মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং...

'মানুষ মানুষের জন্য'_এ যেন এক অচেনা বাক্য। সাম্প্রতিককালের কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এমনই মনে হতে পারে। অন্তত নিকটজন যখন যমদূত হয়ে দাঁড়ায় তখন বলতে হয়, মানুষ আর মানুষের পর্যায়ে নেই। মানুষ নিজের স্বার্থের প্রয়োজনে এতটাই অন্ধ যে সেই স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অমানুষের কাজ করতেও দ্বিধা করে না।


সে ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কখনো কখনো মনে হয়, মূল্যবোধের অবক্ষয় আর কত! নাকি মূল্যবোধ বলতেই আর কিছুর অস্তিত্ব থাকছে না। সামাজিক অশান্তি, পারিবারিক অশান্তি এবং ব্যক্তিপর্যায়ে হতাশা সৃষ্টিকারী একেকটি ঘটনা মানুষের মূল্যবোধ নিয়ে এমন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
মা কিংবা বাবা সন্তানের জন্য নিজের প্রাণ বিলিয়ে দেন_এমন ঘটনা অসংখ্য। আর বন্ধু বন্ধুর জন্য প্রাণ দিতে দ্বিধা করে না_এমন উদাহরণও অনেক দেওয়া যাবে। কিন্তু সেই প্রিয়জনও যখন পর হয়ে যায়, বন্ধু ভয়ংকর শত্রুরূপে আবির্ভূত হয়, তখন হতবাক না হয়ে পারা যায় না। কেন এমন হচ্ছে_এমন প্রশ্ন করতেও যেন মন সায় দেয় না। কারণ তাদের মন বলতে কোনো কিছু আছে কি না তাও সন্দেহ।
এসব কথা মনে আসে রাজশাহীর মাহবুব আলম রাসেলের মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকান্তরে প্রকাশের পর। জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের লালপুর এলাকার রাসেল ছিলেন ব্যবসায়ী। অভিযোগ আছে, রাসেলকে খুন করে তাঁরই দুই বন্ধু জ্যোতির্ময় জয় ও সাবি্বর। তিন বন্ধুর মধ্যে এতই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল যে রাসেলের বাবার বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে_রাসেলকে তার বন্ধুরা খুন করতে পারে। খুনের আগের যে চিত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাও অস্বাভাবিক। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে যে তাঁকে খুন করা হয়েছে তা বোঝা যায়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সাবি্বর ও জয় খুনের আগে বুদ্ধি-পরামর্শ করেই এ কাজ করেছে। ভাবতেও অবাক লাগে, খেলায় হারজিতের বাজি ধরা আর টাকা লেনদেনের মতো ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে এমন জঘন্য আচরণ করতে পারে? সংগত কারণেই প্রশ্ন আসে, বন্ধুর কাছেও কি বন্ধু নিরাপদ নয়?
এ প্রশ্ন কিন্তু পারিবারিক কিংবা সমাজব্যবস্থায়ও করা যায়। আজকে বাবা কিংবা মা খুন হচ্ছেন সন্তানের হাতে। এমনকি সন্তানও খুন হচ্ছে মা অথবা বাবার হাতে। এর থেকে কি পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই? পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড করতে না পারলে এ অকল্যাণকর অবস্থা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। পারিবারিক ভাঙন তথা যৌথ পরিবার প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যৌথ পরিবার প্রথা অটুট রাখতে সমাজ বা রাষ্ট্রের করণীয় নিয়েও চিন্তা করা যেতে পারে।
সুশিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক বন্ধন ও সুস্থ পরিবেশ মানুষকে অহিতকর কাজ থেকে নিবৃত্ত করে। সংগত কারণেই পরিবার ও ব্যক্তিপর্যায়ে এসব চর্চা হলে আশা করা যায়, অবক্ষয়প্রাপ্ত মূল্যবোধ জাগ্রত হবে।

No comments

Powered by Blogger.