সিপিসির কংগ্রেস- চীন কি বদলাবে?
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস নতুন একগুচ্ছ নেতৃত্বকে সামনে এনেছে, যাঁরা আগামী দশকে দলটির দিকনির্দেশনা দেবেন। দুই হাজার ২০০-রও বেশি প্রতিনিধি বেইজিংয়ের গ্রেট হলে সমবেত হয়ে সপ্তাহব্যাপী অধিবেশন শুরু করেছেন গত বৃহস্পতিবার। এই অধিবেশন থেকে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পার্টির নতুন সাধারণ সম্পাদক করা হবে।
খুবই সতর্কতা এবং ভয় নিয়ে এই কংগ্রেস ক্ষমতা হস্তান্তর করছে। প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এবং দলের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা নবীনদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়াও শুরু করেছেন। কংগ্রেসে দেওয়া উদ্বোধনী ভাষণে হু বলেছেন, ‘আমরা যদি দুর্নীতির বিষয়টি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে না পারি, তাহলে এটা দলের জন্য মারাত্মক হবে এবং এমনকি এর কারণে দলের পতন এবং রাষ্ট্রের পতনও ঘটতে পারে।’ রাজনৈতিক সংস্কার বিষয়েও তিনি তাঁর অবস্থান জানিয়েছেন যে, ‘রাজনৈতিক কাঠামোর সংস্কার হলো চীনের সার্বিক সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের অবশ্যই সক্রিয় ও সতর্কভাবে রাজনৈতিক কাঠামোর সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে হবে এবং জনগণের গণতন্ত্রকে আরও বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ এবং অনুশীলনে সুচারু করতে হবে।’
জিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্যাট্রিক শোভানেক বলেছেন, চীনে বড় আকারের সংস্কার বিষয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে। ‘যখনই আমরা রাজনৈতিক সংস্কারের কথা শুনি, তখনই আমাদের মনে আসে নির্বাচন ও স্বাধীন বিচার বিভাগের কথা। কিন্তু চীনা নেতৃত্ব মনে হয় না এসবের কথা বলছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো সংস্কার বলতে তাঁরা বুঝিয়েছেন সরকারি ক্ষমতায় একজনের বদলে দুজন পার্টি সদস্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা। আমার মনে হয় না, আমরা কোনো বড় পরিবর্তন দেখতে যাচ্ছি। তার পরও হয়তো কিছু পরিবর্তন হবে। কারণ, চীনের উদীয়মান মধ্যবিত্ত তাদের জীবনের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় নিজেদের আরও বেশি অংশগ্রহণ দেখতে চায়।’
প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতি ও দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির বিষয়েও জোর দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হু যতটা বিস্তৃতভাবে সম্ভব শিক্ষার সুযোগ ছড়িয়ে দেওয়ার দিকে নজর টেনেছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষাই হলো সেই ইঞ্জিন, যা চীনের উন্নতিকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে নিতে পারে। চীনের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতির নজির টেনে তিনি বলেছেন, গত ১০ বছরের শাসনব্যবস্থায় চীন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপুল উন্নতি করেছে। এ রকম উন্নতি ১৮ শতকে ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবের পর আর কোথাও দেখা যায়নি।
হু এবারই দায়িত্বভার দিয়ে যাবেন তাঁর উত্তরসূরি ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ওপর। শি তারপর আগামী মার্চের সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের দায়ভার গ্রহণ করবেন। ২০০৮ সাল থেকে শি প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের পরের অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তরুণ নেতৃত্বের মধ্য থেকে তিনিই হচ্ছেন চীনের শীর্ষনেতা।
এই কংগ্রেসের আগে থেকেই পার্টির ভেতরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল। দুর্নীতি দমন করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা দাবি তুলে যাচ্ছেন। ২০০৯ সাল থেকে চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কিছুটা শ্লথ হয়ে থাকাই এই অবস্থার কারণ।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যসংখ্যা আট কোটি দুই লাখ। এঁদের থেকে দুই হাজার ২৬৮ জন প্রতিনিধি নিয়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই কংগ্রেস। অজস্র প্রতিনিধি থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল। চীনের প্রতি ১০ জনের আটজনই রাজনৈতিক সংস্কার চান। জরিপের এ খবরটি প্রকাশ করেছে চীনের সরকারি সংবাদপত্র পিপলস ডেইলি। এর সঙ্গে যুক্ত আছে গ্লোবাল টাইমস। এই জরিপটি প্রকাশের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তারা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে, জনগণের ডাকে সাড়া দিতে তারা রাজি।
পার্টির নেতারা মুখের কথায় বারবার সংস্কারের কথা বলে গেলেও কার্যত দেশটির ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ শক্তই রয়েছে। চীনা ক্ষমতার গণতন্ত্রায়ণ এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন তাঁদের কার্যসূচিতে একেবারেই নেই।
কংগ্রেসের প্রস্তুতির পুরোটা সময় চীনের আলোচিত বিষয় ছিল সাবেক জ্যেষ্ঠ নেতা বো জিলাইকে ঘিরে বিতর্ক। বো ছিলেন কেন্দ্রীয় শহর চোংকিংয়ের পার্টিপ্রধান। একসময় তাঁকে পার্টির শীর্ষ পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে ভাবা হতো। কিন্তু এ বছরের শুরুতে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি খুনের অভিযোগ ওঠায় তাঁর সেই সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যায়। তিনি দল থেকে বহিষ্কৃতও হন। এ অবস্থায় শি জিনপিংই হয়ে ওঠেন পার্টির অনিবার্য শীর্ষনেতা। আশা করা হচ্ছে, তিনি বিশ্বে এবং স্বদেশে চীনের ভাবমূর্তির বদল ঘটাবেন।
ইন্টার প্রেস সার্ভিস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত-ইন্টার প্রেস সার্ভিস
জিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্যাট্রিক শোভানেক বলেছেন, চীনে বড় আকারের সংস্কার বিষয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে। ‘যখনই আমরা রাজনৈতিক সংস্কারের কথা শুনি, তখনই আমাদের মনে আসে নির্বাচন ও স্বাধীন বিচার বিভাগের কথা। কিন্তু চীনা নেতৃত্ব মনে হয় না এসবের কথা বলছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো সংস্কার বলতে তাঁরা বুঝিয়েছেন সরকারি ক্ষমতায় একজনের বদলে দুজন পার্টি সদস্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা। আমার মনে হয় না, আমরা কোনো বড় পরিবর্তন দেখতে যাচ্ছি। তার পরও হয়তো কিছু পরিবর্তন হবে। কারণ, চীনের উদীয়মান মধ্যবিত্ত তাদের জীবনের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় নিজেদের আরও বেশি অংশগ্রহণ দেখতে চায়।’
প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতি ও দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির বিষয়েও জোর দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হু যতটা বিস্তৃতভাবে সম্ভব শিক্ষার সুযোগ ছড়িয়ে দেওয়ার দিকে নজর টেনেছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষাই হলো সেই ইঞ্জিন, যা চীনের উন্নতিকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে নিতে পারে। চীনের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতির নজির টেনে তিনি বলেছেন, গত ১০ বছরের শাসনব্যবস্থায় চীন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপুল উন্নতি করেছে। এ রকম উন্নতি ১৮ শতকে ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবের পর আর কোথাও দেখা যায়নি।
হু এবারই দায়িত্বভার দিয়ে যাবেন তাঁর উত্তরসূরি ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ওপর। শি তারপর আগামী মার্চের সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের দায়ভার গ্রহণ করবেন। ২০০৮ সাল থেকে শি প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের পরের অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তরুণ নেতৃত্বের মধ্য থেকে তিনিই হচ্ছেন চীনের শীর্ষনেতা।
এই কংগ্রেসের আগে থেকেই পার্টির ভেতরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল। দুর্নীতি দমন করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা দাবি তুলে যাচ্ছেন। ২০০৯ সাল থেকে চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কিছুটা শ্লথ হয়ে থাকাই এই অবস্থার কারণ।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যসংখ্যা আট কোটি দুই লাখ। এঁদের থেকে দুই হাজার ২৬৮ জন প্রতিনিধি নিয়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই কংগ্রেস। অজস্র প্রতিনিধি থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল। চীনের প্রতি ১০ জনের আটজনই রাজনৈতিক সংস্কার চান। জরিপের এ খবরটি প্রকাশ করেছে চীনের সরকারি সংবাদপত্র পিপলস ডেইলি। এর সঙ্গে যুক্ত আছে গ্লোবাল টাইমস। এই জরিপটি প্রকাশের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তারা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে, জনগণের ডাকে সাড়া দিতে তারা রাজি।
পার্টির নেতারা মুখের কথায় বারবার সংস্কারের কথা বলে গেলেও কার্যত দেশটির ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ শক্তই রয়েছে। চীনা ক্ষমতার গণতন্ত্রায়ণ এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন তাঁদের কার্যসূচিতে একেবারেই নেই।
কংগ্রেসের প্রস্তুতির পুরোটা সময় চীনের আলোচিত বিষয় ছিল সাবেক জ্যেষ্ঠ নেতা বো জিলাইকে ঘিরে বিতর্ক। বো ছিলেন কেন্দ্রীয় শহর চোংকিংয়ের পার্টিপ্রধান। একসময় তাঁকে পার্টির শীর্ষ পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে ভাবা হতো। কিন্তু এ বছরের শুরুতে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি খুনের অভিযোগ ওঠায় তাঁর সেই সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যায়। তিনি দল থেকে বহিষ্কৃতও হন। এ অবস্থায় শি জিনপিংই হয়ে ওঠেন পার্টির অনিবার্য শীর্ষনেতা। আশা করা হচ্ছে, তিনি বিশ্বে এবং স্বদেশে চীনের ভাবমূর্তির বদল ঘটাবেন।
ইন্টার প্রেস সার্ভিস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত-ইন্টার প্রেস সার্ভিস
No comments