হামলার পরপরই কেন প্রশাসন আসেনি? by একরামুল হক ও আবদুল কুদ্দুস
বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া রামুর ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগ ও সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাত নয়টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত এতগুলো মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে।
কেন প্রশাসন নীরব ছিল? কেন পুলিশ আসেনি? র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবি কেন আসেনি? তারা তো ২০০ থেকে ৪০০ গজের মধ্যে ছিল। আসলে, তাদের আসতে দেওয়া হয়নি। পূর্বপরিকল্পিতভাবে এসব মন্দিরে হামলা করা হয়েছে।’
দলীয় সূত্র জানায়, আট বছর পর খালেদা জিয়া কক্সবাজারে এসেছেন। রামুর সম্প্রীতি সভায় জনমানুষের ঢল নামে। সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার লোকজন সমাবেশে যোগ দেন। দুপুরের দিকে খিজারি স্কুলের হলরুমের ছাদ ধসে অন্তত ৪০ জন উত্সুক শিশু-কিশোর আহত হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
সম্প্রীতি সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ায় যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে, তা স্বচক্ষে দেখার জন্য আমি আজ এখানে এসেছি। এই ঘটনা তদন্তের জন্য আমি আমার দল থেকে নয় সদস্যের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি প্রতিটি জায়গায় গিয়েছে। প্রতিটি মন্দির পরিদর্শন করেছে। তারপর তারা প্রতিবেদন দিয়েছে। কাজেই আমরা তাত্ক্ষণিকভাবে সেই ব্যবস্থাটা করেছি, যাতে এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘যেই সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকারের কাছে সাধারণ মানুষও নিরাপদ নয়। এরা কেবল লুটপাট করতে জানে। ঘটনার দিনও এরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে মূল্যবান সম্পদ লুট করেছিল।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সরকার এখানে এসে মায়াকান্না দেখিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনাদের মন্দির নির্মাণ করে দেয়নি। আমরাও যাতে এখানে আসতে না পারি, এ জন্য ফেনী থেকে বের হওয়ার পর ককটেল ফাটানো হয়েছে; এখানে যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেগুলো যেন দেখতে না পারি।’
বৌদ্ধসম্প্রদায়কে নির্লোভ, দৃঢ় ও শান্ত প্রকৃতি মানুষ অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ সম্প্রদায়ের ওপর এবার হামলা হয়েছে। এর জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসম্প্রদায় নিরাপদ থাকে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ঘটনার বিচার হবে না। কিছু হলেই বা দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই বলবে, বিরোধী দল দায়ী। এই যে কাজল, (স্থানীয় সাংসদ লুত্ফর রহমান কাজল) সে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে আপনাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে কাজল নাকি জড়িত। আসলে, মিথ্যা কথা বলা আওয়ামী লীগের অভ্যাস। এরা কখনো সত্য কথা বলতে চায় না। এ দেশকে শান্তির দিকে, উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারেনি। দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে গেছে।’
অন্যরা যা বলেন: রামুর রামকূট বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষু প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো বলেন, রামু ও উখিয়ায় যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রী সহানুভূতি দেখাতে রামুতে ছুটে এসেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে অর্থসহায়তা দিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুদের মনের আতঙ্ক দূর হয়নি। খালেদা জিয়া কথা দিলে কথা রাখেন। আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তিনি রামুতে এসেছেন। সাংসদ কাজলের তত্পরতায় আমাদের হাজার বছরের রামকূট বৌদ্ধমন্দির রক্ষা পেয়েছে।
বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির তদন্ত দল ৬৭ জন ভিক্ষুর সাক্ষ্য নেয়। তাঁরা বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, মির্জা আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকমল বড়ুয়া, চকরিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ হাসিনা আহমদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন রামু উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদুল হক চৌধুরী।
এর আগে আজ বেলা দেড়টায় চকরিয়া পৌরসভা বাস টার্মিনাল মাঠে জনসভায় খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। স্থানীয় সাংসদ হাসিনা আহমদের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ বক্তৃতা করেন। কাল রোববার সকাল ১১টায় কক্সবাজার থেকে উখিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার ও মন্দির পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে উখিয়া স্কুল মাঠে তিনি দলীয় সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
No comments