গ্রিস ও ইতালির অনিশ্চয়তায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে দরপতন

গ্রিস ও ইতালির ঋণসংকটে বিশ্ব শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। ইউরো অস্থিরতা থেকে অনিশ্চয়তা বাড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এতে বিনিয়োগকারীরাও আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। ফলে বুধবারের ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবারও প্রধান শেয়ারবাজারগুলোয় সূচকের পতন হয়। এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মানে পেঁৗছায় একক মুদ্রা ইউরো।শেয়ারবাজার দরপতনে এগিয়ে রয়েছে এশিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার হংকং শেয়ারবাজারে সূচকের পতন হয় ৫ শতাংশ ও টোকিওর নিক্কি সূচক পড়ে ৩ শতাংশ। সিডনি ২.৩৫ শতাংশ, সিওলে প্রায় ৫ শতাংশ, তাইপে ৩.৩৫ শতাংশ, ম্যানিলায় ১.৪১ শতাংশ ও কুয়ালালামপুর শেয়ারবাজারে সূচক পড়ে ১.১৪ শতাংশ।


অন্যদিকে ওয়াল স্ট্রিটে দাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের সূচক পড়ে ৩.২০ শতাংশ। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক হারায় ৩.৬৭ শতাংশ ও নাসদাকে সূচক কমে ৩.৮৮ শতাংশ। লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক কমে ০.৬৯ শতাংশ। ফ্রাঙ্কফুট ড্যাঙ্ ৩০ সূচক পড়ে ০.৪১ শতাংশ এবং প্যারিস ক্যাক ৪০ সূচক কমে ০.৩৬ শতাংশ। এক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইউরোর দাম কমে হয় ১ দশমিক ৩৫ ডলার। শেয়ারবাজারে দরপতন নিয়ে টোকিওর দিয়া সিকিউরিটিজের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক ইউমি নিশিমুরা বলেন, 'যখন ইউরোপিয়ান ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ফ্যাসিলিটি (ইএফএসএফ) কিভাবে কাজে লাগানো হবে তার বিস্তারিত প্রকাশ হয়নি_এমন স্পর্শকাতর সময়ে ইতালির ঋণসংকটও বড় আকারে দেখা দিয়েছে।'
ইউরো জোনের অর্থনীতিতে গ্রিসের ঋণসংকটের পাশাপাশি যোগ হয়েছে ইতালির অনিশ্চয়তা। গ্রিস যখন দাতা সংস্থাগুলোর ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তখন বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়ে বিপাকে রয়েছে ইউরো জোনের তৃতীয় অর্থনৈতিক দেশ ইতালি। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলোসকোনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এতে মাস শেষে ইতালিতে অর্থনৈতিক সংস্কারের আশা জেগে উঠলেও শান্ত হয়নি শেয়ারবাজার। এর বড় কারণ ইতালির ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৭.৪ শতাংশ, যা পরিশোধ করা রোমের জন্য অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ইউরোপিয়ান কমিশন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ২০১৩ সালের বাজেটে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে ইতালিকে আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশন পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০১২ সালে ইতালির প্রবৃদ্ধি আরো কমে হবে ০.১ শতাংশ, যা সরকারি প্রাক্কলন ০.৭ শতাংশ থেকে অনেক কম। এতে ইউরোপের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে পুরোপুরি দ্বিধায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এশিয়ার বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমেছে। নিউ ইয়র্কের আগাম বাজারে ডিসেম্বরে সরবরাহ হবে_এমন লাইট সুইট অপরিশোধিত তেলের দাম ১৫ সেন্টস কমে ব্যারেলপ্রতি ৯৫ দশমিক ৫৯ ডলার হয়েছে। অন্যদিকে ডিসেম্বরে সরবরাহের জন্য নর্থ সি অপরিশোধিত তেলের দাম ১৫ সেন্টস কমে ব্যারেলপ্রতি ১১২ দশমিক ১৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
বিশ্ব শেয়ারবাজারের অস্থিরতা কতটুকু কমবে, তা নির্ভর করছে ঋণসংকট মোকাবিলায় ইউরোপ কতটুকু সক্ষম হয়, তার ওপর। যদিও গত সপ্তাহে ইউরোপীয় নেতারা ঋণসংকট মোকাবিলায় চূড়ান্ত ঘোষণার কথা জানান। তাতে তিনটি প্রস্তাব অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ইউরোপিয়ান ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ফ্যাসিলিটি (ইএফএসএফ) এক ট্রিলিয়নে উন্নীত করা, বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছায় বন্ড বিনিয়োগে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ লস মেনে নেওয়া ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় ২০১২ সাল নাগাদ ব্যাংকগুলোর আরো ১০৬ বিলিয়ন ইউরো পুঁজি বাড়ানো। এ সিদ্ধান্তগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, তার ওপর নির্ভর্র করছে ইউরো অর্থ বাজারের স্থিতিশীলতা। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ও শেয়ারবাজার। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.