মন্ত্রীর কথায় আশ্বাস আছে, প্রয়োজন প্রতিকার-ভূমিদস্যুতার প্রতাপ

ভূমিদস্যুতা যত কুখ্যাত, ভূমিদস্যুরা ততটা চিহ্নিত নয়। বরং তাদের কাউকে কাউকে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির অধিকারী হতে দেখা যায়। অনেক সময় সেই প্রতিপত্তির উত্তাপে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত তপ্ত হতে দেখা যায়। এই গোপন তথ্যই সাহসের সঙ্গে ফাঁস করে দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী।


সম্প্রতি আবাসন ব্যবসায়ীদের সংস্থা রিহ্যাবের আবাসন মেলা উদ্বোধনের সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে বসি, তখন মনে হয়েছিল, আগ্নেয়গিরির লাভার মধ্যে বসে আছি।’ (বুধবার, প্রথম আলো)। তিনি ভূমিদস্যুদের রিহ্যাব থেকে বের করে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সত্য ভাষণ আমাদের আশ্বস্ত ও আপ্লুত করে। তবে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি এ ব্যাপারে তাঁর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি যথাযথভাবে পালিত হওয়া প্রয়োজন। তার জন্য খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা-জলাশয়, খাসজমি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ভূমি দখলের হোতাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। আমরা মন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হয়েছি, কিন্তু কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণিত না হলে মানুষের মধ্যে ভরসা জন্মাবে না।
বাংলাদেশের আবাসনশিল্পের বাড়বৃদ্ধি ও ভূমিদস্যুতা একটা পর্যায়ে হাত-ধরাধরি করেই বিকশিত হয়েছে। গোড়া থেকে এ পর্যন্ত এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কিছু প্রতিষ্ঠান ভূমি নিয়ে নয়ছয় করা শুরু করে বলে দেখা গেছে। এমনকি এরা এমনভাবে ধরাকে সরা মনে করা শুরু করে যে মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিভাগ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরকেও তারা তাদের কার্যসিদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। ঘুষ ও হুমকি ছিল তাদের অস্ত্র। একশ্রেণীর অসাধু সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে থানা ও আদালত চত্বরেও এরা তাদের অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বয়ং মন্ত্রীর কথায় এর সত্যতা রয়েছে।
ভূমিদস্যুরা ঢাকাসহ আশপাশের পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য অন্যতম দায়ী। তাদের দখলের সহযোগী হিসেবে বিরাট সন্ত্রাসী-চক্রের উপস্থিতি আইনশৃঙ্খলার জন্যও হুমকি। সময় এসেছে আবাসনশিল্পকে তো বটেই, দেশকেই ভূমিদস্যুদের রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত করার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে নীতিনির্ধারণী কথা বলেছেন। শিল্পটির বিকাশ নিরুপদ্রব করার পাশাপাশি সাধু আর ঠগের প্রভেদ না করা গেলে তা সম্ভব নয়। দায়িত্বটি রিহ্যাবের কর্ণধারদেরও কম নয়। তবে ঢাকা মহানগরে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আইনি দায়িত্বটি গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের। ঢাকার বাইরে ভূমি মন্ত্রণালয়কেও এ কাজে জড়াতে হবে। এসবের আলোকে সরকারের উচিত হবে ভূমিদস্যুদের দমনের জন্য সরকারের বিশেষ সেল গঠন করা। এই সেল সরকারের সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি, আইনজীবী, পরিবেশবিদ ও নাগরিক সংগঠকদের সমন্বয়ে পরিচালিত হতে হবে। পাশাপাশি এমন কঠোর আইন করতে হবে, যাতে রিহ্যাবের ভেতরে বা বাইরে এদের কোনো পা রাখার জায়গা না থাকে।
সত্য বলার পাশাপাশি সঠিক দায়িত্বটি পালন করে মন্ত্রীকে তাঁর সাহসিকতার ধারা বজায় রাখার আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.