সিঙ্গাপুরে প্রতারণার শিকার শ্রমিক

জনশক্তি রপ্তানির নামে এ দেশে কী রকম তুঘলকি কাণ্ড চালিয়ে আসছে কিছু অসাধু জনশক্তি রপ্তানিকারক, এর প্রমাণ প্রায় নিত্য মেলে। ২০ এপ্রিল সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশ, প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।


লোভনীয় বেতনের স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁদের সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁরা এর বিপরীত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। সিঙ্গাপুরে বর্তমানে এক লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন, যার মধ্যে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় সে দেশে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের অনুমতি দিয়ে থাকে। ওই দেশের এক শ্রেণীর আউটসোর্সিং কম্পানির চাহিদা পত্রের ভিত্তিতে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কম্পানি জনশক্তি আমদানির জন্য এ চাহিদা পত্র সেখানকার মধ্যস্বত্বভোগী আদম ব্যবসায়ীদের কাছে দেয়। জানা গেছে, এসব আদম ব্যবসায়ীর বেশির ভাগই সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বাংলাদেশি। এমন দৃষ্টান্ত আরো আছে এবং জনশক্তি রপ্তানির নামে এ তুঘলকি কাণ্ডের জাল অনেক বিস্তৃত।
সিঙ্গাপুর একটি মাত্র দৃষ্টান্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন মানবেতর জীবনযাপনকারী বাংলাদেশির সংখ্যা কম নয়। বর্তমানে এমনিতেই বাংলাদেশের শ্রমবাজার নানা সমস্যা-সংকটে নিপতিত। লিবিয়া, মিসরসহ আরব বিশ্বে বিরাজমান অস্থিরতা এ ক্ষেত্রে চরম বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। নতুন নতুন শ্রমবাজার সন্ধানের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সাফল্য নেই। তা ছাড়া অসাধু প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির কারণে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে এরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। প্রবাসে গিয়ে শ্রমিকদের নানা ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এক শ্রেণীর ক্ষমতাবান স্বেচ্ছাচারী এ ক্ষেত্রে ফায়দা লুটে নিচ্ছে অন্যের সর্বনাশ ঘটিয়ে। এ নিয়ে এযাবৎ আলোচনা-পর্যালোচনা-সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনো কিছুই কম হয়নি, কিন্তু ইতিবাচক ফল মিলছে না। শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণার জাল অনেক বিস্তৃত। দারিদ্র্যপীড়িত এ দেশের মানুষ ভাগ্যান্বেষণে সব কিছু খুইয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়ে নতুন করে যে বিড়ম্বনায় পড়ছেন এরও বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারক চক্রের এই যে অপতৎপরতা চলছে, তা বন্ধে সরকারকে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এর সঙ্গে দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থ জড়িত। প্রবাসীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের মিশনগুলোর দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অবশ্যই কর্তব্য এবং দায়িত্ব হলেও এ ক্ষেত্রে দূতাবাস কর্মকর্তারা অনেকটাই নিগৃহীত, এমন অভিযোগও নতুন নয়। বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দেখা যেমন দূতাবাসের দায়িত্ব, তেমনি কোনো বাংলাদেশির কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে কি না সেদিকেও দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ ব্যাপারে আশু কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.