কোরবানির পশুর চামড়া পাচারের অভিযোগ-প্রকৃত দর না পেলে আন্দোলনের হুমকি ব্যবসায়ীদের

কোরবানির পশুর চামড়া প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গরুর চামড়ার দর প্রতি পিসে এ বছর ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা কম হওয়ার কারণে অন্তত ৩ লাখ পিস চামড়া পাচার হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে গত বছরের তুলনায় চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এ ছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করার সময় প্রকৃত দর না পেলে আন্দোলনে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি দেলোয়ার গতকাল বৃহস্পতিবার সমকালকে জানান, এ বছর দেশে চামড়ার পিসপ্রতি দর কমেছে ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা।


এ কারণে সীমান্ত জেলা বগুড়া, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের সব সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে চামড়া পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের স্থানীয়দের ভাষায় হেলিকপ্টারে (সাইকেল) চোরাইপথে চামড়া পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে গত বছরের তুলনায় অন্তত ৩ লাখ পিস চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে। প্রতি বছর কোরবানি উপলক্ষে গড়ে ২৩ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হয় বলে জানান তিনি। এ বছর এ পর্যন্ত ২০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে।
দেলোয়ার জানান, গত বছর অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণে স্বাভাবিকের তুলনায় কোরবানি কম হওয়া সত্ত্বেও ২৩ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। এ বছর দেশে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। আর প্রতি বছর কোরবানিদাতার সংখ্যাও বাড়ে। স্বাভাবিক কারণে বছরপ্রতি চামড়ার সংখ্যাও বাড়ার কথা। সে হিসাবে অন্তত ৩ লাখ পিস চামড়া পাচার হয়ে গেছে। দোলোয়ার জানান, ঢাকায়
চামড়া পেঁৗছার আগ পর্যন্ত এখনও পাচারের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি। দরের বিষয়ে কোনো রকম কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার করে দেলোয়ার বলেন, ৪ মাস ধরেই চামড়ার দাম কমছে। ঈদের কয়েক দিন আগেও প্রতি বর্গফুটে ১৫ থেকে ১৬ টাকা হারে দর কমেছে।
প্রসঙ্গত, ঈদের আগেই পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে দরের ব্যাপক ওঠানামা এবং বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে চামড়ার দর বেশি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া পাচার কিংবা অব্যবহৃত অবস্থায় পচে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশেন (বিটিএ) সহ-সভাপতি শামসুল হুদা সমকালকে জানান, কোরবানির চামড়া নিয়ে আসলে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নেই। এখনও সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে চামড়া পাচারের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। তাহলে এ বছর চামড়া সংগ্রহ কম হওয়ার কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোরবানির শেষ বাজারে পশু পাওয়া না যাওয়ায় অনেকে কোরবানি করতে পারেননি। এ কারণে গত বছরের তুলনায় চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে শামসুল হুদা জানান, ঈদের দিন যারা চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তারা চামড়ায় লবণ দিয়ে রেখেছেন, পরে বিক্রি হয়েছে। এসব চামড়া এখন ঢাকায় আসতে শুরু করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর কোরবানির আগে বিটিএ বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী চামড়ার দর আগাম নির্ধারণ করে দেয়। এ বছরও মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রাহক ব্যবসায়ীদের একই দাবি সত্ত্বেও বিটিএ চামড়ার দর আগাম নির্ধারণ করেনি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫ শতাংশ হারে দর কমে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে কম দামে চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ধারণা দিয়েছেন বিটিএ। ব্যাবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিটিএর পরামর্শ অনুযায়ী কম দামে চামড়া সংগ্রহ করা হলেও এ দরকেই এখন বেশি বলছেন ট্যানারি মালিকরা। আগামী সপ্তাহে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার সময় দর নিয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, আগামী রোববার থেকে রাজধানী থেকে সংগৃহীত চামড়া এবং এর পর ঢাকার বাইরের চামড়া ট্যানারদের কাছে বিক্রি করা হবে। এবার প্রকৃত দর না পেলে তারা আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.