চোরাই জিরার ট্রেন! by বিশ্বজিৎ পাল বাবু,
'ঢাকাগামী আন্তনগর মহানগর প্রভাতী ট্রেন লালমাই স্টেশনে আসিতেছে। ট্রেনটি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে কুমিল্লা স্টেশনে এসে পেঁৗছবে।' সকাল সোয়া ১১টার দিকে মাইকে এমন ঘোষণা কুমিল্লা রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষের। ঘোষণা শুনেই স্টেশনে অপেক্ষমাণ মাঝবয়সী কিছু নারী-পুরুষ নড়েচড়ে বসলেন। এর মিনিট দুয়েকের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তাঁদের দৌড়ঝাঁপ।ট্রেনটি স্টেশনে এসে তখনো দাঁড়ায়নি। এরই মধ্যে দুই নম্বর প্লাটফরম ও দুটি রেললাইনের মাঝের জায়গা পণ্যবোঝাই বস্তায় সয়লাব! প্রতিটি বস্তার গায়ে লেখা বিভিন্ন পোলট্রি ফিড কম্পানির নাম।
অথচ আড়ালে অন্য জিনিস। স্টেশন প্লাটফরমের পূর্ব দিকে গিয়ে একটু উঁকি দিয়ে দেখা গেল, রেলওয়ে কলোনির একটি কাঁচাঘর থেকে আনা হচ্ছে এসব বস্তা। ঘরের দরজায় 'বাবর' লেখা সাদা কাগজ সাঁটানো। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশায় বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য এনে স্টেশনে রাখা হয়।
স্থানীয় দুই যুবক জানান, এটি সাবেক রেল কর্মচারী বাবরের বাসা। বস্তাগুলোতে রয়েছে ভারতীয় জিরা, গুঁড়োদুধ, কিশমিশসহ নানা ধরনের মসলা। ট্রেনে এসব ভারতীয় পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হবে। প্রতিদিনই ওই ঘরে এসব চোরাই ভারতীয় পণ্য এনে রাখা হয়।
কুমিল্লা স্টেশন থেকে এভাবে ট্রেনে করে প্রতিদিনই ভারতীয় জিরাসহ অন্যান্য পণ্য পাচার হচ্ছে_এমন খবরের ভিত্তিতেই গত ২ নভেম্বর সরেজমিনে যাওয়া। ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে কুমিল্লা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ভ্রমণকালে সচক্ষে দেখা গেল অবাধ চোরাচালানের মচ্ছব। চোরাকারবারিদের দাপটে অসহায় সাধারণ যাত্রীরা।
সাধারণ যাত্রীরা বলেন, 'এটি বাংলাদেশের কোনো ট্রেন নয়, যেন ভারতীয় জিরা পরিবহনের গাড়ি।' জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে ট্রেনে ভারতীয় জিরা, কিশমিশসহ বিভিন্ন মসলা পাচার গত এক সপ্তাহে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে মহানগর প্রভাতী কুমিল্লা স্টেশন ছেড়ে আসে। এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ট্রেনের বগিগুলোতে ওঠানো হয় শতাধিক বস্তা ভারতীয় পণ্য। বাহার নামে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য ট্রেনে মাল তোলার আগে নানা বিষয় তদারকি করছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাদা পোশাকে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো দুই সদস্য। ওই দুজন বাদে আরো কয়েকজন চোরাই পণ্যের বাহকদের থেকে অর্থ আদায় করেন।
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাহার বলেন, 'এইডি গরম মসল্লা, ভারতের গরম মসল্লা। মহানগরে যাইবো।' আপনার সঙ্গে থাকা দুজন যারা বস্তার মালিকদের থেকে টাকা নিল তারা নাকি আপনাদের ডিপার্টমেন্টের লোক? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আরে না, হেরা তো রিকশা ডাইবার। মাল যে আনছে হের বাড়া দিতাছে।' দুজনই প্যান্ট-শার্ট পরা রিকশাওয়ালা কি না_এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে তিনি বলেন, 'আরে হেরা মনে অয় সিএনজি (অটোরিকশা) ডাইবার।'
ট্রেন ছাড়ার পর কথা হয় 'ট' বগির যাত্রী সরকারি চাকুরে ঢাকার রাহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত তিন-চারটি বগি ঘুরলাম। কিন্তু একটি টয়লেটেও যেতে পারছি না। যেটিতে যাই সেটিতেই দেখি পণ্য বোঝাই বস্তার পাহাড়। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলতেও দেখছি না।'
নোয়াখালী চৌমুহনীর রাসেল বলেন, 'আমি বগির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কুমিল্লা থেকে এসব বস্তা ওঠানোর সময় এক ধরনের হুড়োহুড়ি দেখেছি। যে কারণে সঙ্গে থাকা একজনকে এখন পাচ্ছি না। কথা বলতে গেলে লোকজন (চোরাচালানিরা) আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে।'
একাধিক চোরাচালানি জানায়, কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে আসা এসব ভারতীয় পণ্য তারা কুমিল্লা শহরে বসেই কেনে। কেউ কেউ সরাসরি ভারত থেকেও আনে। কুমিল্লা থেকে এসব জিরা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ভৈরবে বিক্রি করা হয়। সীমান্ত থেকে শুরু করে ট্রেনে পারাপার পর্যন্ত একেক প্যাকেট জিরা কিংবা গুঁড়োদুধে খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক কেজি জিরায় লাভ থাকে পাঁচ থেকে ১০ টাকা।
'ঝ' বগির টয়লেটে পণ্য রাখা এক নারী চোরাচালানি বলেন, 'এক কেজি ওজনের বিশ-ত্রিশ প্যাকেট জিরা ভৈরব নিয়া বেচি। এরে দেয়ন হেরে দেয়ন এইতা করা লাব বেশি একটা অয়না। পেডের দায়ে কোনো রহম কাম কইরা যাইতাছি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'টেহা কেডা নিব বুজেন না। চারটা-পাঁচটা পার্টিরে টেহা দেয়ন লাগে। নাইলে মাল ধইরা চালান দিব। যত টেহা দিমু, এর বাইরে মাল নিলে মাইদ্যে মাইদ্যে ধইরা রাইক্কা দে।'
স্থানীয় দুই যুবক জানান, এটি সাবেক রেল কর্মচারী বাবরের বাসা। বস্তাগুলোতে রয়েছে ভারতীয় জিরা, গুঁড়োদুধ, কিশমিশসহ নানা ধরনের মসলা। ট্রেনে এসব ভারতীয় পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হবে। প্রতিদিনই ওই ঘরে এসব চোরাই ভারতীয় পণ্য এনে রাখা হয়।
কুমিল্লা স্টেশন থেকে এভাবে ট্রেনে করে প্রতিদিনই ভারতীয় জিরাসহ অন্যান্য পণ্য পাচার হচ্ছে_এমন খবরের ভিত্তিতেই গত ২ নভেম্বর সরেজমিনে যাওয়া। ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে কুমিল্লা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ভ্রমণকালে সচক্ষে দেখা গেল অবাধ চোরাচালানের মচ্ছব। চোরাকারবারিদের দাপটে অসহায় সাধারণ যাত্রীরা।
সাধারণ যাত্রীরা বলেন, 'এটি বাংলাদেশের কোনো ট্রেন নয়, যেন ভারতীয় জিরা পরিবহনের গাড়ি।' জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে ট্রেনে ভারতীয় জিরা, কিশমিশসহ বিভিন্ন মসলা পাচার গত এক সপ্তাহে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে মহানগর প্রভাতী কুমিল্লা স্টেশন ছেড়ে আসে। এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ট্রেনের বগিগুলোতে ওঠানো হয় শতাধিক বস্তা ভারতীয় পণ্য। বাহার নামে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য ট্রেনে মাল তোলার আগে নানা বিষয় তদারকি করছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাদা পোশাকে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো দুই সদস্য। ওই দুজন বাদে আরো কয়েকজন চোরাই পণ্যের বাহকদের থেকে অর্থ আদায় করেন।
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাহার বলেন, 'এইডি গরম মসল্লা, ভারতের গরম মসল্লা। মহানগরে যাইবো।' আপনার সঙ্গে থাকা দুজন যারা বস্তার মালিকদের থেকে টাকা নিল তারা নাকি আপনাদের ডিপার্টমেন্টের লোক? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আরে না, হেরা তো রিকশা ডাইবার। মাল যে আনছে হের বাড়া দিতাছে।' দুজনই প্যান্ট-শার্ট পরা রিকশাওয়ালা কি না_এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে তিনি বলেন, 'আরে হেরা মনে অয় সিএনজি (অটোরিকশা) ডাইবার।'
ট্রেন ছাড়ার পর কথা হয় 'ট' বগির যাত্রী সরকারি চাকুরে ঢাকার রাহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত তিন-চারটি বগি ঘুরলাম। কিন্তু একটি টয়লেটেও যেতে পারছি না। যেটিতে যাই সেটিতেই দেখি পণ্য বোঝাই বস্তার পাহাড়। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলতেও দেখছি না।'
নোয়াখালী চৌমুহনীর রাসেল বলেন, 'আমি বগির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কুমিল্লা থেকে এসব বস্তা ওঠানোর সময় এক ধরনের হুড়োহুড়ি দেখেছি। যে কারণে সঙ্গে থাকা একজনকে এখন পাচ্ছি না। কথা বলতে গেলে লোকজন (চোরাচালানিরা) আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে।'
একাধিক চোরাচালানি জানায়, কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন সীমান্ত হয়ে আসা এসব ভারতীয় পণ্য তারা কুমিল্লা শহরে বসেই কেনে। কেউ কেউ সরাসরি ভারত থেকেও আনে। কুমিল্লা থেকে এসব জিরা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ভৈরবে বিক্রি করা হয়। সীমান্ত থেকে শুরু করে ট্রেনে পারাপার পর্যন্ত একেক প্যাকেট জিরা কিংবা গুঁড়োদুধে খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক কেজি জিরায় লাভ থাকে পাঁচ থেকে ১০ টাকা।
'ঝ' বগির টয়লেটে পণ্য রাখা এক নারী চোরাচালানি বলেন, 'এক কেজি ওজনের বিশ-ত্রিশ প্যাকেট জিরা ভৈরব নিয়া বেচি। এরে দেয়ন হেরে দেয়ন এইতা করা লাব বেশি একটা অয়না। পেডের দায়ে কোনো রহম কাম কইরা যাইতাছি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'টেহা কেডা নিব বুজেন না। চারটা-পাঁচটা পার্টিরে টেহা দেয়ন লাগে। নাইলে মাল ধইরা চালান দিব। যত টেহা দিমু, এর বাইরে মাল নিলে মাইদ্যে মাইদ্যে ধইরা রাইক্কা দে।'
No comments