রমজানের বরকত লাভের উপায় by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার থেকে রোজা শুরু হবে। সর্বত্রই চলছে মাহে রমজানকে বরণ করার প্রস্তুতি। রমজান মাস বছরের বাকি এগারো মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'রমজান মাসই হলো সে মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত।'


-সূরা বাকারা : ১৮৫
পবিত্র হাদিস শরিফে এসেছে, 'যখন রমজানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলবদ্ধ করা হয়।' -বুখারি
অন্য হাদিসে এসেছে, 'আল্লাহতায়ালা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।'- মুসনাদে আহমদ
উপরোলি্লখিত আয়াত ও হাদিস এ কথাই প্রমাণ করে যে, এ মাস হচ্ছে হেদায়েত লাভের মাস, আল্লাহতায়ালার রহমত লাভের মাস এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত অর্জনের মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা এবং তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির সনদ লাভে সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য। এ মাসের রোজাকে আল্লাহতায়ালা ফরজ করেছেন। তাই প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর জন্য রোজা রাখা অপরিহার্য। বলাবাহুল্য যে, ফরজ ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহতায়ালার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করে। রমজানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে তারাবির নামাজ। রমজানের বরকতময় রজনীতে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া উচিত। রমজান মাস হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। তাই কোরআন মজিদ শ্রবণের জন্য এবং এ পুণ্যময় রজনীতে আল্লাহর সানি্নধ্যে দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য তারাবি নামাজের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া কর্তব্য। অন্য সময়ও ব্যক্তিগতভাবে অধিক পরিমাণে কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করা উচিত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে_ তাহাজ্জুদ নামাজ। এ মাসে যেহেতু সেহরি খাওয়ার সুবাদে সুবহে সাদিকের আগেই সবাইকে উঠতে হয়, তাই এ সুযোগে তাহাজ্জুদের অভ্যাস করে নেওয়া সহজ। হাদিস শরিফে তাহাজ্জুদের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তদ্রূপ সাধ্যমতো দান-সদকা করা উচিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে অনেক বেশি দান-সদকা করতেন। এসব নেক আমলের পাশাপাশি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করাও অপরিহার্য। রমজান মাস হচ্ছে তাকওয়া ও পরহেজগারী অর্জনের মাস। আল্লাহতায়ালা রোজাকে ফরজ করেছেন তাকওয়া অর্জনের জন্য। হাদিস শরিফ থেকে জানা যায় যে, গুনাহ থেকে সর্বতোভাবে বেঁচে থাকা ছাড়া রোজা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই রোজাকে নিখুঁতভাবে আদায়ের উদ্দেশ্যে মুমিন যখন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে তখন আল্লাহতায়ালা নিজ অনুগ্রহে তাকে তাকওয়া ও পরহেজগারীর শক্তি দান করেন। এ জন্য সব গুনাহ থেকে, বিশেষ করে গিবত, শেকায়েত, কুদৃষ্টি, কুচিন্তা, হারাম পানাহার ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত কর্তব্য।
আরেকটি কথা_ মাহে রমজানের আগমনে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে রোজাদারদের ওপর মেঘবর্ষণের মতো রহমত নাজিল হতে থাকে এবং প্রকৃত রোজাদারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কয়েকটি পুরস্কার রয়েছে। বেহেশতের আটটি দরজা। এর মধ্যে একটির নাম রাইয়ান (তৃপ্তি)। এ দরজা দিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য লাভ করবেন শুধু রোজাদাররা। প্রত্যেক রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে_ একটি ইফতারের সময় এবং অপরটি হলো আল্লাহপাকের দিদার লাভ। রোজাদারের আগের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। রোজাদারের নিদ্রাও ইবাদত এবং তার চুপ থাকা তসবিহস্বরূপ গণ্য হবে।
হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখে আমাদের নসিহত করেছেন যে, তোমাদের মাঝে মোবারক মাস রমজান ছায়াস্বরূপ আসছে, যার মধ্যে লাইলাতুল কদর নামে একটি রাত আছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম। আল্লাহতাআলা তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন এবং রাত্রি জাগরণ অর্থাৎ তারাবি পড়াকে তোমাদের জন্য পুণ্যের কাজ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে নফল আদায় করল সে যেন রমজানের বাইরে একটি ফরজ আদায় করল; যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, এটা সবরের মাস এবং সবরের বিনিময়ে আল্লাহপাক জান্নাত রেখেছেন। এ মাসে মুমিন বান্দাদের রিজিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।
আমরা প্রতি বছরই অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে রোজা পালন করে থাকি। অর্থাৎ যথারীতি পানাহার ও জৈবিক লালসা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকি। কিন্তু সর্বক্ষণের জন্য যা হারাম ও অবৈধ, যার পঙ্কিলতা থেকে মুক্তিদান করাই রোজার এ মহান প্রশিক্ষণ, তা আমরা মোটেই পরিত্যাগ করতে পারি না। রোজার প্রকৃত উপকারিতা পেতে হলে মিথ্যা বলা, গিবত, কুদৃষ্টি, হারাম উপার্জন, অশ্লীল গানবাজনাসহ যাবতীয় গুনাহ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে, আর এটাই প্রকৃত রোজা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত রোজা পালানে তাওফিক দান করুন। আমীন।
muftianaet@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.