গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব- ইন্টারনেটের আলোয় বিশ্ব দেখব

‘মুঠোফোনে যে এত কিছু লুকিয়ে ছিল, তা আগে জানা ছিল না। এই উৎসবে যোগ দিয়ে আজ আমাদের অনেক কিছু জানা হলো। আমরা শপথ নিয়েছি—ইন্টারনেটের আলোয় বিশ্ব দেখব।’ গতকাল রোববার গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসবে যোগ দিয়ে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর


বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তানজিনা মার্জিনা আলম। এ সময় পাশে দাঁড়ানো তার সহপাঠী রোবায়াত সায়মা বলে, ‘এই উৎসব আমাদের চোখ-কান খুলে দিচ্ছে। এই উৎসব যেন বন্ধ না হয়।’
‘এসো পৃথিবীর পাঠশালায়...’ আহ্বান জানিয়ে উৎসবটি হয় কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের মাঠে। আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পটুয়াখালীর সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় ও গাজীপুরে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে ইন্টারনেট উৎসব হয়।
প্রতিটি স্থানে সকালে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। যেসব শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় নিবন্ধনের সুযোগ পায়নি, তাদের জন্যও ছিল মজার মজার খেলা ও পুরস্কার। প্রতিটি উৎসবকেন্দ্রে বসানো ছিল হ্যাপিনেস মেশিন, ম্যাজিক মিররসহ মজার মজার উপকরণ। সেখানে শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল বেশি। হ্যাপিনেস মেশিনটি ছিল রোবটের মতো দেখতে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি মনিটরের সামনে দাঁড়ালেই চলে আসছিল প্রশ্ন। সঠিক উত্তর দেওয়ামাত্রই বের হচ্ছিল মজার মজার পুরস্কার।
ইন্টারনেট উৎসবের খবর জানাচ্ছেন ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিরা।
কক্সবাজার: শহরের চারটি কলেজ ও ছয়টি উচ্চবিদ্যালয়ের তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী গতকালের উৎসবে যোগ দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বায়তুশশরফ জব্বারিয়া একাডেমি, কক্সবাজার কেজি অ্যান্ড মডেল হাইস্কুল, সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয়, কক্সবাজার সিটি কলেজ, কক্সবাজার কমার্স কলেজ, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি কলেজ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করা ২৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০ জনকে বাছাই করা হয়। তাদের নিয়ে হয় জমজমাট আই-জিনিয়াস প্রতিযোগিতা। আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সীলমা সোবহা রাইসা। রাইসা বলে, গত বছরের ইন্টারনেট উৎসবে একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারায় আই-জিনিয়াস হতে পারিনি। কিন্তু দমে যাইনি। এবারের উৎসবের অপেক্ষায় ছিলাম।
এর আগে সকালে উৎসবের উদ্বোধন ও শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ আহমদ নবী। উৎসবে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, গ্রামীণফোন চট্টগ্রাম মহানগরের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. জহির রায়হান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী, পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, কক্সবাজারে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস ও ঢাকা বন্ধুসভার সদস্য জোবাইর কবির।
রাজশাহী: রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান শিক্ষক নূর জাহান বেগম। উৎসবে ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, শিরোইল সরকারি হাইস্কুল, পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা, গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলসহ ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
উৎসবে নিবন্ধন করা ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় রাজশাহী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মীর রাসেল। প্রতিক্রিয়ায় রাসেল বলে, ‘আমি গতবার রাজশাহী থেকে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু ভালো করতে পারিনি। সেখানে গিয়ে বুঝেছি, শুধু বইয়ের পাতা মুখস্থ করলে জীবনে কিছু করা যাবে না। আমাদের সবাইকে ইন্টারনেটের জগতে ঢুকতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের রাজশাহী আঞ্চলিক প্রধানের পক্ষ থেকে এহতেশামুল হক, রাজশাহীতে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও রাজশাহী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুল মালেক।
বগুড়া: আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজে আয়োজিত উৎসবে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করান প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন। ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, সরকারি শাহসুলতান কলেজ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজের তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়।
নিবন্ধন করা ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় বগুড়া জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহিদ রেজা।
উৎসবে বক্তব্য দেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ দীপকেন্দ্রনাথ দাস, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন, গ্রামীণফোনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আশফাকুজ্জামান চৌধুরী, বগুড়ায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মিলন রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা বন্ধুসভার সদস্য অনির্বান ও গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান উৎসবের উদ্বোধন করেন। পর তিনি উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ করে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে চলার দৃপ্ত শপথবাক্য পাঠ করান।
বন্ধুসভার সদস্য নুরুল আবরারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর কুমার পাল, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিনুর রহমান, গ্রামীণফোন বরিশাল অঞ্চলের ব্যবস্থাপক সুভাষ চন্দ্র লোধ, পটুয়াখালী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও প্রথম আলোর পটুয়াখালী প্রতিনিধি শংকর দাস।
উৎসবে পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, একেএম কলেজ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ, পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পটুয়াখালী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লতিফ মিউনিসিপ্যাল সেমিনারি, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও পটুয়াখালী ওয়ায়েজিয়া কামিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। নিবন্ধন করা ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হন পটুয়াখালী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মেহেদী হাসান।
টঙ্গী (গাজীপুর): টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে আয়োজিত উৎসবে ওই প্রতিষ্ঠানসহ টঙ্গীর ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি মো. আবু জাফর। বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল আলম, গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, গ্রামীণফোনের ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ মামুন খান, টঙ্গী বন্ধুসভার এম এম হেলাল উদ্দিন, প্রথম আলোর টঙ্গী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গ্রামীণফোনের ইমরোজ সোহেল।
উৎসবে অংশ নেওয়া অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো সিরাজউদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন, নিশাত জুট মিলস উচ্চবিদ্যালয়, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ, মজিদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, সাহাজ উদ্দিন সরকার আদর্শ বিদ্যালয়, আমজাদ আলী সরকার পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, হাজি কছিম উদ্দিন পাবলিক স্কুল, মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার স্কুল ও মুন্নু টেক্সটাইল মিলস উচ্চবিদ্যালয়।
আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হন টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. মায়েদ রহমান। পুরস্কার পেয়ে মায়েদ বলে, ‘এ রকম আনন্দ কোনো দিন পাইনি। আমি বড় হয়ে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।’
এ বছর সারা দেশে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর যৌথ আয়োজনে এই উৎসবের সহযোগী হিসেবে রয়েছে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি। সহায়তা দিচ্ছে গুগল, অপেরা, নকিয়া, ফেসবুক, চ্যানেল আই ও রেডিও ফুর্তি। উৎসবের ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা করছে এশিয়াটিক ইভেন্ট মার্কেটিং লিমিটেড। সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার স্থানীয় সদস্যরা।
আজ উৎসব হবে সিলেটের বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ, রাজশাহীর বাঘা উচ্চবিদ্যালয় ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

No comments

Powered by Blogger.