আপনি যখন সাবলেটের বাসিন্দা by ফারহানা তাসনিম
হাসান-নিপা দম্পতি ঢাকা শহরে নতুন। এর আগে রাজশাহী শহরে ছিল ওরা। হাসানের বদলির চাকরি। ঢাকায় পোস্টিং অর্ডার হওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেছিল ট্রান্সফার অর্ডার ক্যান্সেল করার জন্য। কিন্তু ট্রান্সফার অর্ডারটা কোনভাবেই বদলানো যায়নি। কারণ চাকরিতে প্রমোশনের সাথে সাথে হাসানকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রমোশন এবং বদলির অর্ডার হলে ওটা সহজে পাল্টানো যায় না। ঢাকা শহরে জীবনযাপন অন্যান্য শহরের তুলনায় কঠিন। এখানে দু’রুমের একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা এবং সংসার ঠিকমতো চালানো নির্ধারিত বেতনের টাকায় সম্ভব নয়। ঢাকার বাইরে বাড়িভাড়া তেমন বেশি নয়। অফিস ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে। অফিসের কাছাকাছি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে। তা নাহলে গাজীপুর সাভার কাঁচপুর এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় থাকা যায়। কিন্তু এখন ঢাকা শহরের যানজটের যে ভয়াবহ অবস্থা অনেক দূরে কম ভাড়ায় থাকতে গিয়ে ঠিক সময়ে অফিসে আসা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। অতএব থাকতে হবে মতিঝিলের কাছাকাছি কোথাও। কিন্তু মতিঝিলের কাছাকাছি আলাদাভাবে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার কথা ভাবতে পারে না অফিসে মাঝারি গোছের কর্মকর্তা হাসান। অগত্যা সাবলেটে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে হাসান-নিপা দম্পতিকে। এর আগে সাবলেটে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল না তাদের। শুরুতে নানা সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। এখন ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে যেখানে আবাসিক সমস্যা প্রকট অনেককে আর্থিক সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা করে সাবলেটে থাকতে হচ্ছে। একই ফ্ল্যাট বা বাসা ভাগাভাগি করে থাকার ব্যবস্থাটাই হলো সাবলেট। আজকাল অনেককে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাবলেটে থাকতে হচ্ছে। সাবলেটে থাকতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন কেউ কেউ। সাবলেটে নিত্য নতুন অনেক ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এভাবে থাকতে হলে প্রয়োজন হয় নতুনভাবে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার। মানতে হয় বেশ কিছু নিয়মও। সাধারণত একটি ফ্ল্যাট বা বাসায় দুটি পরিবার ভাগাভাগি করে থাকেন সাবলেট হিসেবে। উভয় পরিবার যদি নিয়মকানুন ঠিকঠাক মতো মেনে চলেন তাহলে অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়িয়ে চলা সম্ভব। তেমনিভাবে দুই পরিবারের মধ্যে চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ ভালো সম্পর্ক রক্ষা করে চলা যেতে পারে।
সাবলেটে যাঁরা থাকেন তাঁদের কাছে প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাবলেট দেয়া এবং নেয়ার আগে উভয়পক্ষের জানার চেষ্টা করতে হবে। যিনি সাবলেট নিচ্ছেন এবং যিনি সাবলেট দিচ্ছেন উভয় পক্ষকেই পরস্পরের কাছে নিজের পরিচয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এ জন্য প্রমাণ হিসেবে ভোটার আইডি কার্ড ও পেশাগত আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ অন্যান্য পরিচিতিমূলক কাগজপত্র নিয়ে রাখতে হবে। ফটোকপিসহ অন্যান্য পরিচিতিমূলক কাগজপত্র নিয়ে রাখতে হবে।
সাবলেটে থাকতে হলে যখন তখন অপর বাসিন্দার রুমে যাওয়া উচিত নয়। যদি কোন প্রয়োজন পড়ে তাহলে আগে অনুমতি নিয়ে অপর বাসিন্দার রুমে যেতে হবে। অন্যের রুমের মধ্যে দীর্ঘ সময় বসে থাকার অভ্যেস থাকলে তা ছাড়তে হবে। আপনার রুমে যদি কেউ দীর্ঘ সময় অবস্থান করে তখন আপনার কি অবস্থা হতে পারে সেটা বিবেচনায় এনে অন্যের সুবিধা অসুবিধার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সাবলেট থাকার সময়।
আপনার রুমে যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকে তাহলে মনের মধ্যে অস্বস্তি চেপে না রেখে তাকে বিনয়ের সঙ্গে জানাতে হবে। আপনি হয়ত তাকে বলতে পারেন, ‘এতক্ষণ ধরে কথা বলতে ভালোই লাগছিল কিন্তু এখন আমাকে কিছুু জরুরি কাজ করতে হবে, ভাই এখন উঠতে হবে, পরে আবার কথা বলব কেমন।
সাবলেট বাসিন্দাদের রান্নাঘর এবং বাথরুম নিয়ে নানা সমস্যা হয়। এ জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়। সাবলেটে প্রায় সব ক্ষেত্রেই একই রান্নাঘর বা কিচেন ব্যবহার করতে হয়। একটি বাসায় বা ফ্ল্যাটে সাধারণত একটি রান্নাঘর তাকে। সাবলেটে থাকা উভয় পরিবারকেই ঐ একটি রান্নাঘর পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে পালাক্রমে ব্যবহার করতে হয়। তবে এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে মনকষাকষি, ঝগড়া বিবাদের ঘটনাও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন রান্নাঘরে নিজেই খুব বেশি সময় না নেয়া হয়। রান্নাঘরে যদি দুটি চুলা থাকে শুধু একটি চুলাই ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে, যাতে অন্যের প্রয়োজন হলে সে আরেকটি ব্যবহার করতে পারে। রান্নাবান্না শেষে শাকসবজি তরকারির কাটা অংশ আবর্জনাগুলো মাছের আঁশ ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে এবং চুলাসহ রান্নাঘরটি অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখা উচিত।
সাবলেটের বাসিন্দাদের বাথরুমও শেয়ার করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। এ রকম অবস্থা হলে বাথরুম ব্যবহারের সময় অন্যের প্রয়োজনের কথাও বিবেচনা করতে হবে অবশ্যই। বিশেষ করে সকালে অফিস টাইমে কিংবা স্কুল কলেজে যাওয়ার সময় বেশিক্ষণ ধরে বাথরুম আটকে রাখা উচিত নয়। এ সময় অন্যেরও তাড়া রয়েছে বুঝতে হবে। বাথরুম না সেরে কেউ বাইরে যাবার কথা ভাবতে পারে না। অতএব এ বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে অন্যভাবে। আজকাল, শহরে প্রায়ই পানি সঙ্কট দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পানি ব্যবহারের একটু হিসেবি হতে হবে। পানি এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে অন্যরাও বাথরুমে এসে পানি পায়। পানির অভাবে বিশ্রী অবস্থার মধ্যে না পড়ে। প্রয়োজনে বাথরুমে রক্ষিত ড্রাম ও বালতিতে পানি ভরে রাখতে হবে। বাথরুম, টয়লেট ব্যবহার শেষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে রেখে আসতে হবে। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় বাথরুম রেখে আসাটা অরুচি ও অভদ্রতার পরিচায়ক। পরনের কাপড়চোপড় বাথরুমে ফেলে আসবেন না কোনভাবেই। আসার সময় ভেজা হোক কিংবা শুকনো হোক পরিধেয় কাপড়চোপড় সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে। আপনার যদি কোন কারণে দীর্ঘসময় ধরে বাথরুম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে তাহলে সাবলেটের অপর পরিবারকে আগে থেকে জানিয়ে রাখবেন যাতে তারা সেভাবে বাথরুম ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহণ পারেন।
নির্দিষ্ট একটি ফ্ল্যাটে দুটি পরিবার সাবলেট নিয়ে যখন থাকে তখন এমনিতেই স্থান সংকুলান হতে চায় অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে উভয় পরিবারকে থাকতে হয়। সাবলেটে যেহেতু জায়গা খুব একটা থাকে না বিশেষ করে বাথরুম, রান্নাঘর শেয়ার করতে হয় সেখানে ঘন ঘন মেহমান এলে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। অতএব সাবলেটের বাসিন্দাদের ঘন ঘন মেহমান আনা উচিত নয়। আর যখন মেহমান অতিথি আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব আসে তখন অপর বাসিন্দাদের কাছে তাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া অপর পক্ষের মেহমান এলে তাদের সামনে বিরক্তি প্রকাশ করে অপ্রীতিকর অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত নয়। ব্যাপারটিকে সহজভাবে মেনে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
সাবলেটে থাকতে হলে আপনাকে নানা বিষয়ে সংযত হয়ে চলতে হবে। অশালীন অভদ্র অরুচিকর আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অপর পক্ষ যা পছন্দ করে না তা কোনভাবেই করা উচিত নয়। তাদেরকে বিরক্ত করা হলে একসময় তারাও এর জবাব দিতে চেষ্টা করবে তেমনি আচরণের মাধ্যমে। উচ্চৈঃস্বরে কথা বললে কিংবা হাই ভলিউমে গান শুনলে, টিভি ভিডিও দেখলে অন্য বাসিন্দার সন্তানদের লেখাপড়াসহ নানা কাজে অসুবিধা হতে পারে। যদি কেউ অসুস্থ বা বৃদ্ধ থাকে তাহলে সেটা বিবেচনা করে আপনাকে কম ভলিউমে টিভি দেখতে হবে, গান শুনতে হবে। এছাড়া পড়ার সময় বা গভীর রাতে কম ভলিউমে টিভি চালাতে হবে, কথা বলতে হবে।
আপনি যখন সাবলেটের বাসিন্দা তখন প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখ আনন্দ বেদনার সমান অংশীদার হতে হবে। তার কোন সমস্যা হলে তার সহযোগিতা করতে হবে। তাকে প্রতিপক্ষ বা শত্রু মনে না করে বন্ধু মিত্র ভাবতে হবে। আত্মীয় না হলেও একই বাসায় থাকছেন আপনারা, আপনাদের আচরণ আত্মীয় বা একই পরিবারের সদস্যের মতো হওয়া উচিত।
প্রতিবেশীর কোন সমস্যা হলে দায়িত্ববান কারও সাথে আলাপ আলোচনা করে তা সমাধানের চেষ্টা চালানো উচিত। সাবলেটের উভয় পক্ষকেই মনে রাখতে হবে, দু’জনের প্রয়োজনেই আপনারা একসঙ্গে একই বাসায় থাকছেন, এজন্য প্রয়োজনে ছাড় দেয়ার মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে। উভয় পক্ষকেই একসঙ্গে থাকতে গেলে কিছু কিছু অসুবিধা তো হতেই পারে। এ বিষয়গুলো উদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। তাহলে দু’পক্ষের লাভ। একসঙ্গে সুন্দরভাবে মিলেমিশে পরস্পরের বন্ধুর মতো হয়ে একই পরিবারের সদস্য হয়ে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।
সাবলেট বাসিন্দাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার মনে রাখতে হবে সেটা হলোÑ অযাচিতভাবে অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। প্রত্যেকের নিজস্ব একটা ভুবন রয়েছে। সেই ভুবনে অযাচিতভাবে ঢোকার চেষ্টা না করাই উচিত। অপর পক্ষ বিরক্ত হয়, বিব্রত বোধ করে, লজ্জিত হয় তেমন কিছু করতে যাবেন না। তার সামর্থ্য, রুচি ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে কটাক্ষ করা উচিত নয়। প্রত্যেকের নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী তার জীবনযাপন পদ্ধতি ঠিক করার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার কোনভাবেই ক্ষুণœ হতে দেয়া উচিত নয়।
মডেল : নিলয় ও নওশিন
সাবলেটে যাঁরা থাকেন তাঁদের কাছে প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাবলেট দেয়া এবং নেয়ার আগে উভয়পক্ষের জানার চেষ্টা করতে হবে। যিনি সাবলেট নিচ্ছেন এবং যিনি সাবলেট দিচ্ছেন উভয় পক্ষকেই পরস্পরের কাছে নিজের পরিচয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এ জন্য প্রমাণ হিসেবে ভোটার আইডি কার্ড ও পেশাগত আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ অন্যান্য পরিচিতিমূলক কাগজপত্র নিয়ে রাখতে হবে। ফটোকপিসহ অন্যান্য পরিচিতিমূলক কাগজপত্র নিয়ে রাখতে হবে।
সাবলেটে থাকতে হলে যখন তখন অপর বাসিন্দার রুমে যাওয়া উচিত নয়। যদি কোন প্রয়োজন পড়ে তাহলে আগে অনুমতি নিয়ে অপর বাসিন্দার রুমে যেতে হবে। অন্যের রুমের মধ্যে দীর্ঘ সময় বসে থাকার অভ্যেস থাকলে তা ছাড়তে হবে। আপনার রুমে যদি কেউ দীর্ঘ সময় অবস্থান করে তখন আপনার কি অবস্থা হতে পারে সেটা বিবেচনায় এনে অন্যের সুবিধা অসুবিধার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সাবলেট থাকার সময়।
আপনার রুমে যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকে তাহলে মনের মধ্যে অস্বস্তি চেপে না রেখে তাকে বিনয়ের সঙ্গে জানাতে হবে। আপনি হয়ত তাকে বলতে পারেন, ‘এতক্ষণ ধরে কথা বলতে ভালোই লাগছিল কিন্তু এখন আমাকে কিছুু জরুরি কাজ করতে হবে, ভাই এখন উঠতে হবে, পরে আবার কথা বলব কেমন।
সাবলেট বাসিন্দাদের রান্নাঘর এবং বাথরুম নিয়ে নানা সমস্যা হয়। এ জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়। সাবলেটে প্রায় সব ক্ষেত্রেই একই রান্নাঘর বা কিচেন ব্যবহার করতে হয়। একটি বাসায় বা ফ্ল্যাটে সাধারণত একটি রান্নাঘর তাকে। সাবলেটে থাকা উভয় পরিবারকেই ঐ একটি রান্নাঘর পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে পালাক্রমে ব্যবহার করতে হয়। তবে এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে মনকষাকষি, ঝগড়া বিবাদের ঘটনাও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন রান্নাঘরে নিজেই খুব বেশি সময় না নেয়া হয়। রান্নাঘরে যদি দুটি চুলা থাকে শুধু একটি চুলাই ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে, যাতে অন্যের প্রয়োজন হলে সে আরেকটি ব্যবহার করতে পারে। রান্নাবান্না শেষে শাকসবজি তরকারির কাটা অংশ আবর্জনাগুলো মাছের আঁশ ইত্যাদি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে এবং চুলাসহ রান্নাঘরটি অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখা উচিত।
সাবলেটের বাসিন্দাদের বাথরুমও শেয়ার করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। এ রকম অবস্থা হলে বাথরুম ব্যবহারের সময় অন্যের প্রয়োজনের কথাও বিবেচনা করতে হবে অবশ্যই। বিশেষ করে সকালে অফিস টাইমে কিংবা স্কুল কলেজে যাওয়ার সময় বেশিক্ষণ ধরে বাথরুম আটকে রাখা উচিত নয়। এ সময় অন্যেরও তাড়া রয়েছে বুঝতে হবে। বাথরুম না সেরে কেউ বাইরে যাবার কথা ভাবতে পারে না। অতএব এ বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে অন্যভাবে। আজকাল, শহরে প্রায়ই পানি সঙ্কট দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পানি ব্যবহারের একটু হিসেবি হতে হবে। পানি এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে অন্যরাও বাথরুমে এসে পানি পায়। পানির অভাবে বিশ্রী অবস্থার মধ্যে না পড়ে। প্রয়োজনে বাথরুমে রক্ষিত ড্রাম ও বালতিতে পানি ভরে রাখতে হবে। বাথরুম, টয়লেট ব্যবহার শেষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে রেখে আসতে হবে। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় বাথরুম রেখে আসাটা অরুচি ও অভদ্রতার পরিচায়ক। পরনের কাপড়চোপড় বাথরুমে ফেলে আসবেন না কোনভাবেই। আসার সময় ভেজা হোক কিংবা শুকনো হোক পরিধেয় কাপড়চোপড় সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে। আপনার যদি কোন কারণে দীর্ঘসময় ধরে বাথরুম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে তাহলে সাবলেটের অপর পরিবারকে আগে থেকে জানিয়ে রাখবেন যাতে তারা সেভাবে বাথরুম ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহণ পারেন।
নির্দিষ্ট একটি ফ্ল্যাটে দুটি পরিবার সাবলেট নিয়ে যখন থাকে তখন এমনিতেই স্থান সংকুলান হতে চায় অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে উভয় পরিবারকে থাকতে হয়। সাবলেটে যেহেতু জায়গা খুব একটা থাকে না বিশেষ করে বাথরুম, রান্নাঘর শেয়ার করতে হয় সেখানে ঘন ঘন মেহমান এলে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। অতএব সাবলেটের বাসিন্দাদের ঘন ঘন মেহমান আনা উচিত নয়। আর যখন মেহমান অতিথি আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব আসে তখন অপর বাসিন্দাদের কাছে তাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া অপর পক্ষের মেহমান এলে তাদের সামনে বিরক্তি প্রকাশ করে অপ্রীতিকর অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত নয়। ব্যাপারটিকে সহজভাবে মেনে নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
সাবলেটে থাকতে হলে আপনাকে নানা বিষয়ে সংযত হয়ে চলতে হবে। অশালীন অভদ্র অরুচিকর আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অপর পক্ষ যা পছন্দ করে না তা কোনভাবেই করা উচিত নয়। তাদেরকে বিরক্ত করা হলে একসময় তারাও এর জবাব দিতে চেষ্টা করবে তেমনি আচরণের মাধ্যমে। উচ্চৈঃস্বরে কথা বললে কিংবা হাই ভলিউমে গান শুনলে, টিভি ভিডিও দেখলে অন্য বাসিন্দার সন্তানদের লেখাপড়াসহ নানা কাজে অসুবিধা হতে পারে। যদি কেউ অসুস্থ বা বৃদ্ধ থাকে তাহলে সেটা বিবেচনা করে আপনাকে কম ভলিউমে টিভি দেখতে হবে, গান শুনতে হবে। এছাড়া পড়ার সময় বা গভীর রাতে কম ভলিউমে টিভি চালাতে হবে, কথা বলতে হবে।
আপনি যখন সাবলেটের বাসিন্দা তখন প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখ আনন্দ বেদনার সমান অংশীদার হতে হবে। তার কোন সমস্যা হলে তার সহযোগিতা করতে হবে। তাকে প্রতিপক্ষ বা শত্রু মনে না করে বন্ধু মিত্র ভাবতে হবে। আত্মীয় না হলেও একই বাসায় থাকছেন আপনারা, আপনাদের আচরণ আত্মীয় বা একই পরিবারের সদস্যের মতো হওয়া উচিত।
প্রতিবেশীর কোন সমস্যা হলে দায়িত্ববান কারও সাথে আলাপ আলোচনা করে তা সমাধানের চেষ্টা চালানো উচিত। সাবলেটের উভয় পক্ষকেই মনে রাখতে হবে, দু’জনের প্রয়োজনেই আপনারা একসঙ্গে একই বাসায় থাকছেন, এজন্য প্রয়োজনে ছাড় দেয়ার মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে। উভয় পক্ষকেই একসঙ্গে থাকতে গেলে কিছু কিছু অসুবিধা তো হতেই পারে। এ বিষয়গুলো উদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। তাহলে দু’পক্ষের লাভ। একসঙ্গে সুন্দরভাবে মিলেমিশে পরস্পরের বন্ধুর মতো হয়ে একই পরিবারের সদস্য হয়ে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।
সাবলেট বাসিন্দাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার মনে রাখতে হবে সেটা হলোÑ অযাচিতভাবে অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। প্রত্যেকের নিজস্ব একটা ভুবন রয়েছে। সেই ভুবনে অযাচিতভাবে ঢোকার চেষ্টা না করাই উচিত। অপর পক্ষ বিরক্ত হয়, বিব্রত বোধ করে, লজ্জিত হয় তেমন কিছু করতে যাবেন না। তার সামর্থ্য, রুচি ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে কটাক্ষ করা উচিত নয়। প্রত্যেকের নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী তার জীবনযাপন পদ্ধতি ঠিক করার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার কোনভাবেই ক্ষুণœ হতে দেয়া উচিত নয়।
মডেল : নিলয় ও নওশিন
No comments