বাউফলে দখল হিড়িক-দুর্বৃত্তের হানা থেকে পরিবেশ বাঁচান

জেলা, উপজেলা ও গ্রামের কত সরকারি ভূমি, স্থাপনা এবং খাল-বিল, নদী-নালার অংশ প্রতিনিয়ত দখল হয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব কি আমরা রাখি? সংবাদ মাধ্যম এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী, সামাজিক সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থা যখন এ ধরনের জবরদখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং আদালত যখন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন, তখন প্রশাসনের টনক নড়ে।


তারপরও এসব নিয়ে প্রশাসনের টালবাহানা কিন্তু সহজে যায় না। কোথাও কোথাও লাগাতার সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট ও সামাজিক আন্দোলনের চাপে এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি পড়লে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবেশ-প্রতিবেশবিরোধী দুর্বৃত্তসুলভ কর্মকাণ্ড সরকার পরম্পরায় চলতেই থাকে। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি ভূমি, ভবন ও খাল দখল করে প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক কয়েকটি নমুনা মাত্র। শনিবারের সমকালে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, দখলদাররা প্রায় সবাই টাকাওয়ালা অথবা সরকারি দলের নেতাকর্মী। প্রশাসনের নীরব সমর্থন বা কোথাও কোথাও সরব উপস্থিতি না থাকলে কি এ ধরনের দখলদারি সম্ভব! দখলদারদের কেউ কেউ সমকাল প্রতিবেদকের কাছে স্বীকারও করেছেন যে, যারা যে সময় সরকারে থাকে তাদের নেতাকর্মীরাই এ কাজটি করে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের তো অজানা নয় যে, এভাবে খাল-বিল, নদী-নালা দখল হয়ে গেলে আমরা সমূহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব। শুধু তাই নয়, এর ফলে গ্রামাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে বন্যা হয়ে যাবে, কোনো কোনো অঞ্চলে পানি নামার সুযোগ সংকুচিত হয়ে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেবে। আর শুষ্ক মৌসুমে মাঠ-ঘাট খরতাপে চৌচির হয়ে ফসল ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। তাই খাল-বিল, নদী-নালা রক্ষা ও দখল হয়ে যাওয়া স্থাপনাগুলো উদ্ধার করে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা জাতীয় কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। এ ব্যাপারে প্রশাসন তথা সরকারকে কেবল উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা জারি করলেই চলবে না, নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায়ও আনতে হবে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে 'জিরো-টলারেন্স' মনোভাব গ্রহণের জন্য বার্তা যেতে হবে উচ্চ পর্যায় থেকে। আর জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধ করার জন্য সরকারি ভূমি এবং স্থাপনা ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালীদের দখলমুক্ত করতে হবে। তাহলেই স্থানীয় টাকাওয়ালা বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এভাবে সরকার পরম্পরায় সরকারি সম্পত্তি দখল করার অপসংস্কৃতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.