বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পে হুমায়ূন আহমেদ
বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় অবদান রেখেছেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। উপন্যাস লিখেছেন, সিনেমা-নাটক বানিয়েছেন, গান রচনা করেছেন, এমনকি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ছবি আঁকাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু বোধকরি তার সবচেয়ে বড় অবদান অনেকটা একহাতে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে নতুন প্রাণ দেয়া। ভারতীয় বইয়ের দখল থেকে বাংলাদেশের বইয়ের বাজারকে উদ্ধার করেন তিনি।
প্রকাশকদের আশঙ্কা, এখন তার মৃত্যুতে বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্প একটি বড় ধাক্কা খাবে। বছরের পর বছর ধরে পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।
তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলতো প্রতিবছর ঢাকায়, একুশে বইমেলায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পাঠক তার বই কিনতেন, অটোগ্রাফ নিতেন।
বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান জানান, বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের কত বই বিক্রি হতো তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
তবে তার ধারণা, গত বছরে বইমেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে এবং এর অর্ধেক হুমায়ূন আহমেদের।
তিনি বলেন, “কখনো কখনো দেখা গেছে যে, একটি বইয়ের সব কপি তিন বা চার দিনে বিক্রি হয়ে গেছে এবং মেলার মধ্যেই তিন-চার বার ওই বই ছাপতে হয়েছে।”
“তার পেছনে বিশেষ করে তরুণরা এমনভাবে ছুটতো যে অনেক সময় তা আমাদের জন্যে আইন-শৃঙ্খলার বিষয় হয়ে দাঁড়াতো। আশেপাশের স্টলের বিক্রেতারা বলতো, তারা অন্য বই বিক্রি করতে পারছে না।”
শামসুজ্জামান খান বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় ও মৌলিক অবদান ছিল বাংলাদেশী সাহিত্যের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি ফেরানো এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে প্রাণ দেয়া।”
তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে এসে প্রকাশকরা তার বই প্রকাশের জন্যে হন্যে হয়ে ছুটতেন।”
তিনি জানান, কোনো লেখক তিন বছর আগে অগ্রিম টাকা পেয়েছেন, এমনটি দেখা যায় না। হুমায়ূন আহমেদ তা পেতেন এবং সেই সেই টাকার অংকও ছিল বিপুল। পুরো বিষয়টি আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলেছিল।
“আগে কলকাতার বইয়ের জন্যে প্রকাশকরা হা-পিত্যেস করে মরতেন। পরে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের জন্যে প্রকাশকরা তার বাড়িতে গিয়ে হত্যা দিয়ে পড়ে থাকতেন।”
ভারতীয় বইয়ের বাজার থেকে বাংলাদেশী লেখকদের বইয়ের বাজার বানানো-এটি হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় অবদান বলে মানছেন এমনকি অন্য লেখকরাও।
লেখক ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক বলছেন, ঔপনিবেশিক দাস্য মনোভাব থেকে কলকাতার বইয়ের প্রতি অনুরক্ত বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে উদ্ধার করেন হুমায়ূন আহমেদ, অনেকটা এককভাবে, তার যাদুকরী লেখার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণদের ধ্যান-ধারণা, জীবন-যাপন, সংলাপ উচ্চারণ, তাদের মানবিক সম্পর্ক নির্ধারণ, এগুলোকে হুমায়ূন আহমেদ তার লেখায় তুলে এনেছিলেন, যে কারণে তরুণরা তার লেখার প্রতি সম্মোহিত হয়ে আকৃষ্ট হয়।”
“ফলে তার বইয়ের বিক্রি বাড়ে, আর এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তরুণদের মধ্যে যে বাংলাদেশেও লেখক আছে, যারা আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক এবং আমাদেরই কথা তারা বলেন।”
সময় প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ৪০টি বই প্রকাশ করেছেন। তার ধারণা, বছরে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের আড়াই লাখ কপি বিক্রি হয় এবং এই সংখ্যা বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া মোট বইয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, “খুব সহজে অবশ্য বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প দাঁড়ায়নি, বরং ১৯৮০’র দশকে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বইমেলা আয়োজন ক'রে হুমায়ূন আহমেদ এটা করেছিলেন।”
“বাংলাদেশের বইয়ের পাঠক তৈরি করা একটি আন্দোলনের মতোই ছিল।”
ফরিদ আহমেদের মতে, হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশ কেবল আর্থিক নিশ্চয়তাই দিতো না, বরং তার একটি বই প্রকাশ করলে একজন প্রকাশকের আরো পাঁচটি বই প্রকাশ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তৈরি হতো।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদের অবদান সবচেয়ে বেশি।”
বাংলা একাডেমী মহাপরিচালকের ধারণা, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার বইয়ের কাটতি আরো বাড়বে, ফলে প্রকাশনা শিল্পের সুবিধা হবে।
তবে হুমায়ূন আহমেদের নতুন বইবিহীন ২০১৩ সালের বইমেলা কতটা আকর্ষণ ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ। সূত্র: বিবিসি
তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলতো প্রতিবছর ঢাকায়, একুশে বইমেলায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পাঠক তার বই কিনতেন, অটোগ্রাফ নিতেন।
বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান জানান, বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের কত বই বিক্রি হতো তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
তবে তার ধারণা, গত বছরে বইমেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে এবং এর অর্ধেক হুমায়ূন আহমেদের।
তিনি বলেন, “কখনো কখনো দেখা গেছে যে, একটি বইয়ের সব কপি তিন বা চার দিনে বিক্রি হয়ে গেছে এবং মেলার মধ্যেই তিন-চার বার ওই বই ছাপতে হয়েছে।”
“তার পেছনে বিশেষ করে তরুণরা এমনভাবে ছুটতো যে অনেক সময় তা আমাদের জন্যে আইন-শৃঙ্খলার বিষয় হয়ে দাঁড়াতো। আশেপাশের স্টলের বিক্রেতারা বলতো, তারা অন্য বই বিক্রি করতে পারছে না।”
শামসুজ্জামান খান বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় ও মৌলিক অবদান ছিল বাংলাদেশী সাহিত্যের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি ফেরানো এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে প্রাণ দেয়া।”
তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে এসে প্রকাশকরা তার বই প্রকাশের জন্যে হন্যে হয়ে ছুটতেন।”
তিনি জানান, কোনো লেখক তিন বছর আগে অগ্রিম টাকা পেয়েছেন, এমনটি দেখা যায় না। হুমায়ূন আহমেদ তা পেতেন এবং সেই সেই টাকার অংকও ছিল বিপুল। পুরো বিষয়টি আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলেছিল।
“আগে কলকাতার বইয়ের জন্যে প্রকাশকরা হা-পিত্যেস করে মরতেন। পরে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের জন্যে প্রকাশকরা তার বাড়িতে গিয়ে হত্যা দিয়ে পড়ে থাকতেন।”
ভারতীয় বইয়ের বাজার থেকে বাংলাদেশী লেখকদের বইয়ের বাজার বানানো-এটি হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় অবদান বলে মানছেন এমনকি অন্য লেখকরাও।
লেখক ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক বলছেন, ঔপনিবেশিক দাস্য মনোভাব থেকে কলকাতার বইয়ের প্রতি অনুরক্ত বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে উদ্ধার করেন হুমায়ূন আহমেদ, অনেকটা এককভাবে, তার যাদুকরী লেখার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণদের ধ্যান-ধারণা, জীবন-যাপন, সংলাপ উচ্চারণ, তাদের মানবিক সম্পর্ক নির্ধারণ, এগুলোকে হুমায়ূন আহমেদ তার লেখায় তুলে এনেছিলেন, যে কারণে তরুণরা তার লেখার প্রতি সম্মোহিত হয়ে আকৃষ্ট হয়।”
“ফলে তার বইয়ের বিক্রি বাড়ে, আর এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তরুণদের মধ্যে যে বাংলাদেশেও লেখক আছে, যারা আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক এবং আমাদেরই কথা তারা বলেন।”
সময় প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ৪০টি বই প্রকাশ করেছেন। তার ধারণা, বছরে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের আড়াই লাখ কপি বিক্রি হয় এবং এই সংখ্যা বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া মোট বইয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, “খুব সহজে অবশ্য বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প দাঁড়ায়নি, বরং ১৯৮০’র দশকে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বইমেলা আয়োজন ক'রে হুমায়ূন আহমেদ এটা করেছিলেন।”
“বাংলাদেশের বইয়ের পাঠক তৈরি করা একটি আন্দোলনের মতোই ছিল।”
ফরিদ আহমেদের মতে, হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশ কেবল আর্থিক নিশ্চয়তাই দিতো না, বরং তার একটি বই প্রকাশ করলে একজন প্রকাশকের আরো পাঁচটি বই প্রকাশ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তৈরি হতো।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদের অবদান সবচেয়ে বেশি।”
বাংলা একাডেমী মহাপরিচালকের ধারণা, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার বইয়ের কাটতি আরো বাড়বে, ফলে প্রকাশনা শিল্পের সুবিধা হবে।
তবে হুমায়ূন আহমেদের নতুন বইবিহীন ২০১৩ সালের বইমেলা কতটা আকর্ষণ ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ। সূত্র: বিবিসি
No comments