পুঁজিবাজারে নানা ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা সঙ্কট বাড়ছে by কাওসার আলম
পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সঙ্কট আরও বেড়েছে। ফোর্সড সেলের নীতিমালা প্রণয়ন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল তৈরি, স্পন্সর পরিচালকদের শেয়ার কিনে বাজারকে সাপোর্ট দেয়া, মার্জিন লোনের সুদের হার মওকুফ, মার্জিন লোনের কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার মতো বিষয়গুলো ঘোষণা দেয়া হলেও এর একটিও হয়নি।
অপরদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা, ৫ হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ ফান্ড গঠন, শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলেও বাজারে এসবের কোনো প্রভাব নেই। ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ৫ হাজার কোটি টাকার স্টক মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিলেও আদতে এ ফান্ড গঠন নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরে আনতে এসব ঘোষণা ও সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বার বার নতুন আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা তৈরি হয়েছে। ফলে আস্থার নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় সঙ্কটই হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব। কিন্তু সে অভাব ঘোঁচাতে গিয়ে এমন সব আশ্বাস দেয়া হয়েছে যেগুলো কার্যকর হয়নি। ফলে আস্থার অভাব আরও বেড়েছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সেগুলোর যথার্থ বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি বলে তারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের বাজারবান্ধব বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আশানুরূপ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করছে। গত কয়েকদিনে সূচকও বেড়েছে। ঈদের কারণে লেনদেনের পরিমাণ কমলেও ঈদের পর বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অনেক সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো কার্যকর না হওয়ায় নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা সঙ্কট বেড়েছে। পুঁজিবাজারের সঙ্গে দেশের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বাজারকে সাপোর্ট দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে না আনতে পারলে দেশের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ঘন ঘন হস্তক্ষেপ না করার পক্ষে মত দিয়েছেন এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বাজারে হস্তক্ষেপ যত কম হবে ততই ভালো। হস্তক্ষেপ কমে গেলে বাজার নিজস্বগতিতে স্থিতিশীল হবে। বাজারের স্থিতিশীলতার অর্থ এই নয়, শেয়ারের দর বাড়তে থাকবে। বাজারে যে অস্থিরতা রয়েছে সেটি কেটে যাবে।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার ফলে গত জুলাই মাসে শেয়ারাবাজারের লেনদেন বাড়তে শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছিল এ সুযোগ দেয়ার ফলে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কালো টাকা বিনিয়োগের ব্যাপারে হঠাত্ করেই বলে বসেন, কালো টাকার উত্স সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোনো প্রশ্ন না তুললেও দুদক বা সরকারের অন্য সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে। অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে লেনদেনের পরিমাণ আবারও কমতে শুরু করে। এরপর বাজারের সঙ্কট উত্তরণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পরিষদ শীর্ষ ৩০টি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসে। এতে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে এসইসির কাছে ডিএসই প্রস্তাব আকারে পাঠায়। ডিএসইর এ ধরনের উদ্যোগেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে এসইসির পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা সম্পর্কে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফের হতাশা দেখা দেয়। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দফায় দফায় এসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। কিন্তু এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সক্ষম হয়নি। এরপর দৃশ্যপটে উপস্থিত হন সালমান এফ রহমান। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ঘোষণা দেন, শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার কিনে বাজারকে সাপোর্ট দেবে। উদ্যোক্তা পরিচালকদের এ ধরনের ঘোষণাও শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। অবশ্য সালমান এফ রহমান নিজে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনার ঘোষণা দিলেও অন্যরা খুব একটা এগিয়ে আসেনি। কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিধিনিষেধ থাকায় তারা আর এগিয়ে আসেনি। ফলে বিষয়টি ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এ ঘোষণা কার্যকর না হলেও মার্জিন লোনের কারণে যেসব বিনিয়োগকারী বিপাকে পড়েছেন তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে ৫০০ কোটি টাকার ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক করে এ ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকও করেন এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, সালমান এফ রহমান প্রমুখ। এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে ফান্ডের বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আর বেশিদূর এগোয়নি। বিশেষ করে যেভাবে ফান্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে তা করতে হলে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিবিধানের সংশোধন করতে হবে। কিন্তু এসইসি এ ব্যাপারে উত্সাহী নয়। অনেকেই প্রশ্ন রেখেছেন, আইন অনুযায়ী যা করা সম্ভব নয় সে ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তা ফলাও করে প্রচারের ভিন্নি উত্স থাকতে পারে। শেয়ারের দর বাড়িয়ে নিজেদের শেয়ার বিক্রির জন্য নতুন নতুন এসব ঘোষণা দেয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। সর্বশেষ শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। গত ২০ অক্টোবর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ব্যাংকার্সদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করবে কি করবে না এটি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এটি ঘোষণা দেয়ার কিছু নয়। তারপরও এ ধরনের ঘোষণার ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলো ঘোষণা দিলেও খুব সামান্যই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে এবং চলতি মাসেই এ ফান্ডটি বাজারে বিনিয়োগ শুরু করতে পারবে বলে বিএবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এজন্য নতুন একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গঠনে এসইসিতে শিগগিরই আবেদন জমা দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু এসইসিতে এখন পর্যন্ত এ ধরনের আবেদন জমা পড়েনি বলে জানা গেছে। ফলে নভেম্বরে এ ফান্ডটি বিনিয়োগ শুরু করতে পারবে, এটি নিয়ে সংশয় বাড়ছে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ফান্ড আদৌ গঠন করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আস্থার সঙ্কট বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের বাজারবান্ধব বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আশানুরূপ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করছে। গত কয়েকদিনে সূচকও বেড়েছে। ঈদের কারণে লেনদেনের পরিমাণ কমলেও ঈদের পর বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অনেক সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো কার্যকর না হওয়ায় নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা সঙ্কট বেড়েছে। পুঁজিবাজারের সঙ্গে দেশের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বাজারকে সাপোর্ট দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে না আনতে পারলে দেশের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ঘন ঘন হস্তক্ষেপ না করার পক্ষে মত দিয়েছেন এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বাজারে হস্তক্ষেপ যত কম হবে ততই ভালো। হস্তক্ষেপ কমে গেলে বাজার নিজস্বগতিতে স্থিতিশীল হবে। বাজারের স্থিতিশীলতার অর্থ এই নয়, শেয়ারের দর বাড়তে থাকবে। বাজারে যে অস্থিরতা রয়েছে সেটি কেটে যাবে।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার ফলে গত জুলাই মাসে শেয়ারাবাজারের লেনদেন বাড়তে শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছিল এ সুযোগ দেয়ার ফলে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কালো টাকা বিনিয়োগের ব্যাপারে হঠাত্ করেই বলে বসেন, কালো টাকার উত্স সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোনো প্রশ্ন না তুললেও দুদক বা সরকারের অন্য সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে। অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে লেনদেনের পরিমাণ আবারও কমতে শুরু করে। এরপর বাজারের সঙ্কট উত্তরণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পরিষদ শীর্ষ ৩০টি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসে। এতে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে এসইসির কাছে ডিএসই প্রস্তাব আকারে পাঠায়। ডিএসইর এ ধরনের উদ্যোগেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে এসইসির পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা সম্পর্কে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফের হতাশা দেখা দেয়। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দফায় দফায় এসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। কিন্তু এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সক্ষম হয়নি। এরপর দৃশ্যপটে উপস্থিত হন সালমান এফ রহমান। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ঘোষণা দেন, শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার কিনে বাজারকে সাপোর্ট দেবে। উদ্যোক্তা পরিচালকদের এ ধরনের ঘোষণাও শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। অবশ্য সালমান এফ রহমান নিজে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনার ঘোষণা দিলেও অন্যরা খুব একটা এগিয়ে আসেনি। কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিধিনিষেধ থাকায় তারা আর এগিয়ে আসেনি। ফলে বিষয়টি ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এ ঘোষণা কার্যকর না হলেও মার্জিন লোনের কারণে যেসব বিনিয়োগকারী বিপাকে পড়েছেন তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে ৫০০ কোটি টাকার ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক করে এ ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকও করেন এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, সালমান এফ রহমান প্রমুখ। এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে ফান্ডের বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আর বেশিদূর এগোয়নি। বিশেষ করে যেভাবে ফান্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে তা করতে হলে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিবিধানের সংশোধন করতে হবে। কিন্তু এসইসি এ ব্যাপারে উত্সাহী নয়। অনেকেই প্রশ্ন রেখেছেন, আইন অনুযায়ী যা করা সম্ভব নয় সে ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তা ফলাও করে প্রচারের ভিন্নি উত্স থাকতে পারে। শেয়ারের দর বাড়িয়ে নিজেদের শেয়ার বিক্রির জন্য নতুন নতুন এসব ঘোষণা দেয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। সর্বশেষ শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। গত ২০ অক্টোবর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ব্যাংকার্সদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করবে কি করবে না এটি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এটি ঘোষণা দেয়ার কিছু নয়। তারপরও এ ধরনের ঘোষণার ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলো ঘোষণা দিলেও খুব সামান্যই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে এবং চলতি মাসেই এ ফান্ডটি বাজারে বিনিয়োগ শুরু করতে পারবে বলে বিএবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এজন্য নতুন একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গঠনে এসইসিতে শিগগিরই আবেদন জমা দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু এসইসিতে এখন পর্যন্ত এ ধরনের আবেদন জমা পড়েনি বলে জানা গেছে। ফলে নভেম্বরে এ ফান্ডটি বিনিয়োগ শুরু করতে পারবে, এটি নিয়ে সংশয় বাড়ছে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ফান্ড আদৌ গঠন করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আস্থার সঙ্কট বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
No comments