নিজ দলের লোকজনকে দায়মুক্তি দিলেই তো হয়!- ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা

সরকারি দলের লোক হলেই যখন ‘সাত খুন মাফ’, তখন তাঁদের আইন করে দায়মুক্তি দিয়ে দিলেই তো হয়! অপরাধ করার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অযথা ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা হিসেবে তা প্রত্যাহারের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া অবলম্বন করার দরকার কী! বর্তমান সরকার এই প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ৮১ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা


প্রত্যাহার করেছে। সরকারের মেয়াদ আছে আর মাত্র বছর খানেক, এখনো অনেক মামলা হয়রানিমূলক হিসেবে বিবেচনা করে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। এই জটিল পথে যাওয়ার চেয়ে সরকার সংসদে বসে নিজ দলের সদস্যদের জন্য সব ধরনের অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে দিচ্ছে না কেন?
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগের বিএনপি সরকারের আমলে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত দলের নেতা-কর্মীদের মুক্ত করা বা বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা চিহ্নিত করে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়। বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার জন্য মামলায় জড়িয়েছে—এমন যুক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় না হয় মেনে নেওয়া যায়; কিন্তু এ ধরনের মামলা যদি হয়ে থাকে, তবে তা প্রত্যাহার না করে যথাযথ বিচারের মাধ্যমে তাঁদের নির্দোষ প্রমাণই আসল পথ। আইনের শাসনের প্রতি আস্থা থাকলে সরকার তা-ই করত। সেটা না করে সরকার মামলা প্রত্যাহারের নীতি বেছে নিয়েছে। অতীতে বিএনপি একইভাবে দলীয় লোকজনকে মুক্তি দিয়েছে, এখন আওয়ামী লীগ সরকার তা করবে না কেন! কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের করা খুন, নৃশংসতা ও দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের কোন যুক্তিতে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা আখ্যা দিয়ে মুক্ত করার চেষ্টা করছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না।
সরকারের এই আচরণে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে অপরাধী সরকারি দলের হলে তিনি কোনো শাস্তি পেতে পারবেন না। মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নাম থাকলে সেসব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ জন্য প্রক্রিয়াটি হচ্ছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি যে ধরনের অপরাধই করুন না কেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হলে মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মতামতের জন্য তা পাঠাবে এই ধরনের মামলা প্রত্যাহারের জন্য গঠিত জেলা কমিটির কাছে। সেখান থেকে বিষয়টি আসবে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির কাছে। তারা অনুমোদন দিলেই আওয়ামী লীগদলীয় একজন অভিযুক্ত মুক্ত। এভাবে চললে দেশে আইনের শাসন রয়েছে, এমন দাবি করা কঠিন।
এ মাসেই রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। কমিটি যদি এ সরকারের আমলে দায়ের করা মামলাগুলোকেও ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বলে বিবেচনা করে, তবে এটা প্রমাণিত হবে যে বর্তমান সরকার নিজেই এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। কমিটি কী করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.