রঙ্গব্যঙ্গ-গাদ্দাফির কাল্পনিক সাক্ষাৎকার by মোস্তফা কামাল

লিবিয়ার বিপ্লবী নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিদায়-ঘণ্টা বেজে গেছে। দেশে-বিদেশে তিনি বন্ধুহীন হয়ে পড়েছেন। এর পরও তাঁর হুঙ্কার থামেনি। কী আছে তাঁর হুঙ্কারের নেপথ্যে! এ পরিস্থিতিতে আমরা তাঁর একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকার (কাল্পনিক) এখানে উপস্থাপন করছি। রঙ্গব্যঙ্গ : দেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।


গাদ্দাফি : দেশের অবস্থা? ভালো, ভালো। দেশ পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রণে। কোনো সমস্যা নেই। তবে কিছু ইঁদুর-তেলাপোকার দল লাফালাফি, নাচানাচি করছে। আকাশ থেকে বোমা মেরে সব সাইজ করে দেব।
রঙ্গব্যঙ্গ : ইঁদুর-তেলাপোকা মানে!
গাদ্দাফি : মানে বুঝলেন না? তেলাপোকার পাখা গজায় কখন? মরিবার তরে। তাই না?
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনার দেশের জনগণকে আপনি ইঁদুর-তেলাপোকার সঙ্গে তুলনা করলেন আর তাদের ওপর আপনি বোমা মারবেন?
গাদ্দাফি : আরে রাখেন তো! ওরা মানুষ নাকি! ওরা দুর্বৃত্ত। ওদের মেরেকেটে শেষ করে দেব। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! সবই আমেরিকার চাল, বুঝলেন!
রঙ্গব্যঙ্গ : বুঝলাম। কিন্তু আপনার দেশের জনগণ হঠাৎ এত খেপে গেল কেন?
গাদ্দাফি : ওরা জনগণ নাকি! ওরা আমেরিকার দালাল। দেখি, দালালি করে কী করতে পারে! আমি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে যাব।
রঙ্গব্যঙ্গ : তাতে তো রক্তপাত হবে। দেশ ও দেশের জনগণের ক্ষতি হবে। আপনি কি তা চান?
গাদ্দাফি : এসব যদি আমি বরদাশত করি, তাহলে এই দেশ টিকবে? বিপ্লবের পর বিপ্লব হবে। দেশ আরো খারাপের দিকে যাবে। আমেরিকা তো এটাই চায়। মুসলিম দেশগুলোকে নিঃশেষ করে দিতে চায়।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি দমন-পীড়ন করে আন্দোলন দমন করতে পারবেন? সামরিক বাহিনীও তো আপনার বিরুদ্ধে চলে গেছে।
গাদ্দাফি : আপনার তথ্য সঠিক নয়। আমি সেনাবাহিনীর লোক। ১৯৬৯ সালে আমি ছিলাম কর্নেল। তখন আমার বয়স ছিল কত জানেন? আমার বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর। তখন আমি এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছি। সেই থেকে এখনো সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি তো প্রেসিডেন্ট নন। বিপ্লবী নেতা। তার পরও আপনার নিয়ন্ত্রণে সব!
গাদ্দাফি : মজাটা তো এখানেই। আমার কোনো পদ নেই। অথচ সব কিছু আমার কথায় চলে। আমার হুকুম ছাড়া কারো কিছু করার সাধ্য নেই।
রঙ্গব্যঙ্গ : ৪১ বছর ধরে আপনি ক্ষমতা দখল করে আছেন। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না!
গাদ্দাফি : আমাকে জনগণ চায়। আমি কী করব! দেশের জনগণ আমার বিকল্প কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি নিজেও তো একজন নেতা তৈরি করতে পারতেন। পারতেন না?
গাদ্দাফি : আপনার মাথা খারাপ হয়েছে! নেতা তৈরি করতে গেলেই তো ষড়যন্ত্র করবে। আমাকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করবে। জেনেশুনে এমন কাজ পাগলেও তো করবে না।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি কেন প্রেসিডেন্ট পদ নিলেন না?
গাদ্দাফি : আমি হলাম লিবিয়ার জাতীয় নেতা। পথপ্রদর্শক। নির্দেশক। বলতে পারেন ত্রাণকর্তা। এখানে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন পুতুল। আমি যা বলি, তার বাইরে তারা কিছুই করতে পারে না। সেই এখতিয়ারই নেই। এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়!
রঙ্গব্যঙ্গ : হঠাৎ খবর রটল, আপনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আসলে আপনি কোথায়?
গাদ্দাফি : কেন, আপনি আমার ল্যান্ড নম্বরে ফোন করেননি?
রঙ্গব্যঙ্গ : জি না। আপনার রোমিং মোবাইলে।
গাদ্দাফি : তাই নাকি! সরি সরি। আমি ভাবছিলাম, আমি আমার ল্যান্ড নম্বরে কথা বলছি। আমি দেশেই আছি। দেশ ছেড়ে কোথায় যাব! আমি মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের মতো কাপুরুষ নাকি! আমি বিপ্লবী নেতা। বিপ্লবীরা কখনো পালায় না। প্রয়োজনে জীবন দেব, তবুও কোথাও পালাব না।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও আপনাকে বিদায় করতে মনে হয় জনগণকে অনেক রক্ত ঝরাতে হবে!
গাদ্দাফি : ওরা জনগণ নাকি! জনগণ তো আমার সঙ্গে। ওরা ষড়যন্ত্রকারী। চিন্তা করবেন না। ওদের ষড়যন্ত্র ঠিকই রুখে দেব।
রঙ্গব্যঙ্গ : এ বয়সে আর কত! দেশের জনগণকে কষ্ট না দিয়ে এবার ক্ষমতা ছেড়ে দিন না!
গাদ্দাফি : কী বলেন! আমি ক্ষমতা ছাড়লে জনগণ বিপদে পড়বে। এ দেশের সর্বজন-স্বীকৃত নেতা আমি। জনগণকে বিপদে ফেলে নেতা পালাতে পারে না।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনার কিছু লোক বিদেশিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বিদেশিরা কী অন্যায় করল?
গাদ্দাফি : ডাহা মিথ্যা কথা। বিদেশিদের ওপর হামলা চালাবে কেন? এসব পশ্চিমা মিডিয়ার অপপ্রচার, বুঝলেন!
রঙ্গব্যঙ্গ : আমি তো দেখছি, পশ্চিমা মিডিয়া সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তার মধ্যে ষড়যন্ত্রের কোনো গন্ধ তো পাচ্ছি না।
গাদ্দাফি : গন্ধ পাচ্ছেন না মানে! ও বুঝেছি, আপনি মনে হয় ওদের এজেন্ট! ফোন রাখেন! আমি আর কথা বলব না। আপনি লোকটা সুবিধার না। তারপর গাদ্দাফি ফোন লাইনটি কেটে দিলেন।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.