৫২ দিনের মাথায় আবারও সব জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল

মাত্র ৫২ দিনের মাথায় জ্বালানি তেলের দাম আবারও বাড়িয়েছে সরকার। অকটেন, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, কেরোসিন ও পেট্রলের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রাতে এক ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল রাত ১২টা থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর করা হয়েছে। গত ৬ মাসে এ নিয়ে তিন দফা দাম বাড়ালো সরকার।বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দাম না বাড়ার। তিনি বরং অন্যতম জ্বালানি সিএনজির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন। বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সিএনজির দাম ডিজেলের সমতুল্য করা হবে।


তার কথায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন টকশোতে মন্ত্রীর বক্তব্যকে অনভিপ্রেত, অপরিণামদর্শী বলে উল্লেখ করা হয়। পর্যবেক্ষকরা বলেন, সরকার জ্বালানির যে পরিমাণ দাম বাড়ায়, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে তার কয়েকগুণ। পরিবহন সেক্টরে দেখা দেয় নৈরাজ্য। সেদিকে পরোয়া না করেই সরকার আবার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিল। এতে পরিবহন, নিত্যপণ্যসহ দ্রব্যবাজারে আরেক দফা দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক দফা জ্বালানি মূল্য বাড়িয়েছে। এর ফল হয়েছে ভয়ঙ্কর। দ্রব্যমূল্য কয়েক দফা বেড়ে এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কাঁচাবাজার, চাল, মাছ, মাংসসহ সব পণ্যের বার বার দাম বাড়ানো হয়েছে পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাতে। সরকারি তরফে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেয়া হলেও ব্যবসায়ীরা কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধিকে।
গত রাত ১২টার পর থেকে প্রতি লিটার ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন, পেট্রল ও ফার্নেস অয়েলের বিক্রয়মূল্য হচ্ছে যথাক্রমে ৫৬ টাকা, ৫৬ টাকা, ৮৯ টাকা, ৮৬ টাকা ও ৫৫ টাকা। গতকাল এক তথ্য বিবরণীতে দাম বাড়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, দাম বাড়ার পরও লিটারপ্রতি ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলে সরকারকে যথাক্রমে ১৬.৩৯ টাকা, ১৬.৩১ টাকা ও ৪.৯৭ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এ নিয়ে ৬ মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লো তিন দফা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস ওয়েলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা হারে বাড়ায় সরকার। এর আগে গত ৫ মে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, গত ২১ অক্টোবর, ২০১১ তারিখের আন্তর্জাতিক মূল্য অনুযায়ী দেশে সংগ্রহ ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ব্যবধানের কারণে বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) বর্তমানে
ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলে লিটারপ্রতি যথাক্রমে ২১ দশমিক ৩৯ টাকা, ২১ দশমিক ৩১ টাকা ও ৯ দশমিক ৯৭ টাকা লোকসান দিচ্ছে।
ভারতের কলকাতায় বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য প্রায় ৭০ টাকা এবং প্রতি লিটার পেট্রলের মূল্য প্রায় ১১৭ টাকা। উল্লেখ করে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, সীমান্তবর্তী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য যথেষ্ট কম থাকায় চোরাচালানের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা ও ঝুঁকি থেকেই যায়।
সরকারের জ্বালানি বিভাগ গতকাল সন্ধ্যায় এক বৈঠকে অনেকটা চুপিসারেই আবারও সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নেয়।
বস্তুত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জ্বালানি তেলের সঙ্গে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) সমন্বয় করার ঘোষণা দেয়ার একদিনের মাথায় সরকার পক্ষ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নিল।
এদিকে হঠাত্ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর মধ্যরাতে পাম্পগুলোতে তেল নিতে আসা গাড়ির চালকরা দারুণ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তারা মনে করছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অন্য দ্রব্যের ওপরও পড়বে। এর ফলে জনজীবনে অস্থিরতা তৈরি হবে।

No comments

Powered by Blogger.