হুমকি তৈরি করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে কাদির খান বলেন, ইমরান খানের কাছে তাঁর অনেক প্রত্যাশা ছিল।কিন্তু তাঁর সঙ্গে কয়েকটি বৈঠকের পর তিনি হতাশ হয়েছেন।তাঁর (ইমরান খান) রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এখনো অনেক কাঁচা।
ইমরানের রাজনীতিকে ‘কৃত্রিম রাজনীতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন কাদির।
পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় আমেরিকান ড্রোন হামলার বিষয়ে কাদির খান বলেন, “ওইসব হামলা রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক বাহিনীর সম্মতিতেই ঘটছে।রাজনীতিবিদেরা যেমন উপজাতি এলাকাগুলোতে ড্রোন হামলার দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না, তেমনি সামরিক বাহিনীও সে দায়িত্বকে অস্বীকার করতে পারে না।কারণ, সামরিক বাহিনী দেশের সীমান্ত ও ভূমি রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
কাদির খান বলেন, ‘ড্রোন হামলা বন্ধের জন্য পাকিস্তান বিমানবাহিনীকে কোনো নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।যদি আদিবাসীদের আমরা দেশে তৈরি কাঁধ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ছোট ছোট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করি, তবে তারাই এসব ড্রোন ভূপাতিত করতে পারবে।ড্রোন ভূপাতিত করা যায় না, এটা ভাবা ভুল।’
আরেক প্রসঙ্গে কাদির খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে কখনো চিরতরে চলে যাবে না, বরং সেখানে তার শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখবে।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত খুব পরিষ্কার।তারা চায় পাকিস্তানকে ভাগ করে পাঞ্জাবের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে পরিণত করতে।তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায়, পাকিস্তান পাঞ্জাবের মতো কমজোর হয়ে ভারতের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করুক।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের উচিত হবে ভারতের সঙ্গে চুক্তি না করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গাঢ় করা।
তিনি বলেন, যে সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ অনুযায়ী, সে সরকার ওয়াশিংটনের জন্য খুবই উপযোগী।
সাধারণ নির্বাচন বিষয়ে কাদির খান বলেন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করেছে বলে সুপ্রিম কোর্ট যে দাবি করছে, তা অর্থহীন।যদি সেনাবাহিনী চায়, তবে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে।আর এরপর সেই ক্ষমতা দখল জায়েজ করতে এবং সংবিধান সমুন্নত রাখতে সে প্রয়োজনীয় আইন পাস করাতেই পারবে। সূত্র: জং নিউজ।
No comments