ভ্যাট প্রদান সহজ করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব by নিখিল ভদ্র

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রদান পদ্ধতি সহজ করার লক্ষ্যে ভ্যাট আইনে সংশোধনী আনতে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। সংশোধিত আইনটি পাস হলে ইলেকট্রনিক ব্যাংক ট্রান্সফার, ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধ করা যাবে। এ ছাড়া ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে একটি কম্পানির বিভিন্ন স্থানে থাকা শাখার আলাদা নিবন্ধনের পরিবর্তে একটিই নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা হবে। একই সঙ্গে ট্যারিফ ভ্যালু তুলে দেওয়া হবে।অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ভ্যাট আইনের এ খসড়া প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে।


গত ২৬ অক্টোবর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আইনটি নিয়ে আলোচনার পর প্রস্তাবটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর চূড়ান্ত করার আগে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৯১ সালে প্রণীত ভ্যাট বা মূসক আইনে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সে সময়ের তুলনায় এখন মূসক আদায় অনেক বেড়েছে। তাই আইনটি যুগোপযোগী করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পুরনো মূসক আইন সংস্কার করে নতুন মূসক আইন প্রবর্তনের আগে বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে আইন প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে সংসদীয় কমিটির কাছে এনবিআরের পাঠানো খসড়ায় বিদ্যমান আইনের জটিলতাগুলো তুলনামূলক চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে সে ক্ষেত্রে নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি কম্পানির জন্য একটিই নিবন্ধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কম্পানির শাখা অফিস বা আউটলেটও নিবন্ধিত হতে পারবে যদি ওইগুলোর পৃথক ব্যাংক হিসাব থাকে। ১৯৯১ সালে প্রবর্তিত ভ্যাট আইনে রয়েছে, যদি কোনো কম্পানির বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ইউনিট বা আউটলেট থাকে তবে প্রতিটি ইউনিট বা আউটলেট আলাদাভাবে নিবন্ধিত হতে হবে। এ ব্যবস্থা কম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং করদাতাদের জন্য কষ্টসাধ্য। তাই এই পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনকি সিঙ্গেল বা একক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে করদাতারা স্থান পরিবর্তন করলেও তা কোনো প্রভাব ফেলবে না।
ভ্যাট রেটের ক্ষেত্রেও এককভাবে ১৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড রেট রাখা হবে। এ ছাড়া ভ্যাট পরিশোধ সহজসাধ্য করার জন্য শুধু ট্রেজারি চালানের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ব্যাংক ট্রান্সফার, ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার বিধান রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে হাতে গোনা ১০-১২টি বড় করপোরেট কম্পানি ভ্যাট ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ পায়। এ ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাই খসড়ায় ভ্যাট ডেটা ইলেকট্রনিকভাবে পরিচালনা ও কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনের সবচেয়ে দুর্বল দিক হিসেবে ট্যারিফ ও ট্রানকেইটেড বেইজ ভ্যালুর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। খসড়ায় দুটো পদ্ধতিই তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আংশিক ইনভয়েস পদ্ধতির পরিবর্তে পূর্ণ ইনভয়েস পদ্ধতি চালুর বিধান রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া খসড়ায় কর প্রশাসনের উন্নয়ন, রাজস্ব বাড়ানো ও দুর্নীতি কমাতে ভ্যাট রিটার্ন প্রক্রিয়া স্থানীয় ও সার্কেল অফিসের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ও অনলাইনে রিটার্ন জমাদান পদ্ধতি চালুর কথা বলা হয়েছে।
ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে খসড়া আইনে অব্যাহতি তালিকা ছোট করার প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, আইন সংশোধন বা অব্যাহতি তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ অব্যাহতি মঞ্জুর করতে পারবে। আর শুধু নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ক্যাবিনেট অব্যাহতি মঞ্জুর করতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোনো আইনের মাধ্যমে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া খসড়া আইনে করদাতাদের জন্য রাজস্ব আদায় থেকে ৫ শতাংশ হারে রিফান্ড ও শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হারে পুরস্কার দিতে একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট স্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কর ফাঁকি বন্ধে ভ্যাট বিভাগকে ভ্যাটদাতাদের ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা বাড়ানো, ট্যাঙ্ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও ভ্যাট সম্মাননা কার্ড দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.