সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন : দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সার্ককে অর্থনৈতিক প্লাটফর্ম করার অঙ্গীকার by বশীর আহমেদ,

ক্ষিণ এশিয়ার নেতারা এ অঞ্চলের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সার্ককে অর্থনৈতিক প্লাটফর্ম করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।গতকাল মালদ্বীপের আদ্দু সিটির ইকুয়েটরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে তারা এ অঙ্গীকার করেন। দু’দিনব্যাপী সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অধিবেশনে তারা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতার পাশাপাশি গণতন্ত্র এবং সুশাসন নিশ্চিতের ওপরও জোর দেন। একই সঙ্গে তারা নিজেদের মধ্যে সেতুবন্ধনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিকশিত হওয়ার এটাই যথার্থ সময় বলে মন্তব্য করেন।


উদ্বোধনী অধিবেশনে দক্ষিণ এশিয়ার সব নেতার কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছে—বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে সার্কের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সদস্য দেশগুলোকে তাদের প্রয়াস জোরদার করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার যে সম্ভাবনা তাকে বাস্তবে রূপ দিতে অর্থনৈতিক সমন্বয় ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আন্তঃবাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। এজন্য একে অন্যের প্রতি আস্থা বাড়িয়ে মেলবন্ধনের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে সার্ককে। আর সেতুবন্ধন জোরদার করতে মানুষের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি নতুন নতুন ভাবনা বিকশিত করতে হবে।
সার্কের বিদায়ী চেয়ারপার্সন ভুটানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি সার্কের নতুন চেয়ারপার্সন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বিল্ডিং ব্রিজেস’ বা সেতুবন্ধন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। আদ্দু দ্বীপপুঞ্জের আকাশ, স্থল আর জলসীমা জুড়ে সমন্বিত নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের আদ্দু নগরী সেজেছে উত্সবের সাজে। ভিলিনগিলি, ফেদু, গ্যানসহ বিভিন্ন রাস্তার দু’পাশ সার্কের আট দেশের রঙিন পতাকায় শোভিত করা হয়েছে। আলোকসজ্জার পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে রাখা হয়েছে অতিথিদের সম্ভাষণ জানিয়ে তৈরি করা ইলেক্ট্রনিক প্ল্যাকার্ড।
শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সার্কের ৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের মধ্যে বক্তৃতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মহেন্দ্র রাজাপাকসে, আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্ট রাই, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে। এছাড়া পর্যবেক্ষক হিসেবে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝ্যাং জিজুন, জাপানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোয়ে নাকানো, দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম জায়ে-শিম এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তৃতা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, আমাদের এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে এখানকার সম্পদ এ অঞ্চলেই বিনিয়োগ করা যায়। তা হলেই এ অঞ্চলে সীমারেখার গণ্ডি পেরিয়ে একটি অভিন্ন অর্থনীতি গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দ্রুত আঞ্চলিক রেল ও মোটরযান চুক্তি চূড়ান্ত করার পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণের জন্য কলচার্জ কমানোর প্রতি জোর দেন।
মনমোহন সিং বলেন, আমাদের একে অন্যকে বিশ্বাস করাটা শিখতে হবে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একে অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কারও পক্ষে উন্নতি করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের উচ্চাশা আর আকাঙ্ক্ষার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, এমন কোনো বিষয়কে আমাদের মেনে নেয়া ঠিক হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, আমাদের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি এটাই ইঙ্গিত দেয়, আমাদের একে অন্যের সামর্থ্য আর অঙ্গীকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, একমাত্র তখনই আমরা আমাদের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারব।
মোহাম্মদ নাশিদ তার বক্তৃতায় বলেন, সার্কের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। ইতিহাসের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক উজ্জ্বলতর অবস্থায় এখন আমরা দাঁড়িয়ে আছি। অনেক দিন থেকেই নেপথ্যে থেকেছে দক্ষিণ এশিয়া। কিন্তু সারাবিশ্বের দৃষ্টি এখন আমাদের দিকে। কাজেই আমাদের নিজেদের যে সম্ভাবনা আছে তাকে কাজে লাগাতে হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি বলেন, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে এগোতে হলে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
রাতে দক্ষিণ এশীয় নেতারা আদ্দু সিটির হুলহু মিধুতে নৈশভোজে যোগ দেন। আজ তারা ভিলা লালুতে অবকাশে মিলিত হবেন। বিকালে সমাপনী অধিবেশনে আদ্দু ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে।

No comments

Powered by Blogger.