চরাচর-মেসবাড়ি by এস কবীর
নগরজীবনের এক অতি পুরনো আর পরিচিত স্থান হচ্ছে মেস। নগরবাসীর এক বিশাল অংশ থাকে এই মেসে। ছোটখাটো চাকরি বা ব্যবসার টাকায় পুরো পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। সারা দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে এসে ঢুকতে হয় মুরগির খোপের মতো ঘরে। অসুখে-বিসুখে একটু সেবা পাওয়ারও যেখানে কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
ইট-কাঠের এই খুপরিগুলো ছড়িয়ে আছে ঢাকাজুড়ে। প্রতিদিন সকালে সবাই বেরিয়ে যান কর্মস্থলে, আর সন্ধ্যায় ফেরেন মেসে। কর্মস্থলের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে সাধারণত সবাই এর কাছাকাছিই মেস খোঁজেন। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার পাশে তাই বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য মেস।
তেমন একটা মেসের কথা শোনা গেল আবদুল মতিনের কাছ থেকে। ছোট একটা কারখানায় চাকরি করেন তিনি। বেতন পান ১০-১২ হাজার টাকা। জানালেন, অনেকের তুলনায় একেবারে খারাপ না বেতন; কিন্তু জিনিসপত্রের দাম, ঘরভাড়া এত বেড়েছে যে এতে সংসার চালানো দায়। তিনি তাঁর পরিবারকে তাই রেখেছেন গ্রামে। নিজে থাকেন ফকিরাপুলের করিমের মেসে। করিমের মেস ঢাকার কয়েকটা নামকরা মেসের একটা। পাশাপাশি ছয়টা ভবন নিয়ে এই মেস_কোনোটা পাঁচতলা, কোনোটা ছয়তলা। প্রতি তলায় দুটো করে ফ্ল্যাট। আর প্রতি ফ্ল্যাটে আছে তিনটি করে ঘর। সঙ্গে দুটো গোসলখানা আর রান্নাঘর। প্রতিটি ঘরের আকার এক সমান নয়। কোনোটার আট ফুট প্রস্থ আর পনেরো ফুটের মতো দৈর্ঘ্য। কোনোটা আবার একটু ছোট। বড় ঘরে চারটি বিছানা আর ছোট ঘরে তিনটি। প্রতি বিছানা কিন্তু একজনের জন্য নয়। দুজন করে থাকেন একেকটি তিন হাত চওড়া চৌকিতে।
আবদুল মতিন জানালেন, সেই তুলনায় করিমের মেস ভবন অনেক খারাপ। তাদের ফ্ল্যাটের বড় ঘরটিতে থাকেন তিনিসহ আরো সাতজন। শুধু এই ঘরের ভাড়া আট হাজার টাকা। অর্থাৎ একেকজনকে দিতে হয় এক হাজার টাকা। আর খাওয়া খরচ প্রতি মিল ২৭ থেকে ২৯ টাকা। সকালে হাফ মিল আর দুপুর ও রাতে ফুল মিল। সারা দিনে আড়াই মিল। সব মিলে প্রতিদিন খাওয়ার খরচ ৬৭ থেকে ৭৩ টাকার মতো। মানে মাসে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকার মতো। কী খাবার দেয় মেসে_জিজ্ঞেস করায় একটু চুপ করে থাকেন তিনি, 'কী আর খাওয়াইব এই টাকায়! সকালে ভাত, ডাল, ভাজি আর দুই বেলা ডাল, ভাজির সঙ্গে মাছ-তরকারি থাকে।' না জিজ্ঞেস করেও বোঝা যায় এই আক্রার বাজারে মাছের টুকরোর আকার কতটুকু হতে পারে। কোনো দিন কি ইচ্ছা করে না নিজের মতো কিছু খেতে? এবারও চুপ করে থেকে তারপর উত্তর দেন, 'মাঝেমধ্যে ছুটিতে বাড়ি যাই, তখন খাইয়া আসি শখের খাদ্য।'
এস কবীর
তেমন একটা মেসের কথা শোনা গেল আবদুল মতিনের কাছ থেকে। ছোট একটা কারখানায় চাকরি করেন তিনি। বেতন পান ১০-১২ হাজার টাকা। জানালেন, অনেকের তুলনায় একেবারে খারাপ না বেতন; কিন্তু জিনিসপত্রের দাম, ঘরভাড়া এত বেড়েছে যে এতে সংসার চালানো দায়। তিনি তাঁর পরিবারকে তাই রেখেছেন গ্রামে। নিজে থাকেন ফকিরাপুলের করিমের মেসে। করিমের মেস ঢাকার কয়েকটা নামকরা মেসের একটা। পাশাপাশি ছয়টা ভবন নিয়ে এই মেস_কোনোটা পাঁচতলা, কোনোটা ছয়তলা। প্রতি তলায় দুটো করে ফ্ল্যাট। আর প্রতি ফ্ল্যাটে আছে তিনটি করে ঘর। সঙ্গে দুটো গোসলখানা আর রান্নাঘর। প্রতিটি ঘরের আকার এক সমান নয়। কোনোটার আট ফুট প্রস্থ আর পনেরো ফুটের মতো দৈর্ঘ্য। কোনোটা আবার একটু ছোট। বড় ঘরে চারটি বিছানা আর ছোট ঘরে তিনটি। প্রতি বিছানা কিন্তু একজনের জন্য নয়। দুজন করে থাকেন একেকটি তিন হাত চওড়া চৌকিতে।
আবদুল মতিন জানালেন, সেই তুলনায় করিমের মেস ভবন অনেক খারাপ। তাদের ফ্ল্যাটের বড় ঘরটিতে থাকেন তিনিসহ আরো সাতজন। শুধু এই ঘরের ভাড়া আট হাজার টাকা। অর্থাৎ একেকজনকে দিতে হয় এক হাজার টাকা। আর খাওয়া খরচ প্রতি মিল ২৭ থেকে ২৯ টাকা। সকালে হাফ মিল আর দুপুর ও রাতে ফুল মিল। সারা দিনে আড়াই মিল। সব মিলে প্রতিদিন খাওয়ার খরচ ৬৭ থেকে ৭৩ টাকার মতো। মানে মাসে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকার মতো। কী খাবার দেয় মেসে_জিজ্ঞেস করায় একটু চুপ করে থাকেন তিনি, 'কী আর খাওয়াইব এই টাকায়! সকালে ভাত, ডাল, ভাজি আর দুই বেলা ডাল, ভাজির সঙ্গে মাছ-তরকারি থাকে।' না জিজ্ঞেস করেও বোঝা যায় এই আক্রার বাজারে মাছের টুকরোর আকার কতটুকু হতে পারে। কোনো দিন কি ইচ্ছা করে না নিজের মতো কিছু খেতে? এবারও চুপ করে থেকে তারপর উত্তর দেন, 'মাঝেমধ্যে ছুটিতে বাড়ি যাই, তখন খাইয়া আসি শখের খাদ্য।'
এস কবীর
No comments