শেয়ারবাজার ধসে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা কমেছে : ১০ মাসে খোলা হয়েছে ৩ লাখ by কাওসার আলম
শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত থাকায় বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা কমেছে। গত বছর গড়ে প্রতি মাসে দেড় লাখ বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও চলতি বছর তা নেমে এসেছে ৩০ হাজারে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে মাত্র ৩ লাখ। আবার শেয়ারবাজারে অব্যাহত লোকসান এবং নতুন আইপিও বন্ধ থাকার কারণে চলতি বছর প্রায় ৮ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার থেকে বেরিয়ে গেছেন। গত জুন মাসের শুরুতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩৪ লাখ থাকলেও এখন তা কমে ২৮ লাখে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সাড়ে ১৯ লাখ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। অ্যাকাউন্ট খোলার হিড়িক পড়েছিল ওই সময়। কিন্তু এখন সে চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেয়ারবাজারে ধস শুরু হলেও সে সময়ও ১ লাখের বেশি লোক বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে—এমন আশাবাদের কারণে জানুয়ারি মাসেও বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন ১ লাখ ৬ হাজার জন। ধসের মধ্যেও শেয়ারবাজারে ১ লাখ বিনিয়োগকারী বাজারে যুক্ত হওয়ায় অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এতে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার প্রতি এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হয়। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ কমে যায় ৩ গুণেরও বেশি। উপরন্তু শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত থাকায় নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৮১৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৩৪৯। মার্চে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল ২৭ হাজার ৩৯১টি। এপ্রিলে ১২ হাজার ৬০৮ জন লোক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। মে মাসে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৩৭টি। জুনে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা আরও কমে যায়। ওই মাসে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন মাত্র ৬ হাজার ১৫৬ জন। কয়েক বছরের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলার দিক থেকে এটিই ছিল সবচেয়ে কম। মূলত শেয়ারবাজারে মন্দা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি নতুন কোনো আইপিও বাজারে না আসার কারণে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা মারাত্মক হ্রাস পায়। তবে জুলাইয়ে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ জুনের তুলনায় ৩ গুণের বেশি হয়েছে। জুলাইয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৮টি। আগস্টে বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ২১ হাজার ২০১ জন। সেপ্টেম্বরে ৩৯ হাজার ২১১ জন এবং অক্টোবরে ৩০ হাজার ১৪৬ জন বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সর্বশেষ গত ২ নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৮টি। এর মধ্যে ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬ জন বিও অ্যাকাউন্টধারী পুরুষ, ৮ হাজার ৪৯৬ জন নারী এবং কোম্পানির অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৬৯টি। আবার এসব বিও অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে দেশে বসবাসকারীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৯ জন, প্রবাসী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮০ জন।
এ বিষয়ে সিডিবিএলের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী বলেন, গত বছর প্রতি মাসে এক লাখেরও বেশি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। কিন্তু এখন সে তুলনায় অ্যাকাউন্ট খোলার হার কমে গেছে। তবে দীর্ঘদিন বাজারে আইপিও না থাকার কারণে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রতি আগ্রহ কমলেও গত কয়েক মাসে তা বেড়েছে। আগামীতে নতুন নতুন আইপিও আসতে শুরু করলে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯-১০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগ অনুকূল বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। ওই সময় বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগে মন্দা বিরাজ করায় শেয়ারবাজারে অর্থপ্রবাহ ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে। গত বছর বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেয়ায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ওই সময় প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন বিও হিসাব খুলে শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন। কিন্তু বিনিয়োগকারী এবং অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো শেয়ারের যোগান বৃদ্ধিতে ব্যর্থতা এবং সুযোগ-সন্ধানীদের কারসাজির ফলে বাজারে অধিকাংশ শেয়ারের দর অতি মূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে গত ডিসেম্বরে বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। বাজারে তারল্য সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠায় একের পর এক বিপর্যয়ে লোকসানের মুখে পড়েন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এতে শেয়ারবাজার সম্পর্কে নতুন বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এর ফলে শেয়ারবাজারের প্রতি নতুন আগ্রহে বড় ধরনের ভাটা পড়ে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর বিও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য লোকদের লাইন ছিল। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন বিও অ্যাকাউন্ট খুলতেন। কিন্তু এখন পুরো মাসেও তা হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বাজারের প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে সিডিবিএলের আওতাধীন যে কোনো ডিপিতে (ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট) একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হয়। একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে একক নামে একটি এবং যৌথ নামে একটি বিও হিসাব খুলতে পারেন।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি প্রদান করে হিসাব নবায়ন করতে হয়। প্রতিটি বিও হিসাব নবায়নের জন্য বর্তমানে ৫০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে সিডিবিএল ১৫০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউস ১০০ টাকা এবং এসইসি ৫০ টাকা পায়। বাকি ২০০ টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়।
তবে গত জুন মাসে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৪ লাখ। কিন্তু নবায়ন না করায় ৮ লাখের মতো বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে যায়। জানা গেছে, বিও হিসাব নবায়ন না করা বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই প্রাথমিক শেয়ার পাওয়ার জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করতেন। কিন্তু শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের পর নতুন কোনো আইপিও না আসায় এসব বিনিয়োগকারী উত্সাহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে যারা শুধু আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার বরাদ্দ পেতেন তারা উত্সাহ হারিয়ে ফেলেন। আবার বাজারে মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অনেকেই শেয়ারবাজারের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েন। ফলে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেননি তারা।
সিডিবিএল সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৪৪টি। ২০০৮ সালে তা ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টিতে দাঁড়ায়। ২০০৯ সালের শেষ দিকে এসে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। তবে নির্ধারিত সময়ে নবায়ন না করায় বিপুল পরিমাণ বিও নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবে বাতিল করার পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০টিতে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের আওতায় বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৭। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না করায় গত বছর জুলাই মাসে প্রায় ১ লাখ এবং অক্টোবরে প্রায় ৩০ হাজার বিও হিসাব বাতিল করা হয়। তাসত্ত্বেও ৩১ ডিসেম্বর বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ১৫৮ জনে দাঁড়ায়। অর্থাত্ গত বছর প্রায় ১৯ লাখ ৪২ হাজার বিনিয়োগকারী যুক্ত হন শেয়ারবাজারে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৮১৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৩৪৯। মার্চে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল ২৭ হাজার ৩৯১টি। এপ্রিলে ১২ হাজার ৬০৮ জন লোক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। মে মাসে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৩৭টি। জুনে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা আরও কমে যায়। ওই মাসে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন মাত্র ৬ হাজার ১৫৬ জন। কয়েক বছরের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলার দিক থেকে এটিই ছিল সবচেয়ে কম। মূলত শেয়ারবাজারে মন্দা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি নতুন কোনো আইপিও বাজারে না আসার কারণে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা মারাত্মক হ্রাস পায়। তবে জুলাইয়ে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ জুনের তুলনায় ৩ গুণের বেশি হয়েছে। জুলাইয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৮টি। আগস্টে বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ২১ হাজার ২০১ জন। সেপ্টেম্বরে ৩৯ হাজার ২১১ জন এবং অক্টোবরে ৩০ হাজার ১৪৬ জন বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সর্বশেষ গত ২ নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৮টি। এর মধ্যে ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬ জন বিও অ্যাকাউন্টধারী পুরুষ, ৮ হাজার ৪৯৬ জন নারী এবং কোম্পানির অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৬৯টি। আবার এসব বিও অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে দেশে বসবাসকারীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৯ জন, প্রবাসী ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮০ জন।
এ বিষয়ে সিডিবিএলের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী বলেন, গত বছর প্রতি মাসে এক লাখেরও বেশি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। কিন্তু এখন সে তুলনায় অ্যাকাউন্ট খোলার হার কমে গেছে। তবে দীর্ঘদিন বাজারে আইপিও না থাকার কারণে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রতি আগ্রহ কমলেও গত কয়েক মাসে তা বেড়েছে। আগামীতে নতুন নতুন আইপিও আসতে শুরু করলে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯-১০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগ অনুকূল বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। ওই সময় বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগে মন্দা বিরাজ করায় শেয়ারবাজারে অর্থপ্রবাহ ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে। গত বছর বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেয়ায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ওই সময় প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষ নতুন বিও হিসাব খুলে শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন। কিন্তু বিনিয়োগকারী এবং অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো শেয়ারের যোগান বৃদ্ধিতে ব্যর্থতা এবং সুযোগ-সন্ধানীদের কারসাজির ফলে বাজারে অধিকাংশ শেয়ারের দর অতি মূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে গত ডিসেম্বরে বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। বাজারে তারল্য সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠায় একের পর এক বিপর্যয়ে লোকসানের মুখে পড়েন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এতে শেয়ারবাজার সম্পর্কে নতুন বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এর ফলে শেয়ারবাজারের প্রতি নতুন আগ্রহে বড় ধরনের ভাটা পড়ে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর বিও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য লোকদের লাইন ছিল। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন বিও অ্যাকাউন্ট খুলতেন। কিন্তু এখন পুরো মাসেও তা হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বাজারের প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে চাইলে সিডিবিএলের আওতাধীন যে কোনো ডিপিতে (ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট) একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হয়। একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে একক নামে একটি এবং যৌথ নামে একটি বিও হিসাব খুলতে পারেন।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি প্রদান করে হিসাব নবায়ন করতে হয়। প্রতিটি বিও হিসাব নবায়নের জন্য বর্তমানে ৫০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে সিডিবিএল ১৫০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউস ১০০ টাকা এবং এসইসি ৫০ টাকা পায়। বাকি ২০০ টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়।
তবে গত জুন মাসে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৪ লাখ। কিন্তু নবায়ন না করায় ৮ লাখের মতো বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে যায়। জানা গেছে, বিও হিসাব নবায়ন না করা বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই প্রাথমিক শেয়ার পাওয়ার জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করতেন। কিন্তু শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের পর নতুন কোনো আইপিও না আসায় এসব বিনিয়োগকারী উত্সাহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে যারা শুধু আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার বরাদ্দ পেতেন তারা উত্সাহ হারিয়ে ফেলেন। আবার বাজারে মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অনেকেই শেয়ারবাজারের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েন। ফলে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেননি তারা।
সিডিবিএল সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৪৪টি। ২০০৮ সালে তা ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টিতে দাঁড়ায়। ২০০৯ সালের শেষ দিকে এসে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। তবে নির্ধারিত সময়ে নবায়ন না করায় বিপুল পরিমাণ বিও নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবে বাতিল করার পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০টিতে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের আওতায় বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৭। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না করায় গত বছর জুলাই মাসে প্রায় ১ লাখ এবং অক্টোবরে প্রায় ৩০ হাজার বিও হিসাব বাতিল করা হয়। তাসত্ত্বেও ৩১ ডিসেম্বর বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ১৫৮ জনে দাঁড়ায়। অর্থাত্ গত বছর প্রায় ১৯ লাখ ৪২ হাজার বিনিয়োগকারী যুক্ত হন শেয়ারবাজারে।
No comments