হুমায়ূন আহমেদের বিজ্ঞান কল্পকাহিনি
বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনি রচনা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ, বইটির নাম তোমাদের জন্য ভালবাসা। এটি তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞানে প্রভাষক থাকাকালীন লিখেছেন। এই বইয়ের মাধ্যমেই তাঁর প্রথম কল্প-বৈজ্ঞানিক চরিত্র ফিহার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ফিহা মহা আঙ্কিক ছিলেন।
২৬ বছর বয়সের ফিহা ত্রিমাত্রিক সময় সমীকরণের প্রথম সমাধানকারী। তোমাদের জন্য ভালোবাসা রচনার শেষে হুমায়ূন আহমেদ সংযুক্ত করেন বিশেষ একটি নির্ঘণ্ট। কল্পকাহিনিতে ব্যবহার করা কঠিন সব বিজ্ঞান পরিশব্দের সহজ ব্যাখ্যা ছিল এই নির্ঘণ্টে। এরপর তিনি একে একে রচনা করে গেছেন গোটা বিশেক বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো: অনন্ত নক্ষত্র বীথি (১৯৮৮), ইরিনা (১৯৮৮), কুহক (১৯৯১), ইমা (১৯৯৮), ওমেগা পয়েন্ট (২০০০), শূন্য (১৯৯৪), নিষাদ (১৯৮৯), মানবী (২০০৯) প্রভৃতি। সাধারণ পাঠকদের জন্য বিজ্ঞানের নানা বিষয়, রহস্য উপন্যাস আকারে রচনা করেন হুমায়ূন আহমেদ। বিভিন্ন বইয়ের উৎসর্গপত্রে তার ভূমিকাই প্রকাশ তাঁর সহজ ভাষা বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখার কারণ। ‘ওমেগা পয়েন্ট নিয়ে গুছিয়ে একটা গল্প দাঁড় করানোর ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। বিষয়টা শুধু জটিল বললে ভুল বলা হবে—বেড়াছেড়া লেগে যাওয়ার মতো জটিল। শেষ পর্যন্ত জটিল চিন্তাগুলো লিখে ফেলতে পেরেছি এটাই বড় কথা। গল্প বলার সময় বিজ্ঞানের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি। পাঠকের কাছে অনেক তথ্যই উদ্ভট লাগতে পারে। তারা ভুরু কুঁচকে ফেলতেও পারেন। ভুরু কুঁচকানো পাঠকদের সবিনয়ে জানাচ্ছি, বিজ্ঞানে উদ্ভট বলে কিছু নেই। বিজ্ঞান রূপকথার জগতের চেয়েও অনেক রহস্যময়।’ (হুমায়ূন আহমেদ, ওমেগা পয়েন্ট বইয়ের উৎসর্গপত্রে, ০৫.০২.২০০০ সালে)। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর একটি চরিত্র হলো মিসির আলি। এই চরিত্রটি মনস্তাত্ত্বিক, বিজ্ঞাননিভর্র এবং যুক্তিনির্ভর আচরণ করে। হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, ‘(মিসির আলি) একজন মানুষ, যাঁর কাছে প্রকৃতির নিয়মশৃঙ্খলা বড় কথা, রহস্যময়ের অস্পষ্ট জগৎ যিনি স্বীকার করেন না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিসির আলি অনুসরণ করেন বিশুদ্ধ যুক্তি। এই যুক্তিই মিসির আলিকে রহস্যময় জগতের প্রকৃত স্বরূপ উদ্ঘাটনে সাহায্য করে। মিসির আলিকে কেন্দ্র করে হুমায়ূন আহমেদের রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: দেবী, নিষাদ, বিপদ, কহেন কবি কালিদাস, তন্দ্রাবিলাস, অনীশ প্রভৃতি।
জাহিদ হোসাইন
জাহিদ হোসাইন
No comments