ইভাদের ঘরে নিভে গেছে সব আলো by রাব্বী রহমান
মেয়ের বস্তাবন্দি লাশ দেখে ইভা বলে একবার মাত্র চিৎকার দিয়ে উঠেছিলেন মা মরিয়ম আক্তার মুন্নি। তা-ই যেন তাঁর শেষ শব্দ। এরপর তিনি আর একটি কথাও বলেননি। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। চোখে পানি নেই এক ফোঁটাও। ইভার মৃত্যু তাঁর সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। বাবা ইউসুফ আলীর অবস্থাও অনেকটা একই রকম। নিজেকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বটে, তবে পাগলপ্রায় তিনিও।গত ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ইভাকে অপহরণ করা হয় বাসার সামনে থেকেই। এরপর দাবি করা হয় চার লাখ টাকা মুক্তিপণ। ট্রাকচালক বাবা এত টাকা দেবেন কিভাবে? সহযোগিতা চান র্যাব-পুলিশের। ইভাকে না পেয়ে কয়েকদিন ধরে কান্নাকাটি চলছিল বাড়িজুড়ে।
এখন সেটাও নেই। ঈদের দিন সোমবার দুপুরে খিলক্ষেত নামাপাড়া বোডগার্ড এলাকার একটি পুকুর থেকে আট বছর বয়সী ইসরাত আরা জাহান ইভার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর পর থেকে পুরো বাড়িতে পিনপতন নীরবতা। ফুটফুটে শিশুটির এই মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না। কিভাবেই বা মেনে নেওয়া যায় এই মৃত্যু!
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে খিলক্ষেত নামাপাড়া বোডগার্ড এলাকায় ইভাদের বাসায় গিয়ে দেখা গেল, শোকে পাথর পুরো পরিবার। ঘরের ভেতর ইভার মা শুয়ে আছেন। মায়ের পাশেই আড়াই বছরের ছোট বোন রুবা ঘুমিয়ে আছে। ইভার মা মরিয়ম কথা বলার চেষ্টা করেও পারছিলেন না। পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখও ভেজা। নির্বাকপ্রায়। বুকফাটা আহাজারি নেই।
রুদ্ধ গলায় ইভার নানি আমিরুন নেসা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার দাদু-আপু এ কেমন ঈদ উপহার দিয়ে গেল সবাইকে? ওই পাষণ্ডরা কি মানুষ না? ওরা কি কোনো মানুষের পেটে জন্ম নেয়নি? কিভাবে পারল একটা ফুটফুটে পুতুলের মতো শিশুকে এভাবে খুন করতে? শুধুই কি খুন? ওরা ইভার চোখ উপড়ে ফেলেছে। হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিয়েছে। এগুলো কিভাবে সম্ভব? এতটুকু মাসুম বাচ্চার কী অপরাধ ছিল?'
বৃদ্ধা আমিরুন বললেন, 'ইভা ছিল ঘরের আলো। ওরা সব আলোই নিভিয়ে দিয়ে গেল।' কেন এমন হল সেটা তাঁরা কেউই বুঝতে পারছেন না। কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। অপহরণকারীরা তো তাঁদের ঘরের খবর জানে। চার লাখ টাকা দেওয়ার সাধ্য এই পরিবারের কারোরই নেই। তবে কি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে? মনে প্রশ্ন জাগলেও সেই কারণটা কী হতে পারে অনুমানেও বলতে পারলেন না এই বৃদ্ধা। শুধু তিনি কেন, বলতে পারলেন না পরিবারের কেউই।
বৃদ্ধা আমিরুন বিড়বিড় করে বললেন, 'আমার নাতনি সেদিন বাসায় যাচ্ছি বলে মামার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পাশেই ওদের বাসা। সেই যে যাওয়া, আর ফিরে এল না। আসবেও না কোনো দিন।'
ইভার বাবা ইউসুফ আলী বললেন, তিনি বিআরটিসির বাসচালক। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। ইভা পাশের আল মানারাত মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নার্সারির ছাত্রী ছিল। ইভা সম্পর্কে তিনি বললেন, 'আমার মেয়ের মতো মেয়েই হয় না। এত ছোট মেয়েকে কারা এমন করে মারল!'
ইউসুফ আলী জানান, গত ৩ নভেম্বর দুপুরের দিকে তাঁর কাছে ফোন এল_ইভাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পেয়েই বাসায় ছুটে যান। অনেক খুঁজে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর আর কথা বলতে পারছিলেন না ইউসুফ আলী। থেমে গেলেন।
ইভার মামা স্বপন বলেন, কী কারণে ইভাকে অপহরণ করা হলো এবং হত্যা করা হলো তাঁরা বুঝতে পারছেন না। ইভার বাবা গাড়ি চালান এবং তাঁরা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করে কোনো রকমে দিনাতিপাত করেন। চার লাখ টাকা এই পরিবারের কারো দেওয়ার সাধ্য নেই। আবার তাঁদের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতাও নেই। তাই কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বপন বলেন, পাশাপাশি বাসা হওয়ায় ইভা প্রায়ই তাঁদের বাসায় এসে খেলত। ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে খেলা শেষে নিজের বাসায় যাওয়ার কথা বলে ইভা তাঁদের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। ওই দিন রাত ৯টার দিকে তার ছোট ভাই রিপনের কাছে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, ইভা তাদের কাছে আছে। ওই ব্যক্তি ইভার মুক্তির বিনিময়ে চার লাখ টাকা দাবি করে। না হলে ইভাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ৪ নভেম্বর সকাল ৭টার দিকে আবার ফোন করে ওই ব্যক্তি; টাকা জোগাড় করে রাখা হয়েছে কি না জানতে চায়। এরপর তাঁরা ঘটনাটি পুলিশকে জানান। ৬ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবার ফোন আসে। ওই ব্যক্তি নিজেকে আলমগীর পরিচয় দিয়ে টাকা রেডি আছে কি না জানতে চায়। কোথায় টাকা নিয়ে যেতে হবে জানতে চাইলে সে বলে, ১২ নভেম্বর আবার ফোন করবে। ইভার সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করার কথা বললে ওপাশ থেকে জানানো হয়, ইভা চিৎকার করে কান্নাকাটি করছিল। তাই তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
স্বপন জানান, মোবাইল ফোন নম্বরটি শনাক্ত করার জন্য তাঁরা ডিবি অফিস ও থানায় যোগাযোগ করেন। জানতে পারেন, ফোনটি রেজিস্টার্ড, তবে কোনো নাম-ঠিকানা নেই নম্বরধারীর। ৭ নভেম্বর ঈদের দিন বাড়ির কাছেই সুবেদার আবদুল বাতেনের প্লটের পাশের পুকুরের পাড়ে গোসল করার সময় এক মহিলা একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি বিষয়টি তাঁদের জানান। বস্তা দেখে সন্দেহ হলে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে বস্তা খুলে হাত-পা ঘাড়ের সঙ্গে বাঁধা, চোখ উপড়ানো এবং থেঁতলানো অবস্থায় ইভার লাশ উদ্ধার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক শাহজাহান কালের কণ্ঠকে জানান, যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, কোথা থেকে করা হয়েছিল তা খুঁজে বের করার জন্য ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিবি এখনো প্রতিবেদন পাঠায়নি। তদন্ত চলছে।
থানার ওসি শামীম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই নৃশংস ঘটনায় ইভার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে। ঘটনাটি মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে, নাকি অন্য কোনো কারণে ঘটানো হয়েছে তা বের করার চেষ্টা চলছে। আমরা আশাবাদী, খুব শিগগির আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।'
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে খিলক্ষেত নামাপাড়া বোডগার্ড এলাকায় ইভাদের বাসায় গিয়ে দেখা গেল, শোকে পাথর পুরো পরিবার। ঘরের ভেতর ইভার মা শুয়ে আছেন। মায়ের পাশেই আড়াই বছরের ছোট বোন রুবা ঘুমিয়ে আছে। ইভার মা মরিয়ম কথা বলার চেষ্টা করেও পারছিলেন না। পরিবারের অন্য সদস্যদের চোখও ভেজা। নির্বাকপ্রায়। বুকফাটা আহাজারি নেই।
রুদ্ধ গলায় ইভার নানি আমিরুন নেসা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার দাদু-আপু এ কেমন ঈদ উপহার দিয়ে গেল সবাইকে? ওই পাষণ্ডরা কি মানুষ না? ওরা কি কোনো মানুষের পেটে জন্ম নেয়নি? কিভাবে পারল একটা ফুটফুটে পুতুলের মতো শিশুকে এভাবে খুন করতে? শুধুই কি খুন? ওরা ইভার চোখ উপড়ে ফেলেছে। হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিয়েছে। এগুলো কিভাবে সম্ভব? এতটুকু মাসুম বাচ্চার কী অপরাধ ছিল?'
বৃদ্ধা আমিরুন বললেন, 'ইভা ছিল ঘরের আলো। ওরা সব আলোই নিভিয়ে দিয়ে গেল।' কেন এমন হল সেটা তাঁরা কেউই বুঝতে পারছেন না। কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। অপহরণকারীরা তো তাঁদের ঘরের খবর জানে। চার লাখ টাকা দেওয়ার সাধ্য এই পরিবারের কারোরই নেই। তবে কি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে? মনে প্রশ্ন জাগলেও সেই কারণটা কী হতে পারে অনুমানেও বলতে পারলেন না এই বৃদ্ধা। শুধু তিনি কেন, বলতে পারলেন না পরিবারের কেউই।
বৃদ্ধা আমিরুন বিড়বিড় করে বললেন, 'আমার নাতনি সেদিন বাসায় যাচ্ছি বলে মামার বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পাশেই ওদের বাসা। সেই যে যাওয়া, আর ফিরে এল না। আসবেও না কোনো দিন।'
ইভার বাবা ইউসুফ আলী বললেন, তিনি বিআরটিসির বাসচালক। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। ইভা পাশের আল মানারাত মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নার্সারির ছাত্রী ছিল। ইভা সম্পর্কে তিনি বললেন, 'আমার মেয়ের মতো মেয়েই হয় না। এত ছোট মেয়েকে কারা এমন করে মারল!'
ইউসুফ আলী জানান, গত ৩ নভেম্বর দুপুরের দিকে তাঁর কাছে ফোন এল_ইভাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পেয়েই বাসায় ছুটে যান। অনেক খুঁজে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর আর কথা বলতে পারছিলেন না ইউসুফ আলী। থেমে গেলেন।
ইভার মামা স্বপন বলেন, কী কারণে ইভাকে অপহরণ করা হলো এবং হত্যা করা হলো তাঁরা বুঝতে পারছেন না। ইভার বাবা গাড়ি চালান এবং তাঁরা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করে কোনো রকমে দিনাতিপাত করেন। চার লাখ টাকা এই পরিবারের কারো দেওয়ার সাধ্য নেই। আবার তাঁদের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতাও নেই। তাই কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বপন বলেন, পাশাপাশি বাসা হওয়ায় ইভা প্রায়ই তাঁদের বাসায় এসে খেলত। ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে খেলা শেষে নিজের বাসায় যাওয়ার কথা বলে ইভা তাঁদের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। ওই দিন রাত ৯টার দিকে তার ছোট ভাই রিপনের কাছে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, ইভা তাদের কাছে আছে। ওই ব্যক্তি ইভার মুক্তির বিনিময়ে চার লাখ টাকা দাবি করে। না হলে ইভাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ৪ নভেম্বর সকাল ৭টার দিকে আবার ফোন করে ওই ব্যক্তি; টাকা জোগাড় করে রাখা হয়েছে কি না জানতে চায়। এরপর তাঁরা ঘটনাটি পুলিশকে জানান। ৬ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবার ফোন আসে। ওই ব্যক্তি নিজেকে আলমগীর পরিচয় দিয়ে টাকা রেডি আছে কি না জানতে চায়। কোথায় টাকা নিয়ে যেতে হবে জানতে চাইলে সে বলে, ১২ নভেম্বর আবার ফোন করবে। ইভার সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করার কথা বললে ওপাশ থেকে জানানো হয়, ইভা চিৎকার করে কান্নাকাটি করছিল। তাই তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
স্বপন জানান, মোবাইল ফোন নম্বরটি শনাক্ত করার জন্য তাঁরা ডিবি অফিস ও থানায় যোগাযোগ করেন। জানতে পারেন, ফোনটি রেজিস্টার্ড, তবে কোনো নাম-ঠিকানা নেই নম্বরধারীর। ৭ নভেম্বর ঈদের দিন বাড়ির কাছেই সুবেদার আবদুল বাতেনের প্লটের পাশের পুকুরের পাড়ে গোসল করার সময় এক মহিলা একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি বিষয়টি তাঁদের জানান। বস্তা দেখে সন্দেহ হলে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে বস্তা খুলে হাত-পা ঘাড়ের সঙ্গে বাঁধা, চোখ উপড়ানো এবং থেঁতলানো অবস্থায় ইভার লাশ উদ্ধার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক শাহজাহান কালের কণ্ঠকে জানান, যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, কোথা থেকে করা হয়েছিল তা খুঁজে বের করার জন্য ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিবি এখনো প্রতিবেদন পাঠায়নি। তদন্ত চলছে।
থানার ওসি শামীম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই নৃশংস ঘটনায় ইভার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে। ঘটনাটি মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে, নাকি অন্য কোনো কারণে ঘটানো হয়েছে তা বের করার চেষ্টা চলছে। আমরা আশাবাদী, খুব শিগগির আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।'
No comments