দু য়া রে অ লি ম্পি ক-অলিম্পিকের উত্তাপ টের পাচ্ছি

লন্ডনে এখন গ্রীষ্মকাল। এখানে এসেই বুঝতে পেরেছি ব্রিটিশরা দিনের আবহাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে আলাপ জমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গত কিছুদিন অনুশীলন ছেড়ে বাইরে বের হলেই শুনতে পাচ্ছি ঘুরে-ফিরে একটা শব্দ—অলিম্পিক। ২৭ জুলাই এই লন্ডনেই শুরু হবে ক্রীড়াঙ্গনের মহাযজ্ঞ।


প্রথমবারের মতো লন্ডনে এসেছি গত ১৯ এপ্রিল। বিমানবন্দরে নেমেই ভাবছিলাম অন্য রকম এক লন্ডন দেখব। আমি এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে গিয়েছি। গুয়াংজু এশিয়াডে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ব্যানার, ফেস্টুন, লোগো, নানা রকম ফুল দিয়ে সাজানো শহরটা। অন্য রকম রোমাঞ্চ লাগছিল মনে। দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমসেও তা-ই। কিন্তু লন্ডনে সেভাবে উত্তাপটা পাচ্ছিলাম না। আমরা অলিম্পিক ভিলেজ থেকে অনেক দূরে বিসলে শ্যুটিং কমপ্লেক্সে আছি। এখান থেকে বাসে লন্ডন যেতে ঘণ্টা খানেক লাগে। প্রথম দিকে খুব বেশি ঘুরতে বের হতাম না, এখন বের হই। লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী ভেন্যুটা দেখে এসেছি। আমাদের শ্যুটিং প্রতিযোগিতার ভেন্যুও দেখলাম।
অলিম্পিক ভিলেজের কাছাকাছি যাওয়া হয়নি। হয়তো এ জন্যই অলিম্পিকের আসল উত্তাপটা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে বিসলে শ্যুটিং কমপ্লেক্সে থেকেও বুঝতে পারি, দুয়ারে অলিম্পিক। মাঝেমধ্যে যখন ঘুরতে যাই, পথে-ঘাটে অলিম্পিক নিয়ে লোকজনের আগ্রহ দেখি। পরিচয় জানতে চাইলে বলি, আমি অলিম্পিকে অংশ নেব। অমনি তারা বলে ওঠে—‘ও তুমি অলিম্পিয়ান!’ চোখে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকায় আমার দিকে।
মিস্টার ডেভিড নামের এক মনোবিদ কিছুদিন থেকে একটা মনস্তাত্ত্বিক অনুশীলন করাচ্ছেন আমাকে। তাঁর সঙ্গে পরিচয়ও অলিম্পিয়ান হিসেবে। আমার কোচ শোয়েব ভাইকে (শোয়েবুজ্জামান) বলে আসছিলাম, আমার একঘেয়ে লাগছে। এখানে তো টেলিভিশন নেই। বাইরের জগতে কী হচ্ছে না হচ্ছে, টের পাই না ভালোমতো। শোয়েব ভাই এক বাঙালি রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে গেলেন। সেখানে প্রায় নিয়মিত খেতে আসেন মনোবিদ ডেভিড। রেস্টুরেন্টের মালিক ফারুক চাচা আমাদের পূর্বপরিচিত। উনি পরিচয় করিয়ে দিলেন মনোবিদের সঙ্গে। ডেভিড জানতে চাইলেন, আমার কোনো মনোবিদ আছে কি না। ভদ্রলোকের নাকি চেলসি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবলারদের সঙ্গেও কাজের অভিজ্ঞতা আছে। যখন শুনলেন মনোবিদ নেই আমার, নিজ থেকেই সাহায্যের প্রস্তাব দিলেন। মনের ভয় দূর করার জন্য একদিন তিনটি হলুদ বেলুন নিয়ে এলেন। বললেন উড়িয়ে দিতে। আমার বেলুনটা বারবার গাছের ডালে আটকে যাচ্ছিল। সেটা নিয়ে কী হাসাহাসি। পরে লাঠি দিয়ে ঠেলে উড়িয়ে দেওয়া হয় বেলুনটা। ওই বেলুনটাকে উনি বলছিলেন আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
আমার অনুশীলন প্রতিদিন সকাল-বিকেলে। বিদেশি কোচ নেই বলে খুব বেশি আক্ষেপ নেই। গত সাড়ে তিন বছর ধরে শোয়েব ভাই আমাকে প্র্যাকটিস করাচ্ছেন। আশা করি, অলিম্পিকে ভালোই করব। গ্রীষ্মকাল চললেও লন্ডনে বেশ ঠান্ডা। তবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। টেলিফোনে বাড়িতে কথা হয় নিয়মিতই। আম্মু জিজ্ঞাসা করে কেমন আছিস, খাওয়া-দাওয়া কেমন হচ্ছে। প্র্যাকটিস নিয়ে বেশি কিছু বলে না। শুধু বলে, যে কাজের জন্য লন্ডনে আছি সেটি যেন মন দিয়ে করি।
অলিম্পিক সম্পর্কে আগে আমার ধারণা ছিল না। আস্তে আস্তে শ্যুটিংয়ে ভালো করতে শুরু করি, আন্তর্জাতিক গেমস সম্পর্কেও ধারণা পাই। ২০০৭ সালে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৪০০-তে ৩৯০-এর ঘরে স্কোর করি, স্বপ্ন দেখার শুরুও তখন। অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন। একটা জেদও ছিল—নিজের যোগ্যতা বলেই অলিম্পিকে অংশ নিতে চাই, কোটা প্লেসে নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটা হয়নি। তারপরও আমার এখানে আসতে পারাই অনেক বড় ব্যাপার।
উসাইন বোল্ট, রজার ফেদেরারদের কাছ থেকে দেখব অলিম্পিকে, এটা আমার একটা স্বপ্ন। তবে নিজে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অবশ্যই থাকবে। কোনোদিন যদি তাদের কাছাকাছি যেতে পারি, আগ বাড়িয়ে কথা বলব। আমার প্রিয় খেলোয়াড় রজার ফেদেরার। তাঁর মতো তারকা না হতে পারি, কিন্তু অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা আমার আছে। অলিম্পিকে পারফরম্যান্স দিয়ে সেটাই প্রমাণ করতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.