চামড়া কিনে বিপাকে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা by রফিকুল ইসলাম,

বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। কেনা দামেও এখন তাঁরা চামড় বিক্রি করতে পারছেন না! চামড়া ব্যবসার মাধ্যমে কিছু টাকা আয় করতে গিয়ে এখন লোকসানের আশঙ্কায় আছেন রাজশাহীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার ঈদের দিন মাঠপর্যায়ে প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে এবং ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকা দরে। অথচ পাইকারি বাজারে সেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা দরে।


দুর্গাপুরের কানপাড়া এলাকার আলিমুদ্দিন নামের এক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানান, ঈদের দিন তিনি ১২০টি গরু এবং ৫০টি ছাগলের চামড়া মাঠ থেকে কিনে দুর্গাপুর বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যান। কিন্তু বাজারে গিয়ে চামড়ার দাম দেখে তাঁর মাথায় হাত পড়ে। তিনি গরুর যে চামড়া দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে কিনেছিলেন, সেই চামড়া তাঁকে পাইকারি বিক্রি করতে হয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ টাকা দামে! আবার ছাগলের যে চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে কিনেছিলেন, সেই চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে সর্বোচ্চ দেড় শ টাকা দরে! ফলে চামড়া কেনার পর গাড়ি ভাড়াসহ আলিমুদ্দিনের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বলে তিনি জানান।
রাজশাহী নগরীর সালবাগান এলাকার ইবনে সোলায়মান নামের এক ব্যক্তি জানান, ঈদের দিন তিনি ৪০০ গরুর চামড়া এবং ৬০০ ছাগলের চামড়া কিনেছেন। ঈদের মাঠ থেকে প্রতিটি গরুর চামড়ার গড় দাম পড়েছে প্রায় দুই হাজার টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দাম পড়েছে প্রায় ২২০ টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে তিনি দেখেন প্রতিটি গরুর চামড়ার গড়ে এক হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এবং খাসির চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। চামড়ার এমন দামে সোলায়মান ওই দিন চামড়াগুলো বিক্রি না করে পরের দিন নাটোরে বিক্রি করতে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও গিয়েও প্রায় একই দাম থাকায় তিনি চামড়াগুলো বিক্রি না করে একটি গুদামে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রাখেন।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, চামড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে এবার দর নির্ধারণ করে না দেওয়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দরে চামড়া কিনেছেন। প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরও ঈদের দিন বাধ্য হয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে। আর উচ্চ দামে চামড়া কেনার পর প্রায় সব ব্যবসায়ীই এবার ধরা খেয়েছেন। এখন চামড়া নিয়ে তাঁরা বিপদে আছেন। কেনা দামের চেয়ে বাজার মূল্য অনেক কম থাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তবে ঢাকার মালিকরা এখনো চামড়া কিনতে শুরু না করায় লবণ দেওয়া চামড়াগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলেও তিনি জানান। এদিকে আজ শুক্রবার ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার জন্য নাটোরে আসবেন বলে জানান রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে আসার পরই এবার প্রকৃত দাম জানা যাবে। তার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না এবার চামড়ার দাম সর্বোচ্চ কত হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত গরুর প্রতি ফুট চামড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ছাগলের ৪০ তেথে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে চামড়া বিক্রি করলে প্রকৃত ও মৌসুমি_সব ব্যবসায়ীকেই এবার অনেক লোকসান গুনতে হবে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.