অকৃষি কাজে জমির ব্যবহার বাড়ছে by শেখ আবদুল্লাহ

কৃষি কাজে জমির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে কমে যাচ্ছে মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ। জাতীয় কৃষি নীতি-২০১০-এর চূড়ান্ত খসড়ায় অকৃষি কাজে জমির ব্যবহারকে 'আশঙ্কাজনক' হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের দু'পাশের কৃষিজমিতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে শিল্প- কারখানা ও আবাসন প্রকল্প। রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত সব সড়ক-মহাসড়কের দু'পাশের কৃষিজমিতে ঝুলছে অসংখ্য শিল্প-কারখানা ও আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর খাদ্যের চাহিদা যে হারে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সে হারে বাড়ছে না। এই বাড়তি খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের আমদানিও


 অথচ দেশের কৃষিজমি চলে যাচ্ছে শিল্প-কারখানা আর আবাসিক খাতে। কৃষি নীতিমালায় কৃষিজমি শিল্প বা আবাসিক কাজে ব্যবহারের বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে কমে যাচ্ছে ফসলের জমি। আর জনসংখ্যা বাড়ায় কমছে মাথাপিছু জমির পরিমাণও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে ত্রিশের দশকে দেশে কৃষকের মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৮ হেক্টর। ষাটের দশকে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৭ হেক্টরে দাঁড়ায়। ১৯৮৩-৮৪ সালের কৃষি শুমারি অনুযায়ী মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ৯ হেক্টর। ১৯৯৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৬৮ হেক্টরে। সর্বশেষ কৃষি শুমারির হিসাবে মাথাপিছু জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৬ হেক্টরে। জাতীয় কৃষি নীতি-২০১০-এর চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর দেশের কৃষি জমির পরিমাণ ১ শতাংশ হারে কমছে। ধারাবাহিকভাবে মাথাপিছু জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় তা দেশে খাদ্য সংকট সৃষ্টির জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এদিকে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের আমদানিও। একমাত্র চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে অনেকাংশে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্য আমদানি নির্ভরতা বাড়ছেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০০৭-০৮ অর্থবছরে গমের আমদানি ছিল ৫৩ কোটি ডলারের, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ডলারে। এ সময়ে ডালের আমদানি ৩২ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩৫ কোটি ডলার হয়েছে। মসলা আমদানি নিয়মিত বাড়ছে। ভোজ্যতেল ও চিনি সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। তেলবীজ ও আখের চাষ বাড়ার পরিবর্তে কমেছে। চাষিরা মূলত ধান চাষে বেশি উৎসাহী হচ্ছেন। তাছাড়া জমির অভাবেও অনেক চাষি অন্যান্য আমদানি বিকল্প ফসল চাষ করতে পারছেন না।
জাতীয় কৃষি নীতি-২০১০-এর চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর দেশের কৃষিজমির পরিমাণ ১ শতাংশ হারে কমছে। মাটির উর্বরতা কমছে, বাড়ছে লবণাক্ততা। সব মিলিয়ে মাটির গুণাগুণ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানি সম্পদও কমছে। ফলে চাষাবাদ দিন দিন বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এদিকে কৃষি নীতিতে ভবিষ্যৎ কৃষির জন্য যেসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়া এবং অকৃষিকাজে জমির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া অন্যতম। ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-খুলনা, খুলনা-মংলা, খুলনা-যশোর, যশোর-বেনাপোল, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কের দু'পাশের কৃষিজমিতে ব্যাপকহারে শিল্প-কারখানা ও আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। অথচ কৃষিজমি শিল্প অথবা আবাসন খাতে ব্যবহারের জন্য সর্বশেষ কৃষি নীতিমালায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আবার এসব প্রকল্পের কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুঁইফোড় কোম্পানির প্রতারণারও অভিযোগ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.