সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের টনক নড়ছে কি?-রক্তপাতের ধারার প্রত্যাবর্তন

শিক্ষাঙ্গনে দখলদারি ও সন্ত্রাসের যে কালো মেঘ গত এক বছর ধরে ছাড়া-ছাড়াভাবে বিরাজ করছিল, এখন তা বজ্রপাতের মতো নেমে এল। আবারও সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ঝরে গেল তাজা এক ছাত্রের প্রাণ। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রমৈত্রীর এক নেতা নিহত হয়েছেন।


আশা করা হয়েছিল, নতুন সরকারের দিনবদলের প্রত্যয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কলঙ্কিত ধারার অবসান হবে, কিন্তু সেই আশা মনে হয় দিনকে দিন যেন মরীচিকার মতো অধরাই হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি গত বছর জুড়েই থেমে থেমে ঘটতে দেখা গেছে। নতুন বছরের শুরুতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে কয়েকজন শিক্ষককে প্রহূতও হতে দেখা গেছে। আর এখন ঘটল ছাত্রের হাতে ছাত্র খুনের ঘটনা। এ রকম ধারা চলতে থাকলে আশঙ্কা জাগে, আমরা কি তবে আবার দখলদারি আর সন্ত্রাসের অন্ধকারেই ফিরে যাচ্ছি?
ঘটনার অভিঘাতে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বন্ধ হয়ে গেছে, শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসেছে পুলিশি প্রহরা। অন্যদিকে ছাত্রলীগ তাদের সাত সদস্যকে এর জন্য বহিষ্কারও করেছে। কিন্তু প্রকৃত শাস্তি হতে হবে আদালতে, সে ব্যাপারে যেন কোনো ছাড় না দেওয়া হয়।
ঘটনাটি মর্মান্তিক, অগ্রহণযোগ্য এবং ক্ষমতাবলে ধরাকে সরা জ্ঞান করার নজির। বলা বাহুল্য, এই ক্ষমতা পেশিশক্তির এবং এর উত্স সরকারে আসীন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাঙ্গনের প্রশাসন এদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, এদের ভয়ে ভীত থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা এদের বেয়াড়াপনাকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মদদ দিয়ে থাকে। হত্যা, সন্ত্রাস আর নৈরাজ্য এসবেরই ফল।
গত কয়েক দশকে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের সঙ্গে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে লাগাতারভাবে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। এদের প্রধান কাজ যদি সন্ত্রাস ও দখলদারিই হয়ে যায়, তবে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের কাছে এদের কোনো প্রয়োজন আছে কি না, ভেবে দেখা বাঞ্ছনীয়। সমস্যার গোড়া যেখানে, হাত দিতে হবে সেখানেই। সবার আগে পুলিশ ও শিক্ষাঙ্গনের প্রশাসনকে সন্ত্রাসীদের দমনের কাজে নিরপেক্ষ ও দৃঢ় হতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি এই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নিকৃষ্ট প্রকৃতির সন্ত্রাস। সরকার যদি এর সঙ্গে আপস করে, তবে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির যে ধ্বজা তারা তুলে ধরতে চায়, তার সঙ্গেই প্রতারণা হবে। অতীতে মানুষ এ রকম আচরণ ভালোভাবে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।

No comments

Powered by Blogger.