মালালা দিবস পালিত-তার দাবিই আজ বিশ্ববাসীর মুখে

শিক্ষার দাবিতে সোচ্চার হওয়ায় পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাইয়ের প্রতিবাদী কণ্ঠ গুলি করে চিরতরে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল চরমপন্থী তালেবানরা। তারা সফল হবে ভেবেছিল। কিন্তু ওই গুলি শুধু মালালার মাথায়ই লাগেনি, একই সঙ্গে বিদ্ধ করেছে বিশ্বের লাখো কোটি মানবিক হৃদয়।


সারা বিশ্বের মানুষ এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে আর তাদের প্রার্থনা এবং সুষ্ঠু চিকিৎসায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে সে। প্রতিবাদী মালালা সব কন্যাশিশুর শিক্ষার অধিকার দাবিতে অনলাইন ব্লগে পোস্ট লিখেছিল আর গুলিবিদ্ধ মালালা সবাইকে চারপাশে তাকাতে বাধ্য করেছে- যেখানে এখনো বাস করছে শিক্ষার অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা-বঞ্চিত কোটি কোটি মালালা। সেই মালালাদের অধিকার রক্ষায় গতকাল ১০ নভেম্বর জাতিসংঘের আহ্বানে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে 'মালালা দিবস'।
মালালার ওপরে তালেবান হামলার এক মাস পূর্তি হিসেবে এই দিনটি সারা বিশ্বের শিক্ষা বঞ্চিত ছয় কোটি ১০ লাখ কন্যাশিশুর অধিকার আদায়ের দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করা জাতিসংঘের বিশেষ দূত, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও এতে সমর্থন জানালে দিবসটি বিশ্বজুড়ে গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে।
তবে দিবসটি পালনে পাকিস্তান কেমন ভূমিকা রাখে, সেদিকেই ছিল সারা বিশ্বের নজর। গর্ডন ব্রাউনও এ দিন পাকিস্তানে এসে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করার পূর্ব ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী গত শুক্রবার পাকিস্তান সফরে এসে প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই দিন কন্যাশিশুদের স্কুলে পাঠানো ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবিতে ১০ লাখ পাকিস্তানি নাগরিকের স্বাক্ষরসংবলিত একটি দাবিনামা আসিফ আলী জারদারির হাতে তুলে দেন তিনি। জারদারির কাছে এ দাবিনামা পেশ করার সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেন, পাকিস্তানের জন্য যা সর্বোত্তম, মালালার 'স্বপ্ন' তারই প্রতিনিধিত্ব করছে। জবাবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জারদারি এবং নিজেও দাবিনামায় স্বাক্ষর করেন।
জারদারি বলেন, 'মালালা আমাদের কন্যা ও নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের দাবিকে জোরালো করে তুলেছে। তাকে আক্রমণকারীরা শুধু তাকেই হত্যার চেষ্টা করেনি, একই সঙ্গে পাকিস্তানকেও হত্যার চেষ্টা করেছে।'
এদিকে, মালালা দিবস উপলক্ষে প্রাথমিক স্কুলে যায় এমন ৩০ লাখ গরিব শিশুর সবাইকে প্রতি মাসে দুই মার্কিন ডলার সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা বৃত্তি হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। 'ওয়াসিলা-ই-তালিম' নামের প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে পাকিস্তান সরকারের 'বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম'-এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে ।
গতকাল দিবসটি উপলক্ষে পাকিস্তানে গর্ডন ব্রাউন বলেন, 'আমরা মালালা-আজ মালালা দিবস, এই বিশ্বে চলার পথে কন্যাশিশুদের মনোবল অটুট রাখতে দিবসটি নতুন করে পদচিহ্ন এঁকে দেবে এমন একজন স্কুল শিশুর মাধ্যমে যে তার সাহসিকতার মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। মালালা এমন একটি পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে যেখানে সে, তার বন্ধুরা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্কুলে যেতে পারবে, একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় লেখাপড়া শিখতে পারবে।'
এর আগে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে দিনটি উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন,' সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষ আজ মালালাসহ ছয় কোটি ১০ লাখ শিশুর পক্ষে, যারা এখনো স্কুলে যেতে পারছে না।' তিনি বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের পক্ষে ওই ভিডিও বার্তায় ঘোষণা করেন, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার সব শিশুকে দিতে হবে। এর মাধ্যমেই ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর ওপর বর্বরোচিত হামলার আমরা সমুচিত জবাব দেব।'
'মালালা দিবস' উপলক্ষে পাকিস্তানের স্কুলগুলোর সমবেত সভায় (অ্যাসেমবি্ল) বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। মালালা যে স্কুলে পড়ে, সেই খুশাল পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দিবসটি পালনের জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মালালার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে স্কুলে বিশেষ প্রার্থনার কথাও জানান তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মেঙ্েিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, সিয়েরা লিওনসহ সারা বিশ্বেই দিবসটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়।
দিবসটি পালন করতে গিয়ে মালালাকে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার দাবি সারা বিশ্বে ক্রমে জোরালো হয়ে উঠেছে। গতকালও প্রায় ৩০ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক মালালাকে এ পুরস্কারে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য তাদের সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায়। এ দাবিতে গণস্বাক্ষর করে তারা। এদিকে দিবসটি ঘোষণা করায় জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে মালালা ইউসুফজাই। গত শুক্রবার তার বাবার মাধ্যমে এক বার্তায় এ অনুভূতি প্রকাশ করে সে। সূত্র : এএফপি, দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, হাফিংটন পোস্ট, ডনডটকম।

No comments

Powered by Blogger.