তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির বার্তাবাহক by আ ফ ম খালিদ হোসেন

রোজা এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত যার মাধ্যমে মানুষ দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ করতে পারে। এক মাসের সিয়াম সাধনার ফলে মানব মনের পাশব প্রবৃত্তি অবদমিত হয় এবং রুহ ও বিবেকের শক্তি শাণিত হয়। এক কথায়, রমজান মানুষের মধ্যে মানবিকতাবোধের উন্মেষ ঘটায়।


মহানবী (সা.) বলেন, 'যখন রমজান মাস শুরু হয়, মহান আল্লাহ জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন।' যার কারণে ইবাদত, জিকির, কৃচ্ছ্রসাধন ও আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্যের স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কেবল পানাহার ও পাপাচার ত্যাগ করলেই রোজা পালন হয় না। সেই সঙ্গে সব ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অন্তরকে করতে হবে পরিচ্ছন্ন, তবেই রোজা মুমিনের জীবনে নিয়ে আসবে অফুরন্ত রহমত ও বরকত। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজা রাখে সে যেন কোনো রকম অশ্লীলতা ও হৈ-হুলেল্গাড় না করে। কেউ যদি তাকে গালাগাল করে বা তার সঙ্গে ঝগড়া করে সে যেন বলে আমি রোজাদার।' _বুখারি ও মুসলিম
রোজা ধৈর্য, সংযম, আত্মত্যাগ ও মানবিক সহানুভূতির জন্ম দেয়। মহানবীর (সা.) ভাষায়, 'সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যের মাস মাহে রমজান'।-বায়হাকী
কেননা ধনী ও বিত্তশালীরা সারাদিন রোজা রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জঠর জ্বালার দহন-বেদনা বুঝতে সক্ষম হন। ফলে তাদের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'ধনীদের সম্পদে রয়েছে গরিব ও দরিদ্র মানুষের হক।' (যারিয়াত : ১৯)। মানব জাতির হিদায়তের জন্য মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন রমজান মাসে। এক কথায় রমজান আসমানী গ্রন্থ নাজিলের মাস। আসমানী গ্রন্থ নাজিলের বার্ষিকী। এ মাসে নতুন চেতনায় নতুন আঙ্গিকে পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত, অর্থ অনুধাবন ও তাফসীর অধ্যয়ন একান্ত জরুরি। কারণ কোরআন চর্চার মাধ্যমে মানুষ সত্য-মিথ্যা ও হক বাতিলের পার্থক্য নিরূপণ করতে সক্ষম হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, 'রমজান মাসে মানুষের পথপ্রদর্শক এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে আল কোরআন নাজিল হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।' (বাকারা : ১৮৫)। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বিশেষত বেজোড় রাতগুলোতে সৌভাগ্য রজনী বা লাইলাতুল কদর রয়েছে। যে রাতের ইবাদত-বন্দেগি হাজার রাতের ইবাদতের চাইতেও উত্তম ও মাহাত্ম্যপূর্ণ (আল-কদর : ১-৫)। রমজান মাসে ধৈর্য, শৃঙ্খলা, সংযম ও সহমর্মিতার যে চর্চা হয় তা বছরের বাকি ১১ মাসকেও প্রভাবিত করলে সামাজিক জীবনধারায় সৃষ্টি হবে ছন্দ এবং নেমে আসবে ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে স্বর্গীয় প্রশান্তির ফল্গুধারা। তাই রহমত, বরকত ও সংযমের মাস রমজানকে স্বাগত জানাই_ আহলান সাহলান মাহে রমজান। মহানবী (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহতায়ালা তার বিগত জীবনের সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন।'
 

No comments

Powered by Blogger.