উত্সব-খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌষপার্বণ উদ্যাপন by উম্মে উমামা
৫ জানুয়ারি। সকালের কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে বেরিয়েছে মেয়ের দল। আটপৌরে শাড়িতে সেজেছে তারা, মুখে যেন লজ্জারাঙা খুশির ঝিলিক। হাতে নকশা করা মাটির হাঁড়িতে বাহারি পিঠা। চঞ্চল দৃষ্টিতে খুঁজে ফিরছে যেন কাকে। জিজ্ঞাসা করতেই একজন খুশিভরা কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘জানো না, আজ যে আমাদের নাইওরযাত্রা।
’ তাই তো! কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল মিষ্টি হাতে পাঞ্জাবি পরা ভাইদের। বোনদের সঙ্গে নিয়ে এবার ভাইয়েরাও ধীরপায়ে হাঁটা শুরু করল। তবে তা কোনো বাড়িতে নয়, যাত্রা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে। শহীদ মিনারে এসে যার যার ভাইয়ের মুখে পিঠা তুলে দিল তাদের বোনেরা। ‘ক্যামেরা কোথায়?...’ ‘ছবি তোল...’ ‘এই, কৌশিক কোথায়? তাড়াতাড়ি আয়’ ইত্যাদি কথার কলধ্বনিতে মুখর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। মহা আনন্দে আর উত্সাহে চলল ছবি তোলার কাজ। কোথায় ক্লাস আর ক্লাস টেস্ট! পৌষ পিঠা উত্সবে মেতে উঠেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, মুহূর্তের জন্য সব ভুলে গেছে তারা।
বাঙালির ঐতিহ্যে পৌষপার্বণে ঠিক কবে থেকে এবং কীভাবে এই নাইওরযাত্রা আর পিঠা উত্সব, তার সঠিক কোনো হিসাব বা তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ না থাকলেও এটা এখন আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারা বছর শ্বশুরবাড়ির শত কাজের মধ্যেও বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা ভোলে না গ্রাম্য বধূটি। অপেক্ষা করতে থাকে কবে আসবে পৌষ মাস! পৌষে মা কত বাহারি পিঠাই না বানাত। বারবার ফিরে যায় সেই শৈশবে—‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশীতে বিষম খেয়ে,/আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’ (পল্লী স্মৃতি, সুফিয়া কামাল) আজও মনে মনে ভাবে, কবে খাবে মায়ের হাতের পিঠা। দেখতে দেখতে চলে আসে পৌষ মাস, কিন্তু পথ চাওয়া শেষ হয় না। ভাইটি তার কবে আসবে নাইওর নিতে। অবশেষে ভাই এলে খুশি আর ধরে না যেন। বাপের বাড়ি যাওয়ার আগের রাতটা যেন শেষই হয় না। সূর্য ওঠার আগে থেকেই শুরু হয় গোছানো। যাওয়ার বেলায় স্বামীকে বলে সে, ‘আমাকে আনতে যাইও কিন্তু...।’ হাসিমুখে ভাইয়ের সঙ্গে যাত্রা করে সে। ঠিক এই দৃশ্যই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মায়েরা তো নেই এখানে, তাই নিজ হাতে তৈরি হয়েছে এসব পিঠা। বাহারি নকশা ও বাহারি নামের এই পিঠা—ঝাল কুলি, মিষ্টি কুলি, নকশি পিঠা, পান্তুয়া, তেজপাতা পিঠা, গোলাপ, রস নকশা, পাকান পিঠা, পায়েস, তেল পিঠা আরও কত পিঠা! ভাইয়েরাও বোনদের তাড়াতাড়ি নেওয়ার জন্য ব্যস্ত। তাই তো আগে থেকেই গেটের সামনে ভ্যান ঠিক করে বসে আছে। বোনদের ভ্যানে তুলে দিয়ে নিজেরা ভ্যানের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে শুরু করল। আর মুখে ছিল গান। বোনেরাও কম যায়নি, ভাইদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তারাও ধরল পৌষের গান। তবে পিঠার হাঁড়ি কিন্তু সযত্নে আগলে রেখেছে বোনেরা। কারণ, ভাইদের সব লোভ তো ওই পিঠার হাঁড়ির ওপর। কিন্তু এখনই হাঁড়ি শেষ করলে পরের অনুষ্ঠান হবে কী করে। বাপের বাড়ি যেতেও কম সময় লাগে না, তাই তো ভ্যানে করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় চক্কর দিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে থামল তারা। নাইওর যাত্রা শেষে চাদর বিছিয়ে পিঠার হাঁড়ি সামনে রেখে বসে পড়লেন রশ্মি, হূদিতা, রীতি, লিন্ডা, রাহাত, সুমি, ইভা, সুস্মিতা, বন্যা, প্রিয়াঙ্কা, অমি, কেয়া, রিমি, রিয়া, বাঁধনরা। এরপর ভাইদের পিঠা দিয়ে বিক্রির কাজে লেগে গেল মেয়েরা আর ছেলেরা পাশে হারমোনিয়াম আর তবলার তালে ধরল গান, সেই সঙ্গে পিঠার প্রতি আকুলতা দেখিয়ে চলল তারা, ‘দে না আর একটা...ওই যে ওই রস নকশিটা’। কিন্তু কিছুতেই পিঠা হাতছাড়া করা যাবে না। তবু হঠাত্ কে যেন পিঠার হাঁড়ি নিয়ে লাগাল দৌড়, পেছনে আরও ছেলের দল; সেই সঙ্গে নারীকণ্ঠের চিত্কার চেঁচামেচি, ‘পিঠার হাঁড়ি নিয়ে গেল যে...!’ আনন্দ আর খুশির হল্লায় সারা দিন চলে পিঠা বিক্রির কাজ। সঙ্গে ছবি তোলা তো আছেই। পিঠা বিক্রির প্রধান ক্রেতা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে পিঠা, সেই সঙ্গে শীতের বেলাও। শেষ হয় পিঠা উত্সব। সারা দিনের ক্লান্তি তবু যেন হার মেনে যায় এই ছেলেমেয়েদের কাছে। শুরু হয় আড্ডা। আজকের দিনের আড্ডা।
বাঙালির ঐতিহ্যে পৌষপার্বণে ঠিক কবে থেকে এবং কীভাবে এই নাইওরযাত্রা আর পিঠা উত্সব, তার সঠিক কোনো হিসাব বা তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ না থাকলেও এটা এখন আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারা বছর শ্বশুরবাড়ির শত কাজের মধ্যেও বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা ভোলে না গ্রাম্য বধূটি। অপেক্ষা করতে থাকে কবে আসবে পৌষ মাস! পৌষে মা কত বাহারি পিঠাই না বানাত। বারবার ফিরে যায় সেই শৈশবে—‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশীতে বিষম খেয়ে,/আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’ (পল্লী স্মৃতি, সুফিয়া কামাল) আজও মনে মনে ভাবে, কবে খাবে মায়ের হাতের পিঠা। দেখতে দেখতে চলে আসে পৌষ মাস, কিন্তু পথ চাওয়া শেষ হয় না। ভাইটি তার কবে আসবে নাইওর নিতে। অবশেষে ভাই এলে খুশি আর ধরে না যেন। বাপের বাড়ি যাওয়ার আগের রাতটা যেন শেষই হয় না। সূর্য ওঠার আগে থেকেই শুরু হয় গোছানো। যাওয়ার বেলায় স্বামীকে বলে সে, ‘আমাকে আনতে যাইও কিন্তু...।’ হাসিমুখে ভাইয়ের সঙ্গে যাত্রা করে সে। ঠিক এই দৃশ্যই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মায়েরা তো নেই এখানে, তাই নিজ হাতে তৈরি হয়েছে এসব পিঠা। বাহারি নকশা ও বাহারি নামের এই পিঠা—ঝাল কুলি, মিষ্টি কুলি, নকশি পিঠা, পান্তুয়া, তেজপাতা পিঠা, গোলাপ, রস নকশা, পাকান পিঠা, পায়েস, তেল পিঠা আরও কত পিঠা! ভাইয়েরাও বোনদের তাড়াতাড়ি নেওয়ার জন্য ব্যস্ত। তাই তো আগে থেকেই গেটের সামনে ভ্যান ঠিক করে বসে আছে। বোনদের ভ্যানে তুলে দিয়ে নিজেরা ভ্যানের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে শুরু করল। আর মুখে ছিল গান। বোনেরাও কম যায়নি, ভাইদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তারাও ধরল পৌষের গান। তবে পিঠার হাঁড়ি কিন্তু সযত্নে আগলে রেখেছে বোনেরা। কারণ, ভাইদের সব লোভ তো ওই পিঠার হাঁড়ির ওপর। কিন্তু এখনই হাঁড়ি শেষ করলে পরের অনুষ্ঠান হবে কী করে। বাপের বাড়ি যেতেও কম সময় লাগে না, তাই তো ভ্যানে করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় চক্কর দিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে থামল তারা। নাইওর যাত্রা শেষে চাদর বিছিয়ে পিঠার হাঁড়ি সামনে রেখে বসে পড়লেন রশ্মি, হূদিতা, রীতি, লিন্ডা, রাহাত, সুমি, ইভা, সুস্মিতা, বন্যা, প্রিয়াঙ্কা, অমি, কেয়া, রিমি, রিয়া, বাঁধনরা। এরপর ভাইদের পিঠা দিয়ে বিক্রির কাজে লেগে গেল মেয়েরা আর ছেলেরা পাশে হারমোনিয়াম আর তবলার তালে ধরল গান, সেই সঙ্গে পিঠার প্রতি আকুলতা দেখিয়ে চলল তারা, ‘দে না আর একটা...ওই যে ওই রস নকশিটা’। কিন্তু কিছুতেই পিঠা হাতছাড়া করা যাবে না। তবু হঠাত্ কে যেন পিঠার হাঁড়ি নিয়ে লাগাল দৌড়, পেছনে আরও ছেলের দল; সেই সঙ্গে নারীকণ্ঠের চিত্কার চেঁচামেচি, ‘পিঠার হাঁড়ি নিয়ে গেল যে...!’ আনন্দ আর খুশির হল্লায় সারা দিন চলে পিঠা বিক্রির কাজ। সঙ্গে ছবি তোলা তো আছেই। পিঠা বিক্রির প্রধান ক্রেতা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে পিঠা, সেই সঙ্গে শীতের বেলাও। শেষ হয় পিঠা উত্সব। সারা দিনের ক্লান্তি তবু যেন হার মেনে যায় এই ছেলেমেয়েদের কাছে। শুরু হয় আড্ডা। আজকের দিনের আড্ডা।
No comments