ভারতীয় বিনিয়োগ আসছে জর্দা-সুপারিতে! by আবুল কাশেম
জর্দা, সুপারি, মশার কয়েল ও বিস্কুট। বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের ব্যবসায়ীদের আগ্রহের বিনিয়োগ খাতের মধ্যে এ চারটি খাতও রয়েছে। এসব খাতে বিদেশি বিনিয়োগের দরকার আছে কি না_এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের বিনিয়োগ বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, বিধি-নিষেধ রয়েছে_এমন চারটি খাত ছাড়া সব কিছুতেই বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন করেন তাঁরা।ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব বছরদুয়েক ধরে আলোচনার পর আর এগোয়নি। বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের আনাগোনা থাকলেও বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত অথবা শ্রমঘন, ভারী ও উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে ভারতীয় বিনিয়োগ আসেনি।
মোবাইল ফোন, তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়াও কেশবিন্যাস, খাবারের দোকানের মতো সেবা খাতে ভারতীয়রা বাংলাদেশে কিছু ব্যবসা শুরু করেছেন।
বিনিয়োগ বোর্ডের নিবন্ধনের তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ৪৩টি উদ্যোগ নিবন্ধিত হয়েছে। প্রস্তাবিত এ উদ্যোগগুলোর মধ্যে ২৫টিরই পুঁজির পরিমাণ ১০ লাখ ডলারেরও কম। সব কয়টি বিনিয়োগ প্রস্তাবে মোট ৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে, টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এসব অর্থ বিনিয়োগ হলে নিবন্ধিত প্রস্তাব অনুযায়ী কর্মসংস্থান হওয়ার কথা সাত হাজার ৯৮২ জনের; কিন্তু এই প্রস্তাবগুলোর কত শতাংশ আদৌ বাস্তবায়ন হয়েছে, তার কোনো তথ্য বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে নেই।
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে বিনিয়োগ বোর্ডে বাবা জর্দার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়। সেখানে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় মাত্র এক লাখ ৪২ হাজার ডলার। এতে ২৭ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে নিবন্ধনে বলা হয়েছে। ভারতে বড় ধরনের বিনিয়োগ থাকলেও মারিকো কম্পানি বাংলাদেশে নারকেল তেল তৈরির জন্য মাত্র চার লাখ ১৩ হাজার ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করেছে ২০০০ সালের জানুয়ারিতে। এতে মাত্র ২৩ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের আরেকটি হলো সুপারিতে। গোল্ডেন পাম শিল্প নামে 'সুপারি'তে বিনিয়োগের জন্য ২০০৫ সালের অক্টোবরে নিবন্ধিত প্রস্তাবে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ডলার। এতে কাজ পাওয়ার কথা ২১৭ জনের। এ ছাড়া গোদরেজ সারালি নামের ভারতীয় আরেকটি বড় কম্পানি ২০০৬ সালে বাংলাদেশে একটি মশার কয়েল কারখানা স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করে। এতে মাত্র ছয় লাখ ৩৮ হাজার ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়। অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোর পরিবর্তে জর্দা, সুপারি, বিস্কুট, মশার কয়েল, নারিকেল তেল, কসমেটিঙ্, পোলট্রি খাতে আসছেন ভারতের উদ্যোক্তারা। তা ছাড়া এসব খাতেও দেশটির উদ্যোক্তারা যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, সে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার মতো ব্যবসায়ী দেশের উপজেলাপর্যায়েও রয়েছে অনেক। জেলা-উপজেলাপর্যায়ের অনেক উদ্যোক্তাই এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে বিস্কুট, কেক ও জর্দার কারখানা স্থাপন করছে প্রচুর। এসব খাতে বিদেশি বিনিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো ভূমিকাও রাখছে না। কোন কোন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এলে দেশি উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, কোন খাতগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ দরকার, তার দিকনির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব বিনিয়োগ বোর্ডের। কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে সে কাজটি করছে না সরকারি নিবন্ধন সংস্থাটি।
মূলত শিল্পনীতি ২০১০-এও এসব খাতে বিদেশি বিনিয়োগে কোনো বাধা রাখা হয়নি। শিল্পনীতিতে উলি্লখিত ৩২টি খাতে বিদেশিদের বিনিয়োগের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। কেবল অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক শক্তি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও টাকশাল এবং বনায়ন ও সংরক্ষিত বনভূমির সীমানায় যান্ত্রিক আহরণ_এ চারটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ নেই। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের এমন অবাধ স্বাধীনতায় যেনতেনভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে; কিন্তু দেশের চাহিদা অনুযায়ী ভারী বা মাঝারি মানের উৎপাদনমুখী শিল্পে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের কোনো বিনিয়োগ নেই!
বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক আরিফুল হক জানান, শিল্পনীতি অনুযায়ী দেশের ৩২টি শিল্প খাত বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। সরকার কেবল চারটি খাতকে সংরক্ষিত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই ওই চারটি খাতের বাইরে যেকোনো খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সহজেই প্রবেশ করতে পারে। তিনি বলেন, ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবের হিসাব রয়েছে আমাদের কাছে। নিবন্ধনের পর প্রকৃতপক্ষে তা বিনিয়োগ হয়েছে কি না বা হলেও কী পরিমাণ হয়েছে আর কত কর্মসংস্থান হয়েছে, তার কোনো হিসাব বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে নেই।
বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের মে পর্যন্ত মোট ৪১৮টি ইউনিটে বিভিন্ন দেশ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে বিনিয়োগ বোর্ডে। সব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে মোট কর্মসংস্থান হবে এক লাখ ৪১ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে ভারতীয় উদ্যোক্তারা ছয়টি ইউনিটে ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করেছেন। এতে মোট ২৩ হাজার ৪১ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার কথা। একই সময়ে পাকিস্তান ১৬ ইউনিটে এক কোটি ৩০ লাখ ডলার, শ্রীলঙ্কা ১২ ইউনিটে এক কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার ডলার ও চীন ৫৪টি ইউনিটে পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজার ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করেছে। পাকিস্তানের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এক হাজার ৪৬৮, শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগে এক হাজার ৪০৭ ও চীনের বিনিয়োগে সাত হাজার ৭১ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার কথা।
দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা প্রায়ই বাংলাদেশ সফরে এসে বিভিন্ন খাতে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য নানা সেমিনার ও আলোচনা সভা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের তাঁদের বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় পেঁৗছেনি। বাংলাদেশের প্রধান খাতগুলোয় ভারতীয় উদ্যোক্তাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোনো বিনিয়োগ নেই। ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপগুলো যখন বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের জন্য জায়গা খুঁজছে, সেখানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তা এতদিন হয়নি।
বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেসব খাতে বিনিয়োগের সামর্থ্য রাখে সেখানে ভারতসহ অন্য কোানা দেশের বিনিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই। যেসব খাতে আমরা নিজেরাই বিনিয়োগ করতে পারি, সেখানে ভারতীয় ডেকে এনে গোলামাল বাধানোর কোনো দরকার নেই। দেশের প্রধান প্রধান খাত যেমন_গ্যাস ড্রিলিং, ট্রাক-বাসের চাকা, রোড, হাইওয়ে ও ব্রিজ নির্মাণ, রেলওয়ে, গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন, বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন বড় বড় খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ করলেও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা না থাকায় বাংলাদেশে তেমন কোনো বিনিয়োগ আসেনি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশে অনেক বেশি ভারতীয় বিনিয়োগের প্রয়োজন। এটি হলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনেদের ভারসাম্য রক্ষা সহজ হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশে ভারতীয় কম্পানির উৎপাদিত পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কগত কোনো সমস্যা থাকবে না। এর ফলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে, বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।
বিনিয়োগ বোর্ডের নিবন্ধনের তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ৪৩টি উদ্যোগ নিবন্ধিত হয়েছে। প্রস্তাবিত এ উদ্যোগগুলোর মধ্যে ২৫টিরই পুঁজির পরিমাণ ১০ লাখ ডলারেরও কম। সব কয়টি বিনিয়োগ প্রস্তাবে মোট ৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে, টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এসব অর্থ বিনিয়োগ হলে নিবন্ধিত প্রস্তাব অনুযায়ী কর্মসংস্থান হওয়ার কথা সাত হাজার ৯৮২ জনের; কিন্তু এই প্রস্তাবগুলোর কত শতাংশ আদৌ বাস্তবায়ন হয়েছে, তার কোনো তথ্য বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে নেই।
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে বিনিয়োগ বোর্ডে বাবা জর্দার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়। সেখানে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় মাত্র এক লাখ ৪২ হাজার ডলার। এতে ২৭ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে নিবন্ধনে বলা হয়েছে। ভারতে বড় ধরনের বিনিয়োগ থাকলেও মারিকো কম্পানি বাংলাদেশে নারকেল তেল তৈরির জন্য মাত্র চার লাখ ১৩ হাজার ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করেছে ২০০০ সালের জানুয়ারিতে। এতে মাত্র ২৩ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের আরেকটি হলো সুপারিতে। গোল্ডেন পাম শিল্প নামে 'সুপারি'তে বিনিয়োগের জন্য ২০০৫ সালের অক্টোবরে নিবন্ধিত প্রস্তাবে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ডলার। এতে কাজ পাওয়ার কথা ২১৭ জনের। এ ছাড়া গোদরেজ সারালি নামের ভারতীয় আরেকটি বড় কম্পানি ২০০৬ সালে বাংলাদেশে একটি মশার কয়েল কারখানা স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করে। এতে মাত্র ছয় লাখ ৩৮ হাজার ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়। অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোর পরিবর্তে জর্দা, সুপারি, বিস্কুট, মশার কয়েল, নারিকেল তেল, কসমেটিঙ্, পোলট্রি খাতে আসছেন ভারতের উদ্যোক্তারা। তা ছাড়া এসব খাতেও দেশটির উদ্যোক্তারা যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, সে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার মতো ব্যবসায়ী দেশের উপজেলাপর্যায়েও রয়েছে অনেক। জেলা-উপজেলাপর্যায়ের অনেক উদ্যোক্তাই এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে বিস্কুট, কেক ও জর্দার কারখানা স্থাপন করছে প্রচুর। এসব খাতে বিদেশি বিনিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো ভূমিকাও রাখছে না। কোন কোন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এলে দেশি উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, কোন খাতগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ দরকার, তার দিকনির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব বিনিয়োগ বোর্ডের। কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে সে কাজটি করছে না সরকারি নিবন্ধন সংস্থাটি।
মূলত শিল্পনীতি ২০১০-এও এসব খাতে বিদেশি বিনিয়োগে কোনো বাধা রাখা হয়নি। শিল্পনীতিতে উলি্লখিত ৩২টি খাতে বিদেশিদের বিনিয়োগের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। কেবল অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক শক্তি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও টাকশাল এবং বনায়ন ও সংরক্ষিত বনভূমির সীমানায় যান্ত্রিক আহরণ_এ চারটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ নেই। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের এমন অবাধ স্বাধীনতায় যেনতেনভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে; কিন্তু দেশের চাহিদা অনুযায়ী ভারী বা মাঝারি মানের উৎপাদনমুখী শিল্পে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের কোনো বিনিয়োগ নেই!
বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক আরিফুল হক জানান, শিল্পনীতি অনুযায়ী দেশের ৩২টি শিল্প খাত বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। সরকার কেবল চারটি খাতকে সংরক্ষিত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই ওই চারটি খাতের বাইরে যেকোনো খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সহজেই প্রবেশ করতে পারে। তিনি বলেন, ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবের হিসাব রয়েছে আমাদের কাছে। নিবন্ধনের পর প্রকৃতপক্ষে তা বিনিয়োগ হয়েছে কি না বা হলেও কী পরিমাণ হয়েছে আর কত কর্মসংস্থান হয়েছে, তার কোনো হিসাব বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে নেই।
বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের মে পর্যন্ত মোট ৪১৮টি ইউনিটে বিভিন্ন দেশ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে বিনিয়োগ বোর্ডে। সব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে মোট কর্মসংস্থান হবে এক লাখ ৪১ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে ভারতীয় উদ্যোক্তারা ছয়টি ইউনিটে ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করেছেন। এতে মোট ২৩ হাজার ৪১ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার কথা। একই সময়ে পাকিস্তান ১৬ ইউনিটে এক কোটি ৩০ লাখ ডলার, শ্রীলঙ্কা ১২ ইউনিটে এক কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার ডলার ও চীন ৫৪টি ইউনিটে পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজার ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করেছে। পাকিস্তানের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এক হাজার ৪৬৮, শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগে এক হাজার ৪০৭ ও চীনের বিনিয়োগে সাত হাজার ৭১ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার কথা।
দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা প্রায়ই বাংলাদেশ সফরে এসে বিভিন্ন খাতে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য নানা সেমিনার ও আলোচনা সভা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের তাঁদের বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় পেঁৗছেনি। বাংলাদেশের প্রধান খাতগুলোয় ভারতীয় উদ্যোক্তাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোনো বিনিয়োগ নেই। ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপগুলো যখন বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের জন্য জায়গা খুঁজছে, সেখানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তা এতদিন হয়নি।
বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেসব খাতে বিনিয়োগের সামর্থ্য রাখে সেখানে ভারতসহ অন্য কোানা দেশের বিনিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই। যেসব খাতে আমরা নিজেরাই বিনিয়োগ করতে পারি, সেখানে ভারতীয় ডেকে এনে গোলামাল বাধানোর কোনো দরকার নেই। দেশের প্রধান প্রধান খাত যেমন_গ্যাস ড্রিলিং, ট্রাক-বাসের চাকা, রোড, হাইওয়ে ও ব্রিজ নির্মাণ, রেলওয়ে, গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন, বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন বড় বড় খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ করলেও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা না থাকায় বাংলাদেশে তেমন কোনো বিনিয়োগ আসেনি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশে অনেক বেশি ভারতীয় বিনিয়োগের প্রয়োজন। এটি হলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনেদের ভারসাম্য রক্ষা সহজ হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশে ভারতীয় কম্পানির উৎপাদিত পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কগত কোনো সমস্যা থাকবে না। এর ফলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে, বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।
No comments