পর্যটন-বাঁশখালীর ইকোপার্ক নজর কেড়েছে সবার by উজ্জ্বল বিশ্বাস,

প্রকৃতি যেন নিজেকে উজাড় করে সব রূপ ঢেলে দিয়েছে বাঁশখালীর প্রান্তরে। এখানে এলেই দেখা মেলে স্বপি্নল নৈসর্গিক সৌন্দর্যের। আর এর সঙ্গে নতুন মাত্রা হিসেবে এবার যোগ হয়েছে ইকোপার্ক। সাম্প্রতিককালে এই ইকোপার্কের সৌন্দর্য বাড়াতে এলজিইডি ও বন বিভাগ ১৬ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হাতে নিয়েছে। অচিরেই এটিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আলোকিত পর্যটন স্পটে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ও উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম। এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতেই এর স্পষ্ট আভাস মিলেছে। ঈদের আগেই পর্যটকদের জন্য ইকোপার্কের রেস্ট হাউস ও কটেজগুলো ঢেলে সাজানো হয়েছিল।


ঈদের সময় পর্যটকদের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষত চট্টগ্রাম মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ঈদের ছুটি কাটাতে সপরিবারে ছুটে আসেন এই পার্কে। মন কেড়ে নেওয়া সৌন্দর্য উপভোগ করেই ফিরেছেন তাঁরা।
বাঁশখালীতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিষয়টি বহুমাত্রিক। এখানে পর্যটন শিল্পের অসংখ্য নিদর্শন স্তরে স্তরে সাজানো। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, খাল ও সমতল ভূমিবেষ্টিত বাঁশখালীতে রয়েছে ২৫ কিলোমিটার বালুচরসমৃদ্ধ সৈকত, আট কিলোমিটার পাহাড়ি হ্রদ ও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা নানা জীববৈচিত্র্যের সনি্নবেশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইকোপার্ক।
তিন হাজার ৬৬২ একর সীমানাজুড়ে পুুকরিয়ায় সুচারু চানপুর বৈলগাঁও চা-বাগান, সমুদ্র মোহনায় খাটখালী মিনি সমুদ্রবন্দর, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও চিংড়ি চাষের মনলোভা দৃশ্য, লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে পানি থেকে টাকা আয়ের মোহনীয় দৃশ্য, নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন, পুরাকীর্তি, বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, কেয়াং এবং আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, দরবেশ-আউলিয়া এবং সাধু-সন্ন্যাসী তথা ভিক্ষুদের তীর্থভূমি। কঙ্বাজার বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের নক্ষত্র। বাঁশখালী উপজেলা কঙ্বাজার জেলার সঙ্গে লাগোয়া একটি উপজেলা। অদূর ভবিষ্যতে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে বাঁশখালীর ওপর দিয়ে কঙ্বাজারে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা যাতায়াত করবেন। সেজন্য চট্টগ্রাম-বাঁশখালী-কঙ্বাজার মহাসড়কের নির্মাণকাজও প্রায় শেষের পথে।
বাঁশখালী ইকোপার্কের সুউচ্চ পাহাড় থেকে চা-বাগান ও সমুদ্র বালুচরে ক্যাবল কার সংযোজন করা হলে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের মাত্রা বহু গুণে বেড়ে যাবে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। বাঁশখালী ইকোপার্কর্কে ঘিরে এখনই পর্যটকদের আগ্রহের শেষ নেই। চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য এ স্থানটির গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ইকোপার্ককে গবেষণা কাজে ব্যবহার করছেন। বাঁশখালী ইকোপার্কে রয়েছে বহুমুখী কৃত্রিম সৌন্দর্যের স্থাপনা, আর বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু। বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, জলজ উদ্ভিদ, লেকের বিশাল জলরাশি, কাশফুলের দৃশ্য ও বন্য প্রাণীর সুরেলা কোলাহলে এক অনন্য অনুভূতি সৃষ্টি হয় ছয় ঋতুতে। সারি সারি পাহাড় চূড়ায় নানা প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার গ্রাম্য বধূর মতোই শান্তরূপ নিয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে। সুউচ্চ পাহাড়ের শীর্ষদেশে উঠে অনায়াসে খালি চোখেই দেখা যায় অদূরে বঙ্গোপসাগরের অথৈ জলরাশি। বিকেলে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্ত দেখার দুর্লভ মুহূর্ত। বাঁশখালীর পশ্চিমাঞ্চলে ২৫ কিলোমিটার সমুদ্র বালুচর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁশখালী উপকূলকে রক্ষণাবেক্ষণ করে সরাসরি কঙ্বাজারের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত বাঁধ দিয়ে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুললে বহুমুখী সুবিধা সৃষ্টি হবে। প্রতিবছর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূল রক্ষা পাবে, দেশীয় সম্পদের চোরাচালান রোধ করা যাবে, মৎস্য চাষিরা জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাবে, পর্যটন শিল্পে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হবে। কুতুবদিয়া চ্যানেল, মহেশখালী চ্যানেল ও বাঁশখালী চ্যানেল নিয়ে সংযোজিত মোহনায় সামুদ্রিক জলের নানা বর্ণিল দৃশ্য সহজেই দেখা যাবে। উপকূলবর্তী জমিগুলোতে লবণ উৎপাদন, চিংড়ি চাষ ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের দৃশ্য দেখাও সম্ভব হবে। এ ছাড়া ব্রিটিশ যুদ্ধে গণ্ডামারার সাগরবক্ষে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান, সাধনপুরে কামানের মহড়ার দৃশ্য, ইলশার ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাণীগ্রামের শিখ মন্দিরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নানা পুরাকীর্তি সত্যিই দেখার মতো।

No comments

Powered by Blogger.