সম্পর্কের কালো মেঘ কাটার আশা by বি. রমণ
পাকিস্তানের তরুণ ও প্রাগ্রসর চিন্তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানী খারের ২৬-২৭ জুলাই ভারত সফর দু'দেশের সম্পর্কে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। হিনা তার পূর্বসূরি শাহ মেহমুদ কোরেশীর সঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণার গত বছর জুলাইয়ে সর্বশেষ বৈঠকের পর দুু'দেশের সংলাপ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে নয়াদিলি্লতে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শাহ মেহমুদ কোরেশীর নেতিবাচক ও কূটনীতিবিরুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তার সঙ্গে কৃষ্ণার শেষ বৈঠকটি প্রায় কূটনৈতিক বিপর্যয়ের পর্যায়ে পেঁৗছেছিল। কৃষ্ণার সঙ্গে বৈঠকের পর কোরেশী সাংবাদিকদের সামনে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন এবং কাশ্মীরসহ গোটা সংলাপ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির কঠোর সমালোচনা করেন। কোরেশীর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দু'দেশের সংলাপ প্রক্রিয়ায় যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, সেটা গত ফেব্রুয়ারিতে থিম্ফুতে সার্ক সম্মেলনের প্রাক্কালে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং এরপর মার্চের শেষ সপ্তাহে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালে মোহালিতে ভারত-পাকিস্তান খেলার সময় মনমোহন সিং ও ইউসুফ রাজা গিলানির মধ্যকার কথাবার্তায় কেটে যায় এবং সংলাপ প্রক্রিয়া পুনরায় সঠিক পথে এগোনোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
হিনা খার প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির পছন্দের। প্রথমে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং কোরেশী বিদায় নেওয়ার পর ভারত সফরের ঠিক আগে আগে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। হিনা প্রধানমন্ত্রী গিলানির মতো একজন মুলতানি (সেরাইকি)। সংলাপ প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি নতুন মানসিকতা গড়ে তোলা এবং নতুন ছাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে যেটা সংলাপের ক্ষেত্রে বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে, সেই বিবাদকে দূরে সরিয়ে পাকিস্তানি আলোচকরা যাতে তাদের প্রতিপক্ষ ভারতীয়দের সঙ্গে আলোচনার সময় শালীনতা বজায় রাখেন, সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি।
যেসব বিষয় দুটি দেশের সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছে, যেমন_ জম্মু ও কাশ্মীর ইস্যু, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, সিয়াচেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, পানি সম্পর্কিত মতপার্থক্য_ তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের সময়ও অতীতের মতো একই অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। তবে তিনি দায়িত্ব নিয়েই যেটা করেছেন, সেটা হলো তার পূর্বসূরির সময় দু'দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যেটার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে, সেই শালীনতাকে দু'দেশের আলোচনার সময় পাকিস্তানি আলোচকদের আচরণে যাতে প্রতিফলিত হয়, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তার তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রজন্মের নীতিনির্ধারকদের নতুন মানসিকতা সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই গভীরভাবে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে থাকবে। এ দুই সংস্থার মানসিকতা পরিবর্তনের ওপরই নির্ভর করছে হিনা রব্বানী তার উদ্দেশ্যে সফল হবেন, কি ব্যর্থ হবেন। তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা ও ভারতের সঙ্গে সংলাপ প্রক্রিয়ার দায়িত্ব তার হাতে অর্পণ সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত। এর মধ্যে আসিফ আলী জারদারির ভারতের ব্যাপারে পাকিস্তানের নীতিনির্ধারণের বিষয়টা সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বেসামরিক কর্তৃত্বে নিয়ে আসার বিষয়টিও সূক্ষ্মভাবে জড়িয়ে আছে।
জারদারি তার উদ্দেশ্যে সফল হবেন কি-না তা নির্ভর করছে হিনা রব্বানী সামরিক সদর দফতরে কোনো অযাচিত ভয় সৃষ্টি না করে ধীর অথচ অবিচলভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে গতিবেগ আনতে পারেন কি-না তার ওপর। কেবল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মানসিকতা পরিবর্তন করলেই চলবে না, সামরিক বাহিনী ও আইএসআইর মানসিকতায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। সামরিক বাহিনী ও আইএসআইর মানসিকতায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি অবশ্য নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানীর ওপর নির্ভর করবে না। ভারতের ব্যাপারে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার_ এ উপলব্ধি সামরিক বাহিনীর নিজেদের মধ্য থেকেই আসতে হবে। এ বছরের শুরু থেকেই মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অবমাননাকর অভিজ্ঞতা লাভের পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এখন যথেষ্ট সংযত। সেই থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও ভারতের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সংঘাতের অতীত নীতি সম্পর্কে আত্মবীক্ষণ চলছে। এ আত্মবীক্ষণ যদি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে মানসিকতা পরিবর্তনের উপলব্ধি সৃষ্টি করে, তাহলে হিনা খার ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা জাগিয়েছেন, তা শক্তি ও গতি পাবে।
বি. রমণ : ভারতের সাবেক অতিরিক্ত কেবিনেট সচিব ও চেন্নাইয়ে ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল স্টাডিজের পরিচালক। আউটলুক থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
হিনা খার প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির পছন্দের। প্রথমে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং কোরেশী বিদায় নেওয়ার পর ভারত সফরের ঠিক আগে আগে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। হিনা প্রধানমন্ত্রী গিলানির মতো একজন মুলতানি (সেরাইকি)। সংলাপ প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি নতুন মানসিকতা গড়ে তোলা এবং নতুন ছাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে যেটা সংলাপের ক্ষেত্রে বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে, সেই বিবাদকে দূরে সরিয়ে পাকিস্তানি আলোচকরা যাতে তাদের প্রতিপক্ষ ভারতীয়দের সঙ্গে আলোচনার সময় শালীনতা বজায় রাখেন, সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি।
যেসব বিষয় দুটি দেশের সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছে, যেমন_ জম্মু ও কাশ্মীর ইস্যু, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, সিয়াচেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, পানি সম্পর্কিত মতপার্থক্য_ তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের সময়ও অতীতের মতো একই অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। তবে তিনি দায়িত্ব নিয়েই যেটা করেছেন, সেটা হলো তার পূর্বসূরির সময় দু'দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যেটার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে, সেই শালীনতাকে দু'দেশের আলোচনার সময় পাকিস্তানি আলোচকদের আচরণে যাতে প্রতিফলিত হয়, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তার তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রজন্মের নীতিনির্ধারকদের নতুন মানসিকতা সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই গভীরভাবে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে থাকবে। এ দুই সংস্থার মানসিকতা পরিবর্তনের ওপরই নির্ভর করছে হিনা রব্বানী তার উদ্দেশ্যে সফল হবেন, কি ব্যর্থ হবেন। তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা ও ভারতের সঙ্গে সংলাপ প্রক্রিয়ার দায়িত্ব তার হাতে অর্পণ সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত। এর মধ্যে আসিফ আলী জারদারির ভারতের ব্যাপারে পাকিস্তানের নীতিনির্ধারণের বিষয়টা সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বেসামরিক কর্তৃত্বে নিয়ে আসার বিষয়টিও সূক্ষ্মভাবে জড়িয়ে আছে।
জারদারি তার উদ্দেশ্যে সফল হবেন কি-না তা নির্ভর করছে হিনা রব্বানী সামরিক সদর দফতরে কোনো অযাচিত ভয় সৃষ্টি না করে ধীর অথচ অবিচলভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে গতিবেগ আনতে পারেন কি-না তার ওপর। কেবল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মানসিকতা পরিবর্তন করলেই চলবে না, সামরিক বাহিনী ও আইএসআইর মানসিকতায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। সামরিক বাহিনী ও আইএসআইর মানসিকতায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি অবশ্য নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানীর ওপর নির্ভর করবে না। ভারতের ব্যাপারে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার_ এ উপলব্ধি সামরিক বাহিনীর নিজেদের মধ্য থেকেই আসতে হবে। এ বছরের শুরু থেকেই মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অবমাননাকর অভিজ্ঞতা লাভের পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এখন যথেষ্ট সংযত। সেই থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও ভারতের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সংঘাতের অতীত নীতি সম্পর্কে আত্মবীক্ষণ চলছে। এ আত্মবীক্ষণ যদি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে মানসিকতা পরিবর্তনের উপলব্ধি সৃষ্টি করে, তাহলে হিনা খার ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা জাগিয়েছেন, তা শক্তি ও গতি পাবে।
বি. রমণ : ভারতের সাবেক অতিরিক্ত কেবিনেট সচিব ও চেন্নাইয়ে ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল স্টাডিজের পরিচালক। আউটলুক থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments