বুড়িগঙ্গায় ফের অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন, ভাঙনের ঝুঁকিতে জনপদ

কিছুদিন বন্ধ থাকার পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের বুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ফের বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। ভরা বর্ষার এই মৌসুমে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর দুই তীরের ৪০টি ইটভাটা, দুটি পেট্রল পাম্প, দুটি বাজার, দুটি খেয়াঘাটসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা


দেখা দিয়েছে। বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বক্তাবলী খেয়াঘাটের (প্রস্তাবিত ফেরিঘাট) সামনে বুড়িগঙ্গা নদীতে ছয়টি ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন বাল্কহেডে (বালু বহনকারী নৌযান) সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, গত ২১ জুন কোস্টগার্ডের বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী পাগলা ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে এখানে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ দিন আগে আবারও বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেডে বালু সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে গত মাসে সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের ইটভাটার একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কোস্টগার্ডের অভিযানের ফলে সাময়িক বন্ধ থাকার পর বালু উত্তোলন ফের শুরু হওয়ায় নদীগর্ভে বিলীনের হুমকিতে আছে নদীর পূর্ব পাশের এসএসবি ব্রিকস, এসইউএ, নবীন ব্রিকস, জেবিসি ব্রিকস, এইচএবি ব্রিকস, এবিএস ব্রিকস, পশ্চিম তীরের মহিউদ্দিন ব্রিকস, সাফায়েত উল্লাহ ব্রিকসসহ দুটি পেট্রল পাম্প। নবীন ব্রিকসের মালিক আফজাল হোসেন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তাঁর ও আশপাশের ইটভাটাগুলো যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এনায়েতনগর ইউপি চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বলেন, গত মাসে তাঁর ইটভাটার একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে তাঁর ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি ফতুল্লা থানায় মামলা করার পর বালু উত্তোলনকারীরা তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা দেননি।
বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় বুড়িগঙ্গার দুই তীরের জনপদ হুমকির মুখে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য আমি প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি।
স্থানীয় সাংসদ (নারায়ণগঞ্জ-৪) সারাহ্ বেগম কবরী বলেন, ‘প্রশাসন কী শর্তে কাদের বালু উত্তোলনের অনুমতি দিল, তা তদন্ত করা প্রয়োজন। ফতুল্লায় একশ্রেণীর মানুষ প্রশাসনের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহায়তায় জনস্বার্থবিরোধী কাজ করে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এসব অপকর্মে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন পনির বলেন, জেলা প্রশাসন রাজস্ব আয়ের জন্য বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। ইজারাদার নদীর কোন অংশ থেকে বালু উত্তোলন করবেন, তা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভূমিবিষয়ক সহকারী কমিশনারকে। তবে ভরা বর্ষার কারণে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ইজারাদার সঠিক স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছেন কি না, খতিয়ে দেখা হবে।
ইউএনও জাহিদ হোসেন স্বীকার করেন, বুড়িগঙ্গার বালু উত্তোলনে কাউকে ইজারা না দেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাবেক এক সাংসদের শ্যালক এই বালু উত্তোলনের ব্যবসার মূল হোতা। বুড়িগঙ্গা থেকে বালু উত্তোলনে তাঁর প্রতিদিনের আয় তিন লাখ টাকা। সাবেক সাংসদের শ্যালকের পক্ষে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মুহাম্মদ শরীফুল হক ওরফে বুইট্টা শরীফ এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।
টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে বুইট্টা শরীফ দাবি করেন, ১৪১৯ বাংলা সনের জন্য (বৈশাখ-চৈত্র) তাঁরা ২৪ লাখ টাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা এনেছেন। তিনি বলেন, বৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, কিছুদিন বন্ধ থাকার পর বুড়িগঙ্গায় আবারও বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। ইজারাদার থানায় ইজারার কাগজ দিয়ে গেছেন।

No comments

Powered by Blogger.