সময়ের প্রতিবিম্ব-বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন ও গণতন্ত্রের যাত্রারম্ভ by এবিএম মূসাসময়ের প্রতিবিম্ব-বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন ও গণতন্ত্রের যাত্রারম্ভ by এবিএম মূসা
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ২৬ মার্চ। মুজিবনগর সরকার গঠিত হলো ১৭ এপ্রিল। দেশ সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হলো ১৬ ডিসেম্বর। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার দেশে এল এক সপ্তাহ পর, ২২ ডিসেম্বর। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই তারিখগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে আপন স্থান করে নিয়েছে। আমার কাছে সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ সব দিনের সেরা মনে হয় ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস। কারণ, স্বাধীন দেশের একটি পরিপূর্ণ সরকার সেই দিনটিতেই প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন শুরু করেছিল। বাস্তবার্থে বঙ্গবন্ধু সরকারের সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনের প্রারম্ভের দিনটি ছিল ১২ জানুয়ারি ১৯৭২। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর ১০ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নিল। উপরিউক্ত ঘটনাবলি উল্লেখ করার প্রেক্ষাপটে রয়েছে একটি ভাবনা। সেটি হলো ৪৮ ঘণ্টায় এত সব যে হলো, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ যদি বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসতেন, তবে কী হতো? এ নিয়ে ইতিপূর্বে আমি বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করেছি, কিন্তু ধারাবাহিক আলোচনা করিনি।
প্রথমেই মনে করতে হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর দেশ শৃঙ্খলমুক্ত হলেও প্রশাসনিক কার্যভার গ্রহণের জন্য অর্থাত্ রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কোনো সরকার স্বদেশের মাটিতে ছিল না। একটি আমবাগানে যে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল, দীর্ঘ আট মাস যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন সাত দিন পর। মধ্যবর্তী এই সাতটি দিন ছিল সংকটময় ও দুর্যোগময়। দেশে তখন বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি শক্তির উদ্ভব ঘটেছিল, যাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আসা নিয়ে ছিল চরম অনিশ্চয়তা। ছিল নতুন সরকারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা। মুজিবনগর সরকারের নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সেক্টরে বিভক্ত হয়ে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী সশস্ত্র যুদ্ধ করেছিল। অন্যদিকে দেশের সীমানার ভেতরে বিভিন্ন বাহিনী গড়ে উঠেছিল, যারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে ও গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তাদের নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা ছিল, বাস্তবায়ন সহজ ছিল না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলেও ঐক্যবদ্ধ জাতি যুদ্ধ করেছে, যুদ্ধের পর তাদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেশে একটি নিয়মতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা স্বদেশে ফিরে আসা প্রবাসী সরকারের জন্য সহজ ছিল না। তাই তো আমরা বাইরে থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত তিন সপ্তাহের পরিস্থিতি অবলোকন করেছি এবং সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণ এ সময় সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি। দুশ্চিন্তা ছিল, তিনি ফিরে না এলে দেশে কোন ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন সমগ্র জাতির মনে এনে দিয়েছিল স্বস্তি ও শান্তিময় ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।
আরেকটি সত্য স্বীকার করতে হবে, তা হলো কেউ কেউ দেশে বিচ্ছিন্ন গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাও করেছিলেন। বস্তুত, ১৬ থেকে ২২ ডিসেম্বর সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল মুজিবনগর থেকে অগ্রিম প্রেরিত একটি আমলা বাহিনী, যাদের দেশ পরিচালনার সব দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ছিল না। তার ওপর একটি আপাত, অদৃশ্য সমস্যার উদ্ভব ঘটেছিল। মুজিবনগর সরকারের আগমনের পর যে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা গঠন করলেন প্রবাসী সরকারের প্রধান তাজউদ্দীন আহমদ, সেখানে ছিল অন্তর্দ্বন্দ্ব। মুজিবনগরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাককে সরিয়ে আবদুস সামাদকে (আজাদ) নতুন দায়িত্ব দেওয়ার পর অভ্যন্তরীণ দলীয় সংকটের উদ্ভব ঘটেছিল। মুক্তিবাহিনীর একটি প্রভাবশালী অংশও দেশের নতুন সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। উদ্ভব ঘটেছিল নতুন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের, যাদের ব্যঙ্গ করে বলা হতো ‘ষোড়শ বাহিনী’, মানে ১৬ ডিসেম্বরে জন্মানো মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার। দক্ষিণাঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়েছিল চরমপন্থী ‘নকশাল’, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির আবদুল হক, টিপু বিশ্বাস প্রমুখ। চীনপন্থী এই চরমপন্থী জঙ্গিরা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে অভিহিত করেছিল। শুধু তা-ই নয়, ঢাকা শহরের মিরপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে তখনো পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সুদৃঢ় অবস্থান ছিল। সদ্য গঠিত সেনাবাহিনীকে নিয়েও ছিল নানা গুঞ্জরণ। এবংবিধ সংকটের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পুরোপুরি সামর্থ্য তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুনভাবে গঠিত সরকারের ছিল না।
এ সংকটময় পরিস্থিতির অবসানের আশায় জাতি অপেক্ষায় ছিল একজন মহামানবের জন্য। তাই তো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ শেষে যখন তারা জানতে পারল ওই মহামানব ‘আসিছে’, আশায় উজ্জীবিত হলো, আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠল। তাই তো আমার বিবেচনায় ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ আমাদের ইতিহাসে এক মহামান্বিত ও অনন্য দিন হিসেবে স্থান পাবে। বঙ্গবন্ধু এলেন একটি ব্রিটিশ জেট বিমানে করে। ঢাকায় তখন বেগম মুজিব ও পুত্র-কন্যা অবস্থান করছিলেন পুরোনো ১৮ নম্বর রাস্তার একটি বাড়িতে। উল্লেখ্য, ৩২ নম্বরের বাড়িটি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার পর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস আপনজন থেকে বিচ্ছিন্ন বঙ্গবন্ধু তাদের দেখা না পাওয়ার মর্মবেদনা বুকে চেপে রেখে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে এলেন রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে লাখ লাখ ‘বাংলার মানুষ’ তাঁকে এক পলক দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশে রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণটি ছিল আবেগপূর্ণ ও স্মৃতিচারণা, দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা। অবাক করা ব্যাপার হলো, ৩৭ বছর আগে এ দিনটিতে দেওয়া ভাষণে তিনি দুটি নীতিনির্ধারণী ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা এখনো অমীমাংসিত রয়েছে, আলোচিত হচ্ছে। ভবিষ্যত্দ্রষ্টা শেখ মুজিব সেদিন রেসকোর্স তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা করেছিলেন, ‘সোনার বাংলায় দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না।’ তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে ৩৭ বছর পরও একই কথা ভিন্ন মাত্রায় বলতে হচ্ছে। দ্বিতীয় বাক্যটি ছিল, ‘রাজাকার-আলবদরদের বিচার হবে।’ তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিধ্বনি আজও শোনা যাচ্ছে, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।’
আমি অবাক হয়ে ভাবি, নয় মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন, নাকি স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করছিলেন? একটি নতুন রাষ্ট্র পরিচালনার হোমওয়ার্ক করছিলেন? তা না হলে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার আগেই কেন ও কীভাবে নতুন দেশের শাসনপদ্ধতি ও গণতন্ত্রের গতিপথ নির্ধারণ করে দিলেন। বক্তব্যটির পটভূমি ও মাজেজা ব্যাখ্যা করছি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হলো ১১ জানুয়ারি সকালে, ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে। শেখ কামাল আর তাঁর তথ্যসচিব আমিনুল হক বাদশাহ আমাকে দেখে হইহই করে উঠল, ‘আপনি কোথায় ছিলেন, বঙ্গবন্ধু আপনাকে খুঁজছেন।’ দোতলায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো, কান্নাকাটি হলো, ভাবি পান খাওয়ালেন। এসব ব্যক্তিগত কাহিনি বহুবার বলা হয়েছে, পুনরাবৃত্তি করব না। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমাকে বলেন, ‘শোন, আমি পার্লামেন্টারি সিস্টেম চালু করছি। একটু আগে তাজউদ্দীন আর মোশতাক এসেছিল, তাদের সব বলেছি। বিকেলে প্রেস কনফারেন্সে বিস্তারিত বলব। সবাই থাকিস।’ আমি তাঁকে জানালাম, নিচে সাংবাদিক আবুল হাশেম ও মাহবুবুল আলম অপেক্ষা করছেন। বঙ্গবন্ধু নিচে নেমে এলেন, দুজনকেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে আসতে বললেন।
পরদিন সকালে দেশে প্রত্যাবর্তনের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এলেন পূর্ব পাকিস্তানের সেক্রেটারিয়েটে, যার নতুন নামকরণ করা হলো ‘সচিবালয়’। নতুন কর্মস্থলে তিনি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। ইতিমধ্যে বর্তমান সুগন্ধা এক সময়ের প্রেসিডেন্ট হাউসের (যেখানে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক হয়েছিল, তৈরি হয়েছিল রানি এলিজাবেথের ঢাকা সফর উপলক্ষে) নামকরণ করা হয়েছে গণভবন। সেখানে স্থাপিত হলো তাঁর কার্যালয়। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন প্রধানত বিদেশি সাংবাদিকেরা। এরই মধ্যে আবুল হাশেমকে তাঁর জনসংযোগ কর্মকর্তা, মাহবুবুল আলমকে প্রেসসচিব ও আমিনুল বাদশাহকে উপপ্রেসসচিব পদে নিয়োগ দিলেন। সকালেই সচিবালয়ে ডেকে এনেছিলেন রফিকউল্লাহ চৌধুরীকে (পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন, যিনি ইয়াহিয়া আমলে বাঙালিপ্রীতির জন্য চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন)। তাঁকে মুখ্যসচিব পদে নিয়োগ দিলেন। ব্যক্তিগত সচিব হলেন পাকিস্তান আমলে হয়রানির শিকার আরেক বাঙালি আমলা নূরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনেই ঘোষণা করলেন তাঁর নতুন শাসনব্যবস্থা কাঠামো, সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রাপথ।
উপরিউক্ত ঘটনাবলি উল্লেখ করলাম আমার পূর্বোল্লিখিত একটি বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করতে। পাকিস্তানের জেলখানায় দিন যাপনকালে তিনি কি সর্বক্ষণ স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনপদ্ধতি ও প্রশাসন কাঠামোর ছক তৈরি করেছিলেন? তাই তো রেসকোর্সের ময়দানে বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম, আমার বাংলা একদিন স্বাধীন হবেই। সেই বাংলায় আমি আবার আসিব ফিরে।’ তা না হলে দেড় দিনের মধ্যেই কী করে একটি প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির তাত্ক্ষণিক কতিপয় পদক্ষেপ নিলেন? সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বাড়িতে ফিরে এসেই আমাকে বললেন, ‘তোকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ডিজি করে দিলাম।’ আশরাফুজ্জামান খান হলেন বাংলাদেশ রেডিওর প্রধান কর্মকর্তা।
পরদিন ১২ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধু প্রশাসনিক চমক দিলেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে আমলাদের পরিবর্তে নিয়োগ দিলেন পেশাজীবীদের। শিক্ষাসচিব হলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, স্বাস্থ্যসচিব মুজিবনগর সরকারের চিকিত্সক তোফাজ্জল হোসেন, পূর্তসচিব প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম, তথ্যসচিব সাংবাদিক বাহাউদ্দিন চৌধুরী। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান প্রমুখকে দেশ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণের দায়িত্ব দিলেন। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সত্যিকারের ‘জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা ও জনগণের সরকার’ প্রতিষ্ঠিত করলেন। অবশ্য গণমুখী এ ব্যবস্থাটি দৃঢ় ভিত্তি পাওয়ার আগেই আমলাতন্ত্রের কূটচক্রের কাছে হার মানল। স্বল্পকালের মধ্যে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র সরকার ও প্রশাসনকে গ্রাস করে নিয়েছিল।
অতঃপর ১২ জানুয়ারি বিকেল তিনটা, গভর্নর হাউস নতুন নামের ‘বঙ্গভবনে’ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হলো গণপরিষদ। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পদত্যাগ করলেন। লন্ডন থেকে দুই দিন আগে এসেছেন বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, তিনি হলেন নতুন রাষ্ট্রপতি। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিলেন। দুজনকেই শপথ পড়ালেন প্রধান বিচারপতি সায়েম। এরপর একে একে শপথ নিলেন নতুন মন্ত্রিসভার ১০ জন সদস্য। লাখো প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত দেশের নিয়মতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী গণতান্ত্রিক সরকারের যাত্রা হলো শুরু।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
প্রথমেই মনে করতে হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর দেশ শৃঙ্খলমুক্ত হলেও প্রশাসনিক কার্যভার গ্রহণের জন্য অর্থাত্ রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কোনো সরকার স্বদেশের মাটিতে ছিল না। একটি আমবাগানে যে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল, দীর্ঘ আট মাস যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন সাত দিন পর। মধ্যবর্তী এই সাতটি দিন ছিল সংকটময় ও দুর্যোগময়। দেশে তখন বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি শক্তির উদ্ভব ঘটেছিল, যাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আসা নিয়ে ছিল চরম অনিশ্চয়তা। ছিল নতুন সরকারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা। মুজিবনগর সরকারের নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সেক্টরে বিভক্ত হয়ে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী সশস্ত্র যুদ্ধ করেছিল। অন্যদিকে দেশের সীমানার ভেতরে বিভিন্ন বাহিনী গড়ে উঠেছিল, যারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে ও গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তাদের নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা ছিল, বাস্তবায়ন সহজ ছিল না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলেও ঐক্যবদ্ধ জাতি যুদ্ধ করেছে, যুদ্ধের পর তাদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেশে একটি নিয়মতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা স্বদেশে ফিরে আসা প্রবাসী সরকারের জন্য সহজ ছিল না। তাই তো আমরা বাইরে থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত তিন সপ্তাহের পরিস্থিতি অবলোকন করেছি এবং সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণ এ সময় সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি। দুশ্চিন্তা ছিল, তিনি ফিরে না এলে দেশে কোন ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন সমগ্র জাতির মনে এনে দিয়েছিল স্বস্তি ও শান্তিময় ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।
আরেকটি সত্য স্বীকার করতে হবে, তা হলো কেউ কেউ দেশে বিচ্ছিন্ন গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাও করেছিলেন। বস্তুত, ১৬ থেকে ২২ ডিসেম্বর সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল মুজিবনগর থেকে অগ্রিম প্রেরিত একটি আমলা বাহিনী, যাদের দেশ পরিচালনার সব দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ছিল না। তার ওপর একটি আপাত, অদৃশ্য সমস্যার উদ্ভব ঘটেছিল। মুজিবনগর সরকারের আগমনের পর যে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা গঠন করলেন প্রবাসী সরকারের প্রধান তাজউদ্দীন আহমদ, সেখানে ছিল অন্তর্দ্বন্দ্ব। মুজিবনগরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাককে সরিয়ে আবদুস সামাদকে (আজাদ) নতুন দায়িত্ব দেওয়ার পর অভ্যন্তরীণ দলীয় সংকটের উদ্ভব ঘটেছিল। মুক্তিবাহিনীর একটি প্রভাবশালী অংশও দেশের নতুন সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। উদ্ভব ঘটেছিল নতুন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের, যাদের ব্যঙ্গ করে বলা হতো ‘ষোড়শ বাহিনী’, মানে ১৬ ডিসেম্বরে জন্মানো মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার। দক্ষিণাঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়েছিল চরমপন্থী ‘নকশাল’, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির আবদুল হক, টিপু বিশ্বাস প্রমুখ। চীনপন্থী এই চরমপন্থী জঙ্গিরা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলে অভিহিত করেছিল। শুধু তা-ই নয়, ঢাকা শহরের মিরপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে তখনো পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সুদৃঢ় অবস্থান ছিল। সদ্য গঠিত সেনাবাহিনীকে নিয়েও ছিল নানা গুঞ্জরণ। এবংবিধ সংকটের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পুরোপুরি সামর্থ্য তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুনভাবে গঠিত সরকারের ছিল না।
এ সংকটময় পরিস্থিতির অবসানের আশায় জাতি অপেক্ষায় ছিল একজন মহামানবের জন্য। তাই তো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ শেষে যখন তারা জানতে পারল ওই মহামানব ‘আসিছে’, আশায় উজ্জীবিত হলো, আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠল। তাই তো আমার বিবেচনায় ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ আমাদের ইতিহাসে এক মহামান্বিত ও অনন্য দিন হিসেবে স্থান পাবে। বঙ্গবন্ধু এলেন একটি ব্রিটিশ জেট বিমানে করে। ঢাকায় তখন বেগম মুজিব ও পুত্র-কন্যা অবস্থান করছিলেন পুরোনো ১৮ নম্বর রাস্তার একটি বাড়িতে। উল্লেখ্য, ৩২ নম্বরের বাড়িটি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার পর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস আপনজন থেকে বিচ্ছিন্ন বঙ্গবন্ধু তাদের দেখা না পাওয়ার মর্মবেদনা বুকে চেপে রেখে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে এলেন রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে লাখ লাখ ‘বাংলার মানুষ’ তাঁকে এক পলক দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশে রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণটি ছিল আবেগপূর্ণ ও স্মৃতিচারণা, দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা। অবাক করা ব্যাপার হলো, ৩৭ বছর আগে এ দিনটিতে দেওয়া ভাষণে তিনি দুটি নীতিনির্ধারণী ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা এখনো অমীমাংসিত রয়েছে, আলোচিত হচ্ছে। ভবিষ্যত্দ্রষ্টা শেখ মুজিব সেদিন রেসকোর্স তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা করেছিলেন, ‘সোনার বাংলায় দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না।’ তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে ৩৭ বছর পরও একই কথা ভিন্ন মাত্রায় বলতে হচ্ছে। দ্বিতীয় বাক্যটি ছিল, ‘রাজাকার-আলবদরদের বিচার হবে।’ তাঁর এ বক্তব্যের প্রতিধ্বনি আজও শোনা যাচ্ছে, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।’
আমি অবাক হয়ে ভাবি, নয় মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন, নাকি স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করছিলেন? একটি নতুন রাষ্ট্র পরিচালনার হোমওয়ার্ক করছিলেন? তা না হলে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার আগেই কেন ও কীভাবে নতুন দেশের শাসনপদ্ধতি ও গণতন্ত্রের গতিপথ নির্ধারণ করে দিলেন। বক্তব্যটির পটভূমি ও মাজেজা ব্যাখ্যা করছি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার দেখা হলো ১১ জানুয়ারি সকালে, ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে। শেখ কামাল আর তাঁর তথ্যসচিব আমিনুল হক বাদশাহ আমাকে দেখে হইহই করে উঠল, ‘আপনি কোথায় ছিলেন, বঙ্গবন্ধু আপনাকে খুঁজছেন।’ দোতলায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো, কান্নাকাটি হলো, ভাবি পান খাওয়ালেন। এসব ব্যক্তিগত কাহিনি বহুবার বলা হয়েছে, পুনরাবৃত্তি করব না। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমাকে বলেন, ‘শোন, আমি পার্লামেন্টারি সিস্টেম চালু করছি। একটু আগে তাজউদ্দীন আর মোশতাক এসেছিল, তাদের সব বলেছি। বিকেলে প্রেস কনফারেন্সে বিস্তারিত বলব। সবাই থাকিস।’ আমি তাঁকে জানালাম, নিচে সাংবাদিক আবুল হাশেম ও মাহবুবুল আলম অপেক্ষা করছেন। বঙ্গবন্ধু নিচে নেমে এলেন, দুজনকেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে আসতে বললেন।
পরদিন সকালে দেশে প্রত্যাবর্তনের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এলেন পূর্ব পাকিস্তানের সেক্রেটারিয়েটে, যার নতুন নামকরণ করা হলো ‘সচিবালয়’। নতুন কর্মস্থলে তিনি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। ইতিমধ্যে বর্তমান সুগন্ধা এক সময়ের প্রেসিডেন্ট হাউসের (যেখানে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক হয়েছিল, তৈরি হয়েছিল রানি এলিজাবেথের ঢাকা সফর উপলক্ষে) নামকরণ করা হয়েছে গণভবন। সেখানে স্থাপিত হলো তাঁর কার্যালয়। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন প্রধানত বিদেশি সাংবাদিকেরা। এরই মধ্যে আবুল হাশেমকে তাঁর জনসংযোগ কর্মকর্তা, মাহবুবুল আলমকে প্রেসসচিব ও আমিনুল বাদশাহকে উপপ্রেসসচিব পদে নিয়োগ দিলেন। সকালেই সচিবালয়ে ডেকে এনেছিলেন রফিকউল্লাহ চৌধুরীকে (পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন, যিনি ইয়াহিয়া আমলে বাঙালিপ্রীতির জন্য চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন)। তাঁকে মুখ্যসচিব পদে নিয়োগ দিলেন। ব্যক্তিগত সচিব হলেন পাকিস্তান আমলে হয়রানির শিকার আরেক বাঙালি আমলা নূরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনেই ঘোষণা করলেন তাঁর নতুন শাসনব্যবস্থা কাঠামো, সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রাপথ।
উপরিউক্ত ঘটনাবলি উল্লেখ করলাম আমার পূর্বোল্লিখিত একটি বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করতে। পাকিস্তানের জেলখানায় দিন যাপনকালে তিনি কি সর্বক্ষণ স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনপদ্ধতি ও প্রশাসন কাঠামোর ছক তৈরি করেছিলেন? তাই তো রেসকোর্সের ময়দানে বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম, আমার বাংলা একদিন স্বাধীন হবেই। সেই বাংলায় আমি আবার আসিব ফিরে।’ তা না হলে দেড় দিনের মধ্যেই কী করে একটি প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির তাত্ক্ষণিক কতিপয় পদক্ষেপ নিলেন? সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বাড়িতে ফিরে এসেই আমাকে বললেন, ‘তোকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ডিজি করে দিলাম।’ আশরাফুজ্জামান খান হলেন বাংলাদেশ রেডিওর প্রধান কর্মকর্তা।
পরদিন ১২ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধু প্রশাসনিক চমক দিলেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে আমলাদের পরিবর্তে নিয়োগ দিলেন পেশাজীবীদের। শিক্ষাসচিব হলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, স্বাস্থ্যসচিব মুজিবনগর সরকারের চিকিত্সক তোফাজ্জল হোসেন, পূর্তসচিব প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম, তথ্যসচিব সাংবাদিক বাহাউদ্দিন চৌধুরী। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান প্রমুখকে দেশ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণের দায়িত্ব দিলেন। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সত্যিকারের ‘জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা ও জনগণের সরকার’ প্রতিষ্ঠিত করলেন। অবশ্য গণমুখী এ ব্যবস্থাটি দৃঢ় ভিত্তি পাওয়ার আগেই আমলাতন্ত্রের কূটচক্রের কাছে হার মানল। স্বল্পকালের মধ্যে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র সরকার ও প্রশাসনকে গ্রাস করে নিয়েছিল।
অতঃপর ১২ জানুয়ারি বিকেল তিনটা, গভর্নর হাউস নতুন নামের ‘বঙ্গভবনে’ রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হলো গণপরিষদ। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পদত্যাগ করলেন। লন্ডন থেকে দুই দিন আগে এসেছেন বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, তিনি হলেন নতুন রাষ্ট্রপতি। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিলেন। দুজনকেই শপথ পড়ালেন প্রধান বিচারপতি সায়েম। এরপর একে একে শপথ নিলেন নতুন মন্ত্রিসভার ১০ জন সদস্য। লাখো প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত দেশের নিয়মতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী গণতান্ত্রিক সরকারের যাত্রা হলো শুরু।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
No comments