ঢাকা রাজশাহী সিলেট চাঁদপুরে পুলিশের ওপর আবার হামলা-আহত ৯৫, আটক ৩৪

রাজধানী, রাজশাহী, সিলেট ও চাঁদপুরে পুলিশের ওপর আবারও হামলা করেছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। গতকাল শনিবারের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছে অন্তত ৯৫ জন। এ ঘটনায় পুলিশ অন্তত ৩৪ জন আটক করেছে।


এর আগে গত সোম ও মঙ্গলবার জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের ওপর ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটান। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত জামায়াত নেতাদের বিচার বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় এসব ঘটনা ঘটান তাঁরা। আগের ঘটনায় জয়পুরহাটে আহত একজনের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল তাঁরা আবার বিক্ষোভ করেন। তাঁদের দাবি, জয়পুরহাটে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি শিবিরের কর্মী।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা, সিলেট ও রাজশাহী এবং চাঁদপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর :
রাজধানী : মিরপুরের কাফরুল থানা এলাকায় গতকাল বিকেলে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের হামলায় ১১ পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এ সময় তারা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়।
কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিকেল ৫টার দিকে ১০ নম্বর গোলচত্বরের আশপাশে প্রায় দেড় শতাধিক জামায়াত-শিবিরের কর্মী মিছিল বের করে। একপর্যায়ে মিছিল থেকে দায়িত্বরত পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল আসাদসহ ১১ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
গতকাল প্রায় একই সময় রাজধানীতে আরো পাঁচটি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রশিবির। তবে অন্য কোথাও ভাঙচুর বা হামলার ঘটনা ঘটেনি। গত সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের দুই দফা হামলায় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন।
ছাত্রশিবিরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, কাফরুলের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় কমপক্ষে ২০ শিবির নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
রাজশাহী : রাজশাহী নগরীর ঝাউতলা মোড় ও বহরমপুর এলাকায় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ঝটিকা মিছিল বের করেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় অন্তত সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আরো অন্তত আটজন আহত হয়। একপর্যায়ে শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে অন্তত চারটি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শটগানের কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পাঁচজনকে। এ ছাড়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় শহরের বাটার মোড় এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে শিবিরের আরো সাত কর্মীকে। এ নিয়ে শুক্রবার রাত ও গতকাল দিনভর মোট আটকের সংখ্যা অন্তত ২২ জন।
রাজশাহী নগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার এস এম মনির-উ-জামান কালের কণ্ঠকে হামলা ও আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'শিবির গুলি করেছে বলে আমাদের জানা নেই।'
গত মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয় অন্তত ৫০ জন।
সিলেট : গতকাল বিকেল ৫টার দিকে শহরের আম্বরখানা এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালান জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ এ সময় বেশ শর্টগানের কয়েকটি ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। শিবিরকর্মীরা একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা ও সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।
সিলেট নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর দপ্তর) রেজাউল করিম জানান, শিবিরের হামলায় মহানগর গোয়েন্দা পরিদর্শক শরীফ মুহাম্মদ আশরাফুল আমিনসহ ১০ পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশ শর্টগানের ১৪টি গুলি, একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং শিবিরের ১২ কর্মী গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তিনি।
সিলেট মহানগর শিবিরের সভাপতি আনোয়ারুল ওয়াদুদ অভিযোগ করেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ হামলা করেছে। হামলায় শিবিরের ২০ কর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
গত মঙ্গলবার পুলিশ ও শিবিরকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।
চাঁদপুর : শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জামায়াত-শিবিরের হামলায় অন্তত পাঁচ পুলিশ আহত হয়েছেন। এর জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয় আরো ১৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে শর্টগানের ২০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ১০ কর্মীকে আটক করে।
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মাহবুব মোরশেদ কালের কণ্ঠকে জানান, হঠাৎ করে জামায়াত-শিবিবের কর্মীরা একত্রিত হয়ে ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শিবিরের আট কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত ও গতকাল অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানায় নগর পুলিশ।
আমাদের বরিশাল (গৌরনদী) প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে আগৈলঝাড়া থানার পুলিশ উপজেলার রত্মাপুর বাজার থেকে জামায়াত নেতা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আগৈলঝাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আক্কাছ আলী।

No comments

Powered by Blogger.