স্মরণ-জীবন্ত সন্তোষদা by মামুনুর রশীদ
এই তো, ৯ জানুয়ারি ছিল সন্তোষদার জন্মদিন। তাঁর কথা মনে হতেই তাঁকে যেন দেখতে পেলাম সামনে। সেই হাসি ঠোঁটে নিয়ে কাজ করছেন। টেবিল আর চেয়ারের সঙ্গে তাঁর সখ্যের দৃশ্যটাই বড় বেশি করে মনে পড়ে। এমন অদ্ভুত মানুষ কখনো হয়? যিনি কাজে সার্বক্ষণিক। সার্বক্ষণিক মানে আন্তর্জাতিক নিয়মের আট ঘণ্টা নয়।
আরও বেশি কিছু। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কতক্ষণ যে তিনি ঘুমোতেন, জানি না। সম্ভবত যাঁরা সময়ের বিভাজন মানেন না, তিনি তাঁদেরই একজন। আজাদ বা সংবাদ অফিসে কখনো মনে পড়ে না, কালক্ষেপণ করেছেন তিনি। বাঁ হাতে সিগারেট ধরতেন, যাতে ডান হাতে লিখতে অসুবিধা না হয়। চায়ের পর চা আসছে, যথারীতি ঠান্ডাও হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ক্লান্তিহীন তিনি লেখায়। একটু ব্যস্ত কম মনে হতো লাইব্রেরিতে। আস্তে আস্তে পাতা ওল্টাচ্ছেন পত্রিকার বা বইয়ের। এমনি করেই দিন চলে গেছে, যেমন প্রতিদিন সকালে পত্রিকা বের হয়, সূর্য ওঠে, সূর্য ডোবে। এমনি করেই সাংবাদিকতার একজন প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
এই প্রবল কর্মব্যস্ততার মধ্যে তিনি নাটক দেখতেন, সমালোচনা করতেন। সেই সমালোচনার মধ্যে ছিল প্রেরণা। অফুরন্ত প্রেরণা। আমরা একসময় সংবাদ-এর সংস্কৃতি পাতাটির জন্য অপেক্ষা করতাম। সন্তোষ গুপ্ত নাটক দেখে গেছেন, তিনি লিখবেন। লিখতেনও। দেখা হলে চিকন গোঁফের ফাঁক দিয়ে একটু হেসে বলতেন, ভালোই তো।
এরই মধ্যে রাজনীতিটাও করতেন। প্রগতিশীল রাজনীতি। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে ছিলেন সেই রাজনীতি। টাকাপয়সার হিসাবে এই মানুষটিকে মাপা যাবে না। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই কাটিয়ে দিলেন সারাটা জীবন।
কোনো আবেগ প্রকাশ করতেন না, কিন্তু অনেক সাংবাদিকের হাতে খড়ি থেকে প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত থেকেছেন পাশে। কোনো ভালো প্রস্তাবে না নেই, এমন মানুষ কোথায় পাওয়া যাবে আজকে?
যে কাগজগুলোতে তিনি লিখতেন, সে কাগজে বেতন মিলত না নিয়মিত। নিয়মিত তো নয়ই, মাসের পর মাস বাকি পড়ত। কীভাবে চলত তাঁর সংসার? আজকের দিনে সাংবাদিকদের বেতন যেভাবে বেড়েছে, যেভাবে বেড়েছে জীবনযাপনের মান, তা কি কুড়ি বছর আগেও কল্পনা করা যেত? সংবাদ অফিসে বিশাল একটি টেবিলের পেছনে বসে কাজ করতে দেখতাম তাঁকে। টেবিল উপচে পড়ছে কাগজে। পত্রিকার চিঠিপত্রগুলোও দেখতেন তিনি। সংবাদ-এ যে চিঠিগুলো ছাপতেন, সেগুলো সুচারু হাতে সম্পাদনা করতেন, ফলে চিঠিপত্রের কলামটাও হয়ে উঠত সুখপাঠ্য।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সৃজনশীল লেখাও লিখতেন। কত ছিল তাঁর সময়? ভাবতে ভীষণ অবাক লাগে।
আমাদের জীবনে অনেক মানুষকে দেখি। তাই একজন মানুষকে কতটাই বা দেখা যায়? কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে, যাঁদের সঙ্গে দেখা-অদেখাতে কিছুই যায়-আসে না।
আজও মনে হয়, সংবাদ অফিসে গেলে ঠিক সেই চেয়ারটিতে বসে সন্তোষদা। একটু হেসে বলবেন—বসেন, চা খাবেন?
যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন যেন এই অনুভব নিয়েই থাকি যে সন্তোষদা বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের মৃত্যুর পরও।
এই প্রবল কর্মব্যস্ততার মধ্যে তিনি নাটক দেখতেন, সমালোচনা করতেন। সেই সমালোচনার মধ্যে ছিল প্রেরণা। অফুরন্ত প্রেরণা। আমরা একসময় সংবাদ-এর সংস্কৃতি পাতাটির জন্য অপেক্ষা করতাম। সন্তোষ গুপ্ত নাটক দেখে গেছেন, তিনি লিখবেন। লিখতেনও। দেখা হলে চিকন গোঁফের ফাঁক দিয়ে একটু হেসে বলতেন, ভালোই তো।
এরই মধ্যে রাজনীতিটাও করতেন। প্রগতিশীল রাজনীতি। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে ছিলেন সেই রাজনীতি। টাকাপয়সার হিসাবে এই মানুষটিকে মাপা যাবে না। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই কাটিয়ে দিলেন সারাটা জীবন।
কোনো আবেগ প্রকাশ করতেন না, কিন্তু অনেক সাংবাদিকের হাতে খড়ি থেকে প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত থেকেছেন পাশে। কোনো ভালো প্রস্তাবে না নেই, এমন মানুষ কোথায় পাওয়া যাবে আজকে?
যে কাগজগুলোতে তিনি লিখতেন, সে কাগজে বেতন মিলত না নিয়মিত। নিয়মিত তো নয়ই, মাসের পর মাস বাকি পড়ত। কীভাবে চলত তাঁর সংসার? আজকের দিনে সাংবাদিকদের বেতন যেভাবে বেড়েছে, যেভাবে বেড়েছে জীবনযাপনের মান, তা কি কুড়ি বছর আগেও কল্পনা করা যেত? সংবাদ অফিসে বিশাল একটি টেবিলের পেছনে বসে কাজ করতে দেখতাম তাঁকে। টেবিল উপচে পড়ছে কাগজে। পত্রিকার চিঠিপত্রগুলোও দেখতেন তিনি। সংবাদ-এ যে চিঠিগুলো ছাপতেন, সেগুলো সুচারু হাতে সম্পাদনা করতেন, ফলে চিঠিপত্রের কলামটাও হয়ে উঠত সুখপাঠ্য।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সৃজনশীল লেখাও লিখতেন। কত ছিল তাঁর সময়? ভাবতে ভীষণ অবাক লাগে।
আমাদের জীবনে অনেক মানুষকে দেখি। তাই একজন মানুষকে কতটাই বা দেখা যায়? কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে, যাঁদের সঙ্গে দেখা-অদেখাতে কিছুই যায়-আসে না।
আজও মনে হয়, সংবাদ অফিসে গেলে ঠিক সেই চেয়ারটিতে বসে সন্তোষদা। একটু হেসে বলবেন—বসেন, চা খাবেন?
যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন যেন এই অনুভব নিয়েই থাকি যে সন্তোষদা বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের মৃত্যুর পরও।
No comments