চীনকে সার্কের সদস্য দেখতে চান খালেদা

ক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পূর্ণ সদস্য হিসেবে চীনের অন্তর্ভুক্তি দেখতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সমর্থনের কথা জানান তিনি। একইসঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সার্কে চীনের অন্তর্ভুক্তি জরুরি।সোনারগাঁও হোটেলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ৫০ মিনিটের বৈঠকে সোনাদিয়া দ্বীপেগভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, রেলওয়ে, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ, পানি সম্পদ, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে চীনের সহযোগিতা চান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।


বৈঠকের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সার্কের পূর্ণ সদস্যপদ চায় চীন। বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে তার পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে চীন সার্কের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করবে বলে আশা করেন ফখরুল। মির্জা ফখরুল বলেন, সফররত কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি নির্ভর করছে শক্তিশালী চীনের ওপর। এ অঞ্চলের (দক্ষিণ এশিয়া) মধ্যে চীনের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন হয়েছে। চীনকে বাদ দিয়ে এ অঞ্চলের কোনো কিছু কল্পনা করা যায় না। বৃহস্পতিবার
মালদ্বীপে সপ্তদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। বর্তমানে চীন সার্কের পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে রয়েছে।
বৈঠকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পার্টির বেইজিং কমিটির সম্পাদক লিউ সি। ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জিয়ানিও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।
বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সফররত নেতাকে বলেছেন, চীন ছাড়া আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক
সম্ভব নয়। এ জন্য বাংলাদেশ মনে করে কুনমিং-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এই সড়ক যোগাযোগের ব্যাপারে দু'দেশের মধ্যে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, বাংলাদেশ ও বিএনপি 'এক চীন' নীতিতে বিশ্বাসী। তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ অংশ বলেই আমরা মনে করি। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে আমরাও দেখতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। একইসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় 'জলবায়ু ফান্ড' গঠনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে চীন_ এটিই আশা করে বিএনপি। এছাড়া অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবের প্রতিকারে চীনের কারিগরি সহযোগিতাসহ সুদৃষ্টিও কামনা করেন খালেদা জিয়া।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা লিউ সি বৈঠকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বলেও মির্জা ফখরুল জানান।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বিএনপি প্রতিনিধি দলকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সে দেশের নেতারা। দুই দেশের মধ্যে_ বিশেষ করে বিএনপি ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়েও দুই নেতা একমত হয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামর্থ্য বৃদ্ধি ও চীনের ত্রিমাত্রিক নৌ-শক্তি গড়ে তোলার জন্য বিরোধী দলের নেতা চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি নেতা বলেন, প্রতিনিধি দলের প্রধান লিউ সি সার্কে চীনের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সমর্থন করায় খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানান। ধন্যবাদ জানান এ পর্যন্ত ৯ বার চীন সফর করার জন্য। আমন্ত্রণ জানান পুনরায় চীন সফরের।

No comments

Powered by Blogger.