পাটের বাজার মন্দা by ইফতেখার মাহমুদ
তিন বছর বিশ্ববাজারে পাটের রমরমা ব্যবসার পর এবার মন্দা শুরু হয়েছে। এই মন্দার কবলে পড়েছেন বাংলাদেশের পাটচাষিরাও। বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটে পাট এনে তা বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। অনেকে মনের দুঃখে পাট পুড়িয়ে ফেলছেন। কেউ কেউ পানিতে ফেলে দিচ্ছেন পাট। রপ্তানিকারকেরা গুদামে পাট নিয়ে বসে আছেন। বিশ্ববাজারেও ক্রেতা নেই। দুই মাস ধরে দেশে-বিদেশে পাটের দাম অব্যাহতভাবে কমছে।
দুই বছর ধরে দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কিন্তু এবার দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছর সবচেয়ে নিম্নমানের পাটের মণ ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। দুই মাস ধরে দাম কমতে কমতে চলতি সপ্তাহে তা ৭০০ টাকায় নেমে এসেছে। সবচেয়ে ভালো মানের পাটের দর ৩০০০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৪০০ টাকা।
নিম্নমানের পাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) এ বছর বেশি দাম দিয়ে উন্নত মানের পাট বেশি কিনেছে। এ জন্য নতুন করে ২০০ কোটি টাকা দেনা হয়েছে বিজেএমসি। এখন সেই পাট বিক্রিও করতে পারছে না সংস্থাটি। সরকারি পাটকলগুলোতে বর্তমানে ১১০০ কোটি টাকার পাট পড়ে আছে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বজুড়ে পাটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও চাহিদা বাড়ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। বাজার ধরতে পাটজাত বহুমুখী পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাত করা প্রয়োজন। কিন্তু এ রকম কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, সরকারি আশ্বাস ও বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে তিন বছর ধরে চাষিরা পাটের আবাদ অব্যাহতভাবে বাড়িয়েছেন। দুই বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করে ১৮টি নতুন পাটকল স্থাপিত হয়েছে। বাড়তি উৎপাদিত পাটপণ্য বাজারজাত করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে পাটের নতুন বাজার খোঁজা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছরে বাংলাদেশ পাটের নতুন বাজার পায়নি, পুরোনো ক্রেতাদের কাছেই পাট বিক্রি করেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বাজারে মন্দা শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ বিপাকে পড়েছে।
বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালে সরকার পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটপণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন করেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই আইন বাস্তবায়িত হলে দেশে উৎপাদিত পাটের ৬০ শতাংশ দেশীয় শিল্পকারখানায় ব্যবহূত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই আইন বাস্তবায়ন শুরুই হয়নি। ভারত এই আইন বাস্তবায়ন করে অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদিত পাটের ৯০ শতাংশই নিজেরা ব্যবহার করছে। আর বাংলাদেশে এই হার মাত্র ৫ শতাংশ।
মন্দা পরিস্থিতির কারণে পাট কেনার ভরা মৌসুমেও সরকারি-বেসরকারি কলগুলো পাট কেনা কমিয়ে দিয়েছে। বেসরকারি পাটকলগুলো গত বছরের চেয়ে চার লাখ থেকে ছয় লাখ টন পাট কম কিনেছে। বেশির ভাগ বেসরকারি পাটকল পাট কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এ জন্য প্রায় প্রতিদিনই দাম কমছে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিবিয়া, ইরান ও তুরস্ক বাংলাদেশের পাটের বড় বাজার ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসংকট, তুরস্কে ভূমিকম্প ও ডলারের দামের ওঠানামার কারণে বাংলাদেশের মূল আন্তর্জাতিক ক্রেতারা পাট কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। জানুয়ারি থেকে সংকট কেটে যাবে এবং দাম বাড়তে থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
পাট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পাটজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত ওই বাজার ধরার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মন্দার পূর্বাভাস: পাটের দাম পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা উইলহেম জি ক্লাসেনের (ডব্লিউজিসি) বলছে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মধ্যপ্রাচ্যসংকটের কারণে কার্পেট ও পাটজাত শৌখিন পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। ভারতে ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্যমান ১০ শতাংশ কমে যাওয়ায় বিশ্বের অন্যতম প্রধান পাট ক্রেতা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে পাট কেনা বন্ধ রেখেছেন। সর্বশেষ থাইল্যান্ডে বন্যার কারণে পাটের বিশ্ববাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। কারণ থাইল্যান্ড হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পাট ক্রয়-বিক্রয়কেন্দ্র।
বিপাকে বিজেএমসি: দেশের প্রধান হাটগুলোতে কিছুটা নিম্নমানের পাটের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি পাটকলগুলো বিজেএমসির মাধ্যমে নিম্নমানের পাট সবচেয়ে বেশি কেনা হয়। যশোর, সাতক্ষীরা ও দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত হওয়া এই পাট সাধারণত থলে, বস্তা ও রশি তৈরির কাজে ব্যবহূত হয়।
উন্নত মানের পাটের প্রধান ক্রেতা ছিল পাটসুতা ও বহুমুখী পাটপণ্যের কারখানাগুলো। এ বছর পাট কেনার ভরা মৌসুমে সরকারি পাটকলগুলো বেশি দাম দিয়ে উন্নত মানের পাট কিনেছে। বেসরকারি পাটকলগুলো পাট কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। যা কিনছে, তা-ও সবচেয়ে উন্নত মানের বাংলা তোষা পাট। ফলে হাটে আসা নিম্নমানের পাটের ক্রেতা ও দাম কমেছে।
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সরকারি পাটকলগুলোর জন্য ১২ লাখ বেল পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছিল। ঈদের আগ পর্যন্ত বিজেএমসি মোট আট লাখ বেল পাট কিনেছে, যার মধ্যে সাত লাখ বেল পাট উন্নত মানের। আগে বিজেএমসি অর্ধেকের বেশি নিম্নমানের ও বাকিটা উন্নত মানের পাট কিনত।
পাটমন্ত্রী বলেন, পাটের ব্যবসার বেশির ভাগই বাকিতে হয়। বিজেএমসির গুদামে ১১০০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে সংকট কেটে গেলে পাট বিক্রি বাড়বে। ফলে ব্যবসায়ীদের সব দেনা পরিশোধ করা হবে।
অন্যরাও পাট কিনছে না: পাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা কাঁচাপাট রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে কাঁচা পাটের রপ্তানি ও দাম অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। গত বছর প্রতি টন পাট বিশ্ববাজারে ৭০০ ডলার করে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা ৪২০ থেকে ৪৬০ ডলারে নেমে এসেছে। রপ্তানিও বন্ধ রয়েছে।
বিজেএ গত বছর রেকর্ড পরিমাণে ২২ লাখ বেল পাট রপ্তানি করেছিল। চলতি বছর তা ১৮ লাখ টনে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কাঁচা পাটের ব্যবসায়ীরা।
বিজেএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ সৈয়দ আলী বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে আমরা প্রতি মণ পাট ১৬০০ টাকা করে কিনেছি। কিন্তু পাটকলগুলো পাট কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দাম কমতে শুরু করে। প্রতি মণ পাটের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে আছেন।
নিম্নমানের পাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) এ বছর বেশি দাম দিয়ে উন্নত মানের পাট বেশি কিনেছে। এ জন্য নতুন করে ২০০ কোটি টাকা দেনা হয়েছে বিজেএমসি। এখন সেই পাট বিক্রিও করতে পারছে না সংস্থাটি। সরকারি পাটকলগুলোতে বর্তমানে ১১০০ কোটি টাকার পাট পড়ে আছে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বজুড়ে পাটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও চাহিদা বাড়ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। বাজার ধরতে পাটজাত বহুমুখী পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাত করা প্রয়োজন। কিন্তু এ রকম কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, সরকারি আশ্বাস ও বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে তিন বছর ধরে চাষিরা পাটের আবাদ অব্যাহতভাবে বাড়িয়েছেন। দুই বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করে ১৮টি নতুন পাটকল স্থাপিত হয়েছে। বাড়তি উৎপাদিত পাটপণ্য বাজারজাত করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে পাটের নতুন বাজার খোঁজা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছরে বাংলাদেশ পাটের নতুন বাজার পায়নি, পুরোনো ক্রেতাদের কাছেই পাট বিক্রি করেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বাজারে মন্দা শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ বিপাকে পড়েছে।
বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালে সরকার পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটপণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন করেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই আইন বাস্তবায়িত হলে দেশে উৎপাদিত পাটের ৬০ শতাংশ দেশীয় শিল্পকারখানায় ব্যবহূত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই আইন বাস্তবায়ন শুরুই হয়নি। ভারত এই আইন বাস্তবায়ন করে অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদিত পাটের ৯০ শতাংশই নিজেরা ব্যবহার করছে। আর বাংলাদেশে এই হার মাত্র ৫ শতাংশ।
মন্দা পরিস্থিতির কারণে পাট কেনার ভরা মৌসুমেও সরকারি-বেসরকারি কলগুলো পাট কেনা কমিয়ে দিয়েছে। বেসরকারি পাটকলগুলো গত বছরের চেয়ে চার লাখ থেকে ছয় লাখ টন পাট কম কিনেছে। বেশির ভাগ বেসরকারি পাটকল পাট কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এ জন্য প্রায় প্রতিদিনই দাম কমছে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিবিয়া, ইরান ও তুরস্ক বাংলাদেশের পাটের বড় বাজার ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসংকট, তুরস্কে ভূমিকম্প ও ডলারের দামের ওঠানামার কারণে বাংলাদেশের মূল আন্তর্জাতিক ক্রেতারা পাট কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। জানুয়ারি থেকে সংকট কেটে যাবে এবং দাম বাড়তে থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
পাট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পাটজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত ওই বাজার ধরার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মন্দার পূর্বাভাস: পাটের দাম পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা উইলহেম জি ক্লাসেনের (ডব্লিউজিসি) বলছে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মধ্যপ্রাচ্যসংকটের কারণে কার্পেট ও পাটজাত শৌখিন পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। ভারতে ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্যমান ১০ শতাংশ কমে যাওয়ায় বিশ্বের অন্যতম প্রধান পাট ক্রেতা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে পাট কেনা বন্ধ রেখেছেন। সর্বশেষ থাইল্যান্ডে বন্যার কারণে পাটের বিশ্ববাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। কারণ থাইল্যান্ড হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পাট ক্রয়-বিক্রয়কেন্দ্র।
বিপাকে বিজেএমসি: দেশের প্রধান হাটগুলোতে কিছুটা নিম্নমানের পাটের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি পাটকলগুলো বিজেএমসির মাধ্যমে নিম্নমানের পাট সবচেয়ে বেশি কেনা হয়। যশোর, সাতক্ষীরা ও দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত হওয়া এই পাট সাধারণত থলে, বস্তা ও রশি তৈরির কাজে ব্যবহূত হয়।
উন্নত মানের পাটের প্রধান ক্রেতা ছিল পাটসুতা ও বহুমুখী পাটপণ্যের কারখানাগুলো। এ বছর পাট কেনার ভরা মৌসুমে সরকারি পাটকলগুলো বেশি দাম দিয়ে উন্নত মানের পাট কিনেছে। বেসরকারি পাটকলগুলো পাট কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। যা কিনছে, তা-ও সবচেয়ে উন্নত মানের বাংলা তোষা পাট। ফলে হাটে আসা নিম্নমানের পাটের ক্রেতা ও দাম কমেছে।
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সরকারি পাটকলগুলোর জন্য ১২ লাখ বেল পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছিল। ঈদের আগ পর্যন্ত বিজেএমসি মোট আট লাখ বেল পাট কিনেছে, যার মধ্যে সাত লাখ বেল পাট উন্নত মানের। আগে বিজেএমসি অর্ধেকের বেশি নিম্নমানের ও বাকিটা উন্নত মানের পাট কিনত।
পাটমন্ত্রী বলেন, পাটের ব্যবসার বেশির ভাগই বাকিতে হয়। বিজেএমসির গুদামে ১১০০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে সংকট কেটে গেলে পাট বিক্রি বাড়বে। ফলে ব্যবসায়ীদের সব দেনা পরিশোধ করা হবে।
অন্যরাও পাট কিনছে না: পাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা কাঁচাপাট রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে কাঁচা পাটের রপ্তানি ও দাম অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। গত বছর প্রতি টন পাট বিশ্ববাজারে ৭০০ ডলার করে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা ৪২০ থেকে ৪৬০ ডলারে নেমে এসেছে। রপ্তানিও বন্ধ রয়েছে।
বিজেএ গত বছর রেকর্ড পরিমাণে ২২ লাখ বেল পাট রপ্তানি করেছিল। চলতি বছর তা ১৮ লাখ টনে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কাঁচা পাটের ব্যবসায়ীরা।
বিজেএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ সৈয়দ আলী বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে আমরা প্রতি মণ পাট ১৬০০ টাকা করে কিনেছি। কিন্তু পাটকলগুলো পাট কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দাম কমতে শুরু করে। প্রতি মণ পাটের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে আছেন।
No comments