বাজারচিত্র-ফ্রি-স্টাইল চলছে, চলবে!
রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য না বাড়াতে একাধিক মন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি বারবার ব্যক্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি তৎপরতার কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যের সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই। সময়মতো আমদানি হয়েছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য। বণ্টন ব্যবস্থায় গলদের কোনো খবর মেলেনি।
রাজনৈতিক আন্দোলনও তেমন জোরালো নয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যেন বেপরোয়া। অর্থনীতির কোনো তত্ত্ব কিংবা বিধিবিধান মানতেই তারা রাজি নয়। বড় ও ছোট ব্যবসায়ী, সবাই যেন একজোট। প্রথম দলে যারা তাদের কারসাজি করার ক্ষমতা রয়েছে। বড় মজুদ থেকে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তারা দাম সামান্য বাড়িয়েই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। আর ছোট ব্যবসায়ীদের মনোভাব_ যেভাবে পারা যায় কোটি কোটি মানুষের পকেট কেটে টাকা হাতিয়ে নাও। যে পণ্যের জন্য যে দাম হাঁকা হবে, ক্রেতারা সেটাই দিতে প্রস্তুত থাকে। বাজারে ফ্রি-স্টাইল_ একদিনের ব্যবধানে কয়েক ধরনের পণ্য দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি দামে বিক্রি করাকে আর কীভাবেই বা ব্যাখ্যা করা যাবে? ব্যবসায়ীদের যুক্তি_ কয়েক দিনের বৃষ্টিতে শাক-সবজির সরবরাহ কমেছে। রমজানের কারণে অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বেশি করে পণ্য কেনার মনোভাবও প্রতি বছরের মতো লক্ষ্য করা যায়। পরিবহন খরচ বেড়েছে। চাঁদাবাজি রয়েছে। পুলিশও তাতে শামিল হয়। এসব যে কেবলই অজুহাত, সেটা বলা যাবে না। কিন্তু সাধারণ ভোক্তারা মনে করেন, বরাবরের মতোই ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। আবহাওয়া দফতরের তরফে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে_ এবারে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। তারপরও বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার যুক্তি! যানবাহন চলাচল বিঘি্নত হওয়ায় পণ্যের সরবরাহ ঢাকাসহ বড় বড় শহরে কম হচ্ছে_ এমন বক্তব্যও হাস্যকর। দেশের সড়ক পথ খুব একটা ভালো নয়_ এটা জানা কথা। কিন্তু বেহাল সড়ক পথ রাতারাতি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, এমন কথা কেউ বলছে না। সংবাদপত্র কিংবা টেলিভিশনের প্রতিবেদনেও এমন খবর নেই। প্রকৃতপক্ষে সরকারের মনিটরিং একেবারেই সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রে আদৌ নেই_ সেটা বুঝতে সমস্যা হয় না। পাইকারি ও খুচরা বাজারে তাদের তৎপরতা নেই। আমদানি পর্যায়ে নেই। দেশীয় উৎপাদকদের সরবরাহ ব্যবস্থাও সরকারের নজরদারির বাইরে। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীদের সরকার ঘাঁটাতেই চায় না। শিল্প-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের সংগঠনগুলোও তাদের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা করছে বলে মনে হয় না। কোনো কোনো বছরে চেম্বার নেতারা বড় বড় বাজার পরিদর্শনে গিয়ে রমজানের বাজারের আগুন সহনীয় করার চেষ্টা করেছেন। বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের আলোচনার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু এখন তেমন উদ্যোগও অনুপস্থিত। হয়তো ধরেই নেওয়া হয়েছে যে, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন বাজার চলবে বাজার অর্থনীতির নিয়মে নয় বরং ব্যবসায়ীদের মর্জিমাফিক। অতএব, সব তরফের হাত গুটিয়ে বসে থাকা! আর এ সুযোগে ক্রেতাদের পকেট কাটা চলছে। কখনও তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে, এমন আশা কেউই বোধহয় আর পোষণ করছে না। রমজান শেষ হলেই যে দুর্ভাগের রাত পোহাবে, সেটাও বলার উপায় নেই।
No comments