মাঠে ফিরবেন প্রিমিয়ার লীগে-দল পাননি মাশরাফি
ইনজুরিতে মাশরাফি বিন মর্তুজা। চলতি বছরের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পর ইনজুরির কারণে জাতীয় দলের হয়ে আর মাঠে নামা হয়নি তার। এর মধ্যে বাংলাদেশ মাশরাফিকে ছাড়াই খেলে ফেলেছে বিশ্বকাপসহ দেশে-বিদেশে জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি সিরিজ। বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের বিপক্ষে ডিসেম্বরের সিরিজ দিয়েই আবার মাঠে ফিরবেন নড়াইল এক্সপ্রেস। আপাতত সে আশাও তুলে রাখতে হচ্ছে। কারণ এ মুহূর্তে মাঠে ফেরার মতো অবস্থায় নেই মাশরাফি।
তবে ফিজিও বিভব সিংয়ের পরামর্শে ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রামে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিচ্ছেন মাশরাফি। কোচ স্টুয়ার্ট লর ইচ্ছাতেই চট্টগ্রামে নেটে বোলিং করবেন মাশরাফি। ঈদের ছুটিতে নড়াইলে থাকা মাশরাফি নিজেই জানালেন, 'আশি-নব্বই ভাগ ফিট বলতে পারেন। ঢাকা ফিরে ফিজিওর সঙ্গে কথা বলব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব কবে নাগাদ নেটে বল করতে শুরু করব।' সে সময়টা কবে নাগাদ হতে পারে_ এমন প্রশ্নে মাশরাফির উত্তর, সপ্তাহ তিনেক তো লাগবেই। প্রত্যয়ী এমন উত্তরে অনেকটাই নিশ্চিত, এরও আগে বল হাতে দৌড়ানোর কাজটি শুরু করবেন মাশরাফি। আর তাকে তা করতেই হবে_ কেন? উত্তর শুনুন মাশরাফির মুখে। বললেন, 'জানুয়ারিতে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ, আশা করছি, লীগের খেলা খেলেই দলে ফিরব।' ফাইটার মাশরাফি যোগ্যতা প্রমাণের জন্য বেছে নিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে দেশের সবচাইতে জমজমাট আসর ঢাকার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগকে। অবিশ্বাস্য, তবুও সত্য_ যোগ্যতা প্রমাণের ক্ষেত্র হিসেবে মাশরাফি এ আসরকে বেছে নিলেও এখনও কোনো দল জোটেনি তার। 'ইনজুরি'র কারণে আপাতত তাকে হিসাবের বাইরে রেখেই আগামী মৌসুমের জন্য দল বানিয়ে ফেলেছে মাশরাফির বর্তমান ক্লাব আবাহনী লিমিটেড। ইনজুরির সঙ্গে যোগ হয়েছে পুল। এক দলে পুলে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে দু'জনের বেশি রাখা যাবে না, আর গত এক বছর জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটাররা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পুলের আওতায় থাকবেন, বিসিবির পুরনো এ নিয়ম এবারও বলবৎ। তাই স্বাভাবিক মাশরাফিও থাকছেন পুলের তালিকায়। পুলে থাকা ক্রিকেটারদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত না হলেও সব ক্লাব কর্মকর্তাই ধরে নিয়েছেন, নিয়মের কারণে মাশরাফিও থাকছেন পুলে। আর ইনজুরির কারণে গত আট মাস খেলার মধ্যে নেই মাশরাফি। ইচ্ছা আর ভালোবাসা থাকলেও ক্লাবের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে দলে নিয়ে পুলের কোটা নষ্ট করতে গররাজি আবাহনী লিমিটেড। ওদিকে ক্লাবের নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে আগামী মৌসুমের দল নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। এরই মধ্যে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটকে নাকি দল বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া জানালেন, 'মাশরাফিকে মোহামেডানে খেলাতে আমিসহ ক্লাবের অনেকের বাড়তি আর্কষণও আছে। নিজেরা অল্পবিস্তর আলোচনাও করেছি। আমরা এখন চিন্তা করছি, সে ক্লাবকে কতটুকু দিতে পারবে। এখনও হাতে কিছু সময় আছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আরেকটু চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আসলে কী, প্রায় এক বছর মাশরাফি মাঠে নেই। তার পরও হয়তো তাকে অনেক দলই দলে নিতে চাইত; কিন্তু ওই যে পুল। ওই আইনটি মাশরাফির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে; কিন্তু আমি মনে করি, অবশ্যই মাশরাফিকে এ আইন থেকে মুক্ত রাখা। কারণ ওর মতো ক্রিকেটার এক মৌসুমে না খেলাটা মানে মারশাফির চাইতে দেশের ক্ষতিটাই বেশি।' লোকমানের মতো করেই কথা বললেন প্রিমিয়ার ক্রিকেটের আয়োজক সিসিডিএম চেয়ারম্যান ও বিসিবির পরিচালক জিএস হাসান তামিম। 'আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা, মাশরাফিকে এবারের মতো পুলমুক্ত রাখার; কিন্তু নিয়মের কারণে হয়তো সংশ্লিষ্টদের সেটি করা সম্ভব নাও হতে পারে।' এক্ষেত্রে বিসিবি সভাপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। বলেন, বিসিবির গাইডলাইন পেলে হয়তো সিসিডিএমে এ নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হতে পারে। এসব কিছুই অজানা নয় মাশরাফি বিন মর্তুজার। তিনি সমকালকে জানান, প্রিমিয়ার লীগের দল সিসিএস এরই মধ্যে তাকে দলে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি শুনেছেন, তবে সিদ্ধন্তি দেননি। আগে ফিজিওর সঙ্গে আলোচনা, এরপর সিদ্ধান্ত। তবে পুলমুক্ত থাকার জন্য বোর্ডের কাছে কোনো আবেদন করতে রাজি নন জানিয়ে বলেন, 'জাতীয় দলে আমার সতীর্থদের জন্য যে নিয়ম থাকবে, আমিও সে নিয়মের মধ্যেই থাকতে চাই। আমি কখনোই এমন সুবিধা নিতে রাজি নই।'
No comments