বদলে যাওয়া দৃশ্যপট by সেলিম সরদার
কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ যে একটি এলাকার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়ন। ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার এবং পুরুষ শাসিত সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের নারীরা ঘর ছেড়ে বাইরে এসে শুধু কৃষি কাজে মনোনিবেশ করে পাল্টে দিয়েছেন ঈশ্বরদীর অর্থনৈতিক
চিত্র। সরেজমিন ঘুরে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার নারী এখন সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত। অথচ কয়েক বছর আগেও তা কল্পনা করা যেত না। কয়েক বছর আগেও যে ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পাকা দালান ঘর খুঁজে পেতে বেগ পেতে হতো, এখন সেই মুলাডুলির গ্রামে গ্রামে ইট-সিমেন্টের তৈরি পাকা দালান ঘরের আধিক্যে কাঁচা বাড়িঘর খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
শুধু মুলাডুলি ইউনিয়নে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে প্রতিদিন ঈশ্বরদীর অর্থনীতিতে যোগ হয় গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, এই এলাকায় শিম, ঢেঁড়স ও বেগুন উৎপাদন হয় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫ ট্রাক, যা বিক্রি করে এই বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয় এই এলাকায়। এলাকাবাসী জানান, এলাকার নারীরা প্রতিদিন সকালে সাংসারিক কাজ শেষ করে পুরুষের মতো মাঠে যান কাজ করতে, কেউ নিজের জমিতে ফসলের পরিচর্যা করেন আবার কেউ বা অন্যের জমিতে পুরুষ শ্রমিকের মতো মজুরি খাটেন। কৃষাণীরা জানান, তাদের মোটেও লজ্জা কিংবা সংকোচ হয় না বরং পুরুষের পাশাপাশি নিজেরা কাজ করে নিজের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করেন।
মুলাডুলি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের মৃত কোরবান আলীর স্ত্রী নারী শ্রমিক রাহেলা বেগম (৫০) জানান, সারা বছরই আমরা মাঠে কাজ করি। শিম, ঢেঁড়স, বেগুন চাষের সময় গাছের পরিচর্যা ও ফসল তোলার কাজ করি। এতে প্রতিদিন আমি ১৫০ টাকা করে হাজিরা পাই। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেরা বিয়ে করে পৃথক হয়ে গেছে। আমি কোনো ছেলের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই আয় করে নিজের সংসার চালাচ্ছি। এতে কোনো ছেলের কাছে আমাকে ধরনা দিতে হয় না। বিশেষ করে শিম আবাদের সময় আমাদের বেশি সুবিধা হয়। এতে আমাদের মতো নারীদের বেঁচে থাকার একটি ভালো অবলম্বন তৈরি হয়েছে।
পতিরাজপুর গ্রামের মৃত শামসুদ্দীনের স্ত্রী মালেকা খাতুন বলেন, কৃষি মজুরির কাজ করেই বেঁচে আছি। ৫ ছেলেমেয়ের বিয়ের পর কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করে একমাত্র স্কুলপড়ূয়া ছেলেকে নিয়ে ভালো আছি।
একই গ্রামের নাসিমা খাতুন (৩০) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামী রবিউল ইসলাম অসুস্থ। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে চার জনের সংসারে আয়ের কোনো উৎস নেই। আমি সবজি মাঠে দিন-হাজিরার কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। যদি কৃষিকাজ করার সুযোগ না থাকত তাহলে স্বামী-সংসার নিয়ে আমাকে পথে বসতে হতো। আড়কান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী কুলসুম বেগম শিম চাষের জন্য মাঠ প্রস্তুতির কাজ করতে করতে বলেন, শিম চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে শিম তোলা পর্যন্ত সব কাজই আমি করে থাকি। আমার স্বামীও একজন দিনমজুর। একজনের টাকা সংসারে খরচ করি। আরেক জনের টাকা সঞ্চয় করি। সঞ্চিত টাকা দিয়ে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মূলাডুলি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আফসার আলী জানান, এই ইউনিয়নের মোট জমির পরিমাণ ১০ হাজার একর এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজার একরেই কৃষি আবাদ হয়। আর এখানকার কৃষিতে নারীদের সম্পৃক্ততা রীতিমতো তাক লাগানোর মতো।
মুলাডুলির কৃষি আবাদে নারীদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে মুলাডুলি ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্য রওশনারা বেগম বলেন, এই অঞ্চলের কৃষিতে নারী শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার ফলে শ্রমজীবী নারীদের জীবনমানের অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রুমানা খাতুন বলেন, প্রায় ১৫ হাজারও বেশি নারী শ্রমিক সরাসরি মাঠে কাজ করে নিজেরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এই এলাকার কৃষি উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন যা কৃষি ্ন্নয়নের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত বটে।
শুধু মুলাডুলি ইউনিয়নে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে প্রতিদিন ঈশ্বরদীর অর্থনীতিতে যোগ হয় গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, এই এলাকায় শিম, ঢেঁড়স ও বেগুন উৎপাদন হয় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫ ট্রাক, যা বিক্রি করে এই বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয় এই এলাকায়। এলাকাবাসী জানান, এলাকার নারীরা প্রতিদিন সকালে সাংসারিক কাজ শেষ করে পুরুষের মতো মাঠে যান কাজ করতে, কেউ নিজের জমিতে ফসলের পরিচর্যা করেন আবার কেউ বা অন্যের জমিতে পুরুষ শ্রমিকের মতো মজুরি খাটেন। কৃষাণীরা জানান, তাদের মোটেও লজ্জা কিংবা সংকোচ হয় না বরং পুরুষের পাশাপাশি নিজেরা কাজ করে নিজের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করেন।
মুলাডুলি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের মৃত কোরবান আলীর স্ত্রী নারী শ্রমিক রাহেলা বেগম (৫০) জানান, সারা বছরই আমরা মাঠে কাজ করি। শিম, ঢেঁড়স, বেগুন চাষের সময় গাছের পরিচর্যা ও ফসল তোলার কাজ করি। এতে প্রতিদিন আমি ১৫০ টাকা করে হাজিরা পাই। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেরা বিয়ে করে পৃথক হয়ে গেছে। আমি কোনো ছেলের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই আয় করে নিজের সংসার চালাচ্ছি। এতে কোনো ছেলের কাছে আমাকে ধরনা দিতে হয় না। বিশেষ করে শিম আবাদের সময় আমাদের বেশি সুবিধা হয়। এতে আমাদের মতো নারীদের বেঁচে থাকার একটি ভালো অবলম্বন তৈরি হয়েছে।
পতিরাজপুর গ্রামের মৃত শামসুদ্দীনের স্ত্রী মালেকা খাতুন বলেন, কৃষি মজুরির কাজ করেই বেঁচে আছি। ৫ ছেলেমেয়ের বিয়ের পর কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করে একমাত্র স্কুলপড়ূয়া ছেলেকে নিয়ে ভালো আছি।
একই গ্রামের নাসিমা খাতুন (৩০) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামী রবিউল ইসলাম অসুস্থ। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে চার জনের সংসারে আয়ের কোনো উৎস নেই। আমি সবজি মাঠে দিন-হাজিরার কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। যদি কৃষিকাজ করার সুযোগ না থাকত তাহলে স্বামী-সংসার নিয়ে আমাকে পথে বসতে হতো। আড়কান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী কুলসুম বেগম শিম চাষের জন্য মাঠ প্রস্তুতির কাজ করতে করতে বলেন, শিম চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে শিম তোলা পর্যন্ত সব কাজই আমি করে থাকি। আমার স্বামীও একজন দিনমজুর। একজনের টাকা সংসারে খরচ করি। আরেক জনের টাকা সঞ্চয় করি। সঞ্চিত টাকা দিয়ে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মূলাডুলি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আফসার আলী জানান, এই ইউনিয়নের মোট জমির পরিমাণ ১০ হাজার একর এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজার একরেই কৃষি আবাদ হয়। আর এখানকার কৃষিতে নারীদের সম্পৃক্ততা রীতিমতো তাক লাগানোর মতো।
মুলাডুলির কৃষি আবাদে নারীদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে মুলাডুলি ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্য রওশনারা বেগম বলেন, এই অঞ্চলের কৃষিতে নারী শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার ফলে শ্রমজীবী নারীদের জীবনমানের অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রুমানা খাতুন বলেন, প্রায় ১৫ হাজারও বেশি নারী শ্রমিক সরাসরি মাঠে কাজ করে নিজেরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এই এলাকার কৃষি উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন যা কৃষি ্ন্নয়নের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত বটে।
No comments