কুয়াকাটায় রাসমেলায় চরম অব্যবস্থাপনা হয়রানির শিকার লাখো পর্যটক

রম অব্যবস্থাপনা ও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় বৃহস্পতিবার সকালে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উত্সবের সাগরস্নান। ঈদের ছুটি এবং রাস উত্সব উপলক্ষে লাখো পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে সাগরকুমারী কুয়াকাটায়। এসব পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীকে কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের ২২ কিলোমিটার ভাঙা রাস্তা পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটায় পৌঁছে শিকার হতে হয় একের পর এক ভোগান্তি, হয়রানি ও চাঁদাবাজির। প্রাইভেট কার ও মাইক্রো নিয়ে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের গাড়ি থেকে পৌর করের নামে আদায় করা হয় চাঁদা।


পর্যটকদের জন্য ছিল না পর্যাপ্ত আবাসন, খাবার হোটেল, বিশুদ্ধ পানি, টয়লেট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা; সর্বোপরি সৈকতে ছিল না কোনো আলোর ব্যবস্থা। বহু পর্যটককে সৈকতেই রাত কাটাতে হয় চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে। জামালপুর থেকে ব্যবসায়ী অসিম চন্দ্র রায় সপরিবারে গঙ্গাস্নান করতে মাইক্রোবাস নিয়ে কুয়াকাটায় আসেন। তিনি বলেন, কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের ২২ কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে আসতে মনে হয়েছিল এই বুঝি জীবনের শেষ যাত্রা। ভেবেছিলাম কুয়াকাটায় এসে সৈকতের অপরূপ দৃশ্য দেখে সব কষ্ট লাঘব হবে কিন্তু কুয়াকাটায় প্রবেশ করতেই পড়তে হয় চাঁদাবাজদের কবলে। গাড়ি থামিয়ে পার্কিংয়ের নামে ৮০ টাকা চাঁদা আদায় করে নেয় স্থানীয় কিছু যুবক। অথচ কুয়াকাটায় গাড়িটি নিরাপদে রাখার জন্য কোনো স্থান না পেয়ে এবং হোটেলে রাতযাপনের জন্য সিট না পেয়ে মাইক্রোবাসের মধ্যেই রাত কাটাতে হয়েছে। আগত পুণ্যার্থী সুনেত্রা কর্মকার বলেন, গঙ্গাস্নান করতে এসে সবচেয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে মহিলাদের। এখানে মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট ও পোশাক পরিবর্তনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সৈকতের পাশে গাছের আড়ালে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করতে হয়েছে। এছাড়া সৈকতে রাতে বিদ্যুত্ ব্যবস্থা না থাকায় চরম আতঙ্কের মধ্যে সারা রাত অন্ধকারে বসে থাকতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসময় কিছু যুবক মদ্যপ অবস্থায় পাশে এসে অশালীন মন্তব্য করায় বাধ্য হয়ে কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করেছি। ফরিদপুরের অতুল চন্দ্র দাসের মানত ছিল রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে কুয়াকাটায় এসে মাথার চুল ন্যাড়া করার। তিনি বলেন, কুয়াকাটায় সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে খাবার-দাবারে। এখানে পর্যাপ্ত খাবার হোটেল নেই। যেসব হোটেল রয়েছে, তারা পর্যটকদের জিম্মি করে গলাকাটা দাম রেখেছে। এমনকি এসব হোটেলের খাবারের মানও অত্যন্ত খারাপ। যেসব পর্যটক বাস ও মোটরসাইকেলযোগে কুয়াকাটায় এসেছেন, তাদের কাছ থেকে বাস ও খেয়া চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে নেয়। এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী আমার দেশকে জানান, এবছর কুয়াকাটায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে। এত লোকের সমাগম হওয়ায় আবাসন ও খাবারের কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে তা উল্লেখ করার মতো নয়।
দিনাজপুরে কান্তজিউর রাস পূর্ণিমা ও মাসব্যাপী মেলা শুরু : দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী রাস মেলা শুরু হয়েছে। মেলার উদ্বোধন করেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সব ধর্মাবলম্বীর ধর্ম পালনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে আসছে। ফলে বিগত সময়ে এই স্থানে নামমাত্র মেলার আয়োজন করা হতো। এখন ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের এ উত্সব রাস মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট অমলেন্দু ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার ময়নুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), কাহারোল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সরকার প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.