নারী-জনপ্রতিনিধিরা উপেক্ষা বা উপহাসের কেউ নন-কোণঠাসা, তবু প্রতিবাদী

জনগণ তাঁদের ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায়িত করলেও পুরুষ সহযোগীরা তাঁদের ‘অক্ষম’ করে রেখেছেন। এমনই একজন নারী-জনপ্রতিনিধি রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছী ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হয়েছেন। এখন প্রতিবাদ করায় শিকার হচ্ছেন উপহাসের।


সরকার নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে সব স্তরে নারী-জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের বন্দোবস্ত রেখেছে, কিন্তু বাস্তবে সত্যিকার নারী-প্রতিনিধিরা জনগণের কাজ করার সুযোগ কতটা পান, সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।
কোহিনুর বেগমের অভিযোগ, দুই বছর ধরে তাঁকে ভিজিএফ, ভিজিডি, শীতবস্ত্র বিতরণের মতো কোনো জনস্বার্থমূলক কাজে রাখা হয় না। তাঁর তালিকার দুস্থ মানুষের নাম কেটে দিয়ে ধনী পরিবারের সদস্যকে ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়। তাঁর প্রকল্পের বরাদ্দ করা টাকা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ২০ হাজার নিয়ে নেন। এভাবেই কাজ করে চলেছেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নির্বাচিত নারী-প্রতিনিধি। জনগণের ভোটে তিনি নির্বাচিত হলেও ‘পুরুষ’ চেয়ারম্যানের কারসাজিতে তিনি অক্ষম হয়ে পড়েছেন।
এই অধিকারসচেতন নারী তবু থেমে থাকেননি। বাধার মুখেও রিকশায় মাইক লাগিয়ে এলাকার জনগণের কাছে ফরিয়াদ করেছেন, জনসভা ডেকেছেন। তখন ব্যবহূত হয় নারীর বিরুদ্ধে চিরাচরিত সেই অস্ত্র: কুত্সা। গত রোববারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ-বিষয়ক সংবাদে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গরিব মানুষ। অভাবের তাড়নায় কখন কী করে, ঠিক নেই।’ এভাবে সত্, গরিব ও সচেতন ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগমকে সামাজিকভাবে হেয় করারও চেষ্টা চলে।
কোহিনুর বেগমের বিড়ম্বনার এ গল্পের পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়নের পথের সব বাধা: পুরুষ সহকর্মীদের অসহযোগিতা, অসহিষ্ণুতা ও কুত্সা। নাম না-জানা অজস্র নারী ইউপি সদস্যও এমন বাধার মুখে পড়ে থাকেন। তাঁদের হয়তো ‘ক্ষমতাবান’ চেয়ারম্যানসহ পুরুষ-সহকর্মীদের কাজেকর্মে সায় দিয়ে যেতে হয় অথবা কোহিনুর বেগমের মতো হতে হয় উপেক্ষা ও উপহাসের শিকার। নারী-পুরুষ বৈষম্য আমাদের সমাজের বহু পুরোনো ব্যাধি। নির্বাচিত নারী-জনপ্রতিনিধিরাও এর শিকার হচ্ছেন—এ খবর উদ্বেগজনক। এ প্রবণতা তৃণমূল গণতন্ত্র বিকাশে ক্ষতিকর। কেবল কোহিনুর বেগমের বিষয়টিই নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং গণমাধ্যমের উচিত, সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত নারী-জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনের বাধা দূর করা। পুরুষ-জনপ্রতিনিধিদেরও বুঝতে হবে, পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে নারীর সঙ্গে সহযোগিতাই গণতন্ত্র, সুশাসন ও শান্তির অন্যতম শর্ত।

No comments

Powered by Blogger.